ঢাবিতে গণহত্যার স্থানগুলো ঘুরে দেখলেন ১৯ দেশের সেনা কর্মকর্তারা

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২২ । ১৯:৪২ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২২ । ১৯:৪২

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ছবি: সমকাল

১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত গণহত্যার ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনাগুলো নিয়ে গঠিত ‘চলমান জাদুঘর’ ঘুরে দেখলেন ১৯ দেশের সেনাবাহিনীর অন্তত ৩০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। 

শুক্রবার  বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সিনিয়র ডিরেকটিং স্টাফ রিয়ার অ্যাডমিরাল এম ময়েনুল হকের নেতৃত্বে এসব কর্মকর্তারা গণহত্যার স্থানগুলো ঘুরে দেখেন।

সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ১৯৭১ সালের ২ মার্চ প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের স্থান থেকে তাদের যাত্রা শুরু হয়। এর পর একাত্তরের শহীদ ১৯৫ জন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মচারীর তালিকা সংবলিত স্মৃতি চিরন্তন, বিট্রিশ কাউন্সিল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসভাস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ডাকসু সংগ্রহশালা পরিদর্শন করেন। এর পর তারা মধুর ক্যান্টিনে কিছু সময় কাটান। 

অতিথিদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ঘটনা ও স্থান সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।

সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘চলমান জাদুঘর’ পরিদর্শন শেষে অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রথম টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা গণহত্যার এপিসেন্টার বলতে পারি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে ১৯৫ জন ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্ত। গণহত্যার এসব স্থান ও স্থাপনাগুলো আসলে জীবন্ত জাদুঘর, এগুলোকে আমরা চলমান জাদুঘর নাম দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের উদ্যোগে আমরা এসব ঐতিহাসিক স্থানে পায়ে হেঁটে তরুণ শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে শুনিয়ে থাকি।  সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জানতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন যে, একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ঘটেছিল, কী ধরনের গণহত্যা পরিচালিত হয়েছিল। আজ ১৯ দেশের সেনাবাহিনীর প্রায় ৩০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেছেন।  মুক্তিযুদ্ধের  একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও যোদ্ধা হিসেবে আমি তাদের একাত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তুলে ধরেছি।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জিএম আরিফুজ্জামান বলেন,  ১৯৭১ সালে  যে গণহত্যা হয়েছিল, সেটি ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছিল। আমরা আজ যে জায়গাগুলো ঘুরে দেখলাম, প্রত্যেকটি জায়গায় ১৯৭১ সালে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আমাদের সেন্টারের যে ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে, সেখানে ওয়াকিং মিউজিয়াম নামে এই কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেওয়ার পর প্রথম বর্ষসহ বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্মসূচি  চালু করা হয়। ক্রমান্বয়ে এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়কেও আমরা ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছি, যাতে আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যা সুপ্রতিষ্ঠা পায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় গণহত্যার ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে ২০১৮ সাল থেকে ‘চলমান জাদুঘর’ কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ। এর আগে ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন ও তার স্ত্রী টেরিজা আলবর,মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, জাতিসংঘ মিশন প্রধান মিয়া সেপো, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান জয়েন্দু ডি এই চলমান জাদুঘর ঘুরে দেখেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com