হ্যাটট্রিক জয়ের মিছিলে এক ডজন কাউন্সিলর

নাসিক নির্বাচন

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২২ । ০১:৫২ | প্রিন্ট সংস্করণ

এমএ খান মিঠু, নারায়ণগঞ্জ

ফাইল ফটো

সেলিনা হায়াৎ আইভী শুধু নন, হ্যাটট্রিক জয়ের মিছিলে স্লোগান তুলেছেন আরও এক ডজন কাউন্সিলর। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ৯ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে রয়েছেন তিন নারী কাউন্সিলর।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে টানা তিনবার জয় পাওয়া আইভী সব মিলিয়ে এই নগরের টানা চারবারের জনপ্রতিনিধি। এর আগে বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় আট বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সাধারণ ওয়ার্ডে টানা তিনবার নির্বাচিতদের মধ্যে চারজন বিএনপির, তিনজন আওয়ামী লীগের, একজন জাতীয় পার্টির এবং একজন বাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত তিনজনের মধ্যে দু'জন আওয়ামী লীগ ও একজন জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন।

সাধারণ ওয়ার্ডে 'হ্যাটট্রিকম্যান' ৯ কাউন্সিলরের মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের শওকত হাশেম ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ আইভীর সঙ্গে টানা চারবার করে এই নগরের জনপ্রতিনিধি। শওকত ও খোরশেদ বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকেই আইভীর সঙ্গে নিজ নিজ ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

সাধারণ ওয়ার্ড থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত অন্য সাত কাউন্সিলর হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাহজালাল বাদল, ৮ নম্বরে রুহুল আমীন, ৯ নম্বরে ইস্রাফিল প্রধান, ১৫ নম্বরে অসিত বরণ বিশ্বাস, ২২ নম্বরে সুলতান আহমেদ, ২৪ নম্বরে আফজাল হোসেন এবং ২৫ নম্বরে এনায়েত হোসেন। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড থেকে টানা তিনবার বিজয়ী তিন কাউন্সিলর হলেন- সংরক্ষিত ১ নম্বর (১, ২ ও ৩) ওয়ার্ডে মাকসুদা মোজাফ্‌ফর, সংরক্ষিত ৪ নম্বর (১০, ১১ ও ১২) নম্বর ওয়ার্ডে মিনুয়ারা বেগম এবং সংরক্ষিত ৫ নম্বর (১৩, ১৪ ও ১৫) ওয়ার্ডে শারমিন হাবিব বিন্নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা তিনবার নির্বাচিত এসব কাউন্সিলর এলাকায় দারুণ জনপ্রিয়। তারা যে দলের রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত থাকুন না কেন, এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তাদের রয়েছে সমান গ্রহণযোগ্যতা।

করোনার শুরুর পর আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া লাশ যখন দাফনে কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ মৃত্যুর ভয়কে তুচ্ছ করে দাফন ও দাহ করার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী খোরশেদ একটি দল গঠন করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর টেলিমেডিসিন, নিজ এলাকার অসহায়দের বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, মধ্যবিত্তদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে খাবার পরিবেশন করে নিজ ওয়ার্ডে সুনাম কুড়ান। খোরশেদের দেখানো পথে হাঁটেন পাশের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাশেম। তিনিও একই ধরনের কাজ করেন। যে কারণে এ দুই কাউন্সিলর বাববার জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে শওকত হাশেম ৭ হাজার ২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাঈম হোসেন পান দুই হাজার ৯৫৯ ভোট।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী যুবলীগ নেতা শাহ ফয়েজ উল্লাহ পান মাত্র এক হাজার ৫২ ভোট।

৩ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজালাল বাদল টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ছয় হাজার ৩২০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তোফায়েল হোসেন পেয়েছেন দুই হাজার ৬০১ ভোট। শাহজালাল বাদল সাত খুন মামলার প্রধান ও ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা হলেও এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। এর ফলে চাচা নূর হোসেনের নেগেটিভ ইমেজ তাকে ছুঁতে পারেনি।

৮ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা রুহুল আমিনও বেশ জনপ্রিয়। এবার তিনি সাত হাজার ৭১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহসিন ভূঁইয়া পান চার হাজার ৫১৮ ভোট।

৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইসরাফিল প্রধান পাঁচ হাজার ৩০৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিল্লাল হোসেন পান চার হাজার ২৮০ ভোট।

১৫ নম্বরে তৃতীয়বার জয় পেয়েছেন বাসদের অসিত বরণ বিশ্বাস। এই ওয়ার্ডে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস বেশি। বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংক তার জয়কে সহজ করে দিয়েছে বারবার। এবার চার হাজার ৩৮২ ভোট পেয়ে জয়ী হন অসিত। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মাকসুদ হোসেন রকি পান দুই হাজার ৯০৯ ভোট।

২২ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতান আহমেদ পাঁচ হাজার ৪৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পাঁচ হাজার ২০২ ভোট পেয়ে অল্পের জন্য হেরে যান ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ খান।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভদ্র হিসেবে পরিচিত আফজাল হোসেন। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত আফজাল এবার তৃতীয়বারের মতো জয় পান দুই হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম খোকন পেয়েছেন দুই হাজার ৬৯০ ভোট।

২৫ নম্বরে তৃতীয়বার জয় পাওয়া এনায়েত হোসেন পেয়েছেন তিন হাজার ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাইদুর রহমান পেয়েছেন দুই হাজার ২৪১ ভোট।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের তিনজনের হ্যাটট্রিক :সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে (১, ২ ও ৩) টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন মাকসুদা মোজাফ্‌ফর। তিনি ২৪ হাজার ৫৬১ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আসুরা বেগম পেয়েছেন চার হাজার ৮৭৯ ভোট। মাকসুদা মোজাফ্‌ফর সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত।

সংরক্ষিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডে (১০, ১১ ও ১২) বরাবরের মতো নির্বাচিত হয়েছেন নিভৃতচারী মিনুয়ারা বেগম। তিনি এবার ১৫ হাজার ৪৭ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মৌসুমী ভূঁইয়া পেয়েছেন ১২ হাজার ৭৬৮ ভোট।

সংরক্ষিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (১৩, ১৪ ও ১৫) জয় পেয়েছেন শারমিন হাবিব বিন্নি। তিনি ২০ হাজার ৪১২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গণসংহতি আন্দোলনের পপি রানী সরকার পেয়েছেন ১৮ হাজার ৮৫০ ভোট।

বিন্নির বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর ইসলাম। তার চাচা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। তবে বিন্নি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত।





© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com