অপ্রয়োজনীয় আদেশে ক্ষোভ প্রকৌশলীদের

রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় মানববন্ধন সমাবেশ

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২২ । ০২:০৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

বিশেষ প্রতিনিধি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর আইইবি সদর দপ্তরের সামনে প্রকৌশলীদের মানববন্ধন সমকাল

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রকল্পের মূল্যায়নে জেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন, তাদের কাজের ও প্রকল্পের মূল্যায়নে একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নতুন করে একজন নন-টেকনিক্যাল ব্যক্তিকে মূল্যায়নের দায়িত্ব দিলে তা সঠিক না হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এতে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হবে। প্রকৌশলীদের মধ্যেও কাজের স্পৃহা হ্রাস পাবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশ একেবারেই বাস্তবতাবিবর্জিত। এমনটা হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরও বাড়বে। এতে কাজের মানেরও অবনতি হতে পারে। অবিলম্বে এই আদেশ প্রত্যাহার করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব ও সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক ফারুক আহমেদ সমকালকে বলেন, এডিপি প্রকল্পের মূল্যায়ন একটি বিশেষায়িত ব্যাপার। সেটা যে কাউকে দিয়ে সম্ভব নয়। একজন জেলা প্রশাসক সার্বিকভাবেই জেলার সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। জেলা প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তিনি উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করতে পারেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মতামতও দিতে পারেন। কিন্তু এডিপির মূল্যায়ন একটি কারিগরি বিষয়। এ কারণে অতীতে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জেলায় আইএমইডির (বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) একটি শাখা খোলার কথা বলেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের যেমন শাখা থাকে না, তেমনি আইএমইডিরও শাখা দেওয়া আইনে নেই। এ জন্যই সেটা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) একজন নেতা সমকালকে বলেন, একজন ইতিহাস বা সাইকোলজি বা এমন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পান। তারা প্রকৌশলীর কাজের মূল্যায়ন করবেন কীভাবে? এটা একেবারেই অবাস্তব উদ্যোগ। আসলে তারা মনে করেন, ইঞ্জিনিয়াররা কমিশন খান, ফলে তাদেরও দিতে হবে। এ জন্যই এমন আদেশ জারি করা হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, 'সম্প্রতি জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের জেলার সব কাজ তদারকির কথা বলেছিলেন। তিনি কোন প্রেক্ষাপটে এটা বলেছেন তা বলতে পারব না। তবে ডিসিরা তো এমনিতেই জেলার সার্বিক বিষয় তদারক করেন। নতুনভাবে অফিস আদেশের কেন প্রয়োজন হলো তা বুঝতে পারছি না। ২০-৩০ বছর আগে আমরা যখন ডিসি ছিলাম, তখনও আমরা উন্নয়ন কাজের তদারকি করেছি। তার জন্য কোনো অফিস আদেশের প্রয়োজন হয়নি। আবার প্রকল্পের ধরনও আছে। সব কাজ ডিসিরাও বুঝবে না। আবার ইঞ্জিনিয়াররাও বুঝবেন না। যেমন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পারমাণবিক বিষয় বুঝবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কেন এসব কথা ডিসি সম্মেলনে বললেন সেটাও বুঝতে পারছি না।'

গত ১৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়, 'সচিব, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এডিপিভুক্ত প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করতে অনুরোধ করেছেন। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান জনবল নিয়েই প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে জেলা প্রশাসক একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব প্রদান করবেন এবং তার তত্ত্বাবধানে সিনিয়র সহকারী কমিশনার/সহকারী কমিশনারকে দায়িত্ব প্রদানপূর্বক একটি শাখার কার্যক্রম শুরু করবেন। জেলা প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) একটি পদ রয়েছে। প্রকল্প তদারকি ও সমন্বয়নের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে জেলা প্রশাসকরা এ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করবেন এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে প্রতিবেদন প্রেরণ নিশ্চিত করবেন।'

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই অফিস আদেশ জারির পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রকৌশলীরা। এ নিয়ে প্রকৌশলী পেশাজীবীদের সংগঠনগুলো বিভিন্ন সভা-সেমিনারও করেছে।

আদেশ বাতিলের দাবিতে সারাদেশে প্রকৌশলীদের মানববন্ধন-সমাবেশ : গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে প্রকৌশলীদের সংগঠন ও প্রকৌশলীরা। ঢাকায় প্রকৌশলীরা শাহবাগ মোড় থেকে আইইবি, মৎস্য ভবন, গণপূর্ত হয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত সড়কে মৌনভাবে মানববন্ধন করেন। শত শত প্রকৌশলী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিভিন্ন সংস্থা-দপ্তরের প্রকৌশলীদের সংগঠন এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে। পরে আইইবির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ওই আদেশের ফলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিলম্বিত হবে। প্রকৌশল দপ্তরের প্রকল্পগুলো মাঠ পর্যায়ে সাধারণত নির্বাহী প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলীরা এসব কাজ সরাসরি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করে থাকেন। প্রধান প্রকৌশলী বা সংস্থা প্রধানের দপ্তরের প্রকল্পগুলো মনিটরিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট সেল রয়েছে যেখান থেকে সারাদেশের প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন হয়ে থাকে। এ ছাড়া সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম সরেজমিন সাইট ভিজিট করে। সংশ্নিষ্ট সচিব মাসিক এডিপি রিভিউ সভা ও মাসিক সমন্বয় সভার মাধ্যমে প্রকল্পের নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করে থাকেন। তদুপরি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও ইভালুয়েশন বিভাগ নিয়মিত প্রকল্পগুলোর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করে থাকে। এরপর এ ধরনের অফিস আদেশ অনাকাঙ্ক্ষিত। অবিলম্বে এই আদেশ বাতিল করতে হবে।

এ ছাড়া একই দাবিতে দিনাজপুর, মাগুরা, জামালপুর, জয়পুরহাট, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুর, বাগেরহাট, রংপুর, নওগাঁ, নরসিংদী, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকৌশলীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এসব কর্মসূচিতেও অবিলম্বে ওই অফিস আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়।







© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com