
ভেজাল গুড়ে 'গুড়ে বালি'
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২২ । ০১:৪৫ | প্রিন্ট সংস্করণ
জসিম উদ্দিন বাদল, ঢাকা ও সৌরভ হাবিব, রাজশাহী

'চকচক করলেই সোনা হয় না'। প্রচলিত বাংলা প্রবাদটি বাজারে থরে থরে সাজানো চকচকে খেজুর গুড়ের ক্ষেত্রে পুরোপুরি খাটে। ভেজালের ভিড়ে আসল খেজুর গুড় খুঁজে বের করা এখন অনেকটাই দুর্ভেদ্য। চকচকে যে পাটালি আর ঝোলা গুড় বাজারে দেখা যায়, সেগুলোর বেশিরভাগই ভেজালে ঠাসা। কথিত ওই খেজুর গুড়ে মেশানো হয় চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকিরি, গো-খাদ্য, আটা-ময়দা ও পাথুরে চুন। ফলে গুড় কিনতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঠকছেন ভোক্তারা। শুধু তাই নয়, এই ভেজাল গুড় খেয়ে নানা জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে গুড়ে এসব ক্ষতিকর উপাদান মেশানো হয়। ভেজাল রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের হুমকিতে পড়বে জনস্বাস্থ্য। তবে আইনি জটিলতা থাকায় সতর্ক করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা খেজুর গুড়ের কেজি সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। এর মধ্যে প্রতি কেজি খেজুরের পাটালি ১০০ থেকে ২৫০ এবং ঝোলা (তরল) গুড়ের কেজি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। ভেজাল আর খাঁটি গুড়ের কারণে পণ্যটির দামে এই বিশাল ফারাক দেখা যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ভেজালের সাত-সতেরো :খুচরা ব্যবসায়ী ও নিরাপদ খাদ্য সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত গুড়ের রং গাঢ় বাদামি হয়। চিনি মেশানো গুড় দেখতে খুব চকচকে হয়। আর হলদেটে রঙের গুড় হলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত রাসায়নিক মেশানো হয়েছে। আবার কখনও নিম্নমানের ঝোলা ও নরম গুড় গলিয়ে তাতে রং, সোডা, গো-খাদ্য, আটা-ময়দা, পাথুরে চুন দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। গুড়ের রং সাদা ও শক্ত করতে মেশানো হয় চিনি। এসব গুড়ে স্বাদ ও গন্ধ থাকে কম।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গুড়ের চেয়ে তুলনামূলক চিনির দাম কম। তাই খেজুর গুড়ে চিনি মেশানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, রাজশাহীতে যারা গুড় তৈরি করেন, প্রতিবছর তাদের কাছ থেকে কিনে এনে ঢাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করেন তিনি।
সেখানে গুড় তৈরির বর্ণনা দিয়ে এই ব্যবসায়ী জানান, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম। তাই চাষিরা খেজুরের রস জ্বাল করার সময় লালচে বর্ণ ধারণ হলেই তাতে চিনি ঢেলে দেন। প্রতি ১০ লিটার রসে দুই থেকে তিন কেজি চিনি দেওয়া হয়। চিনি গললে হাইড্রোজ ও ফিটকিরি দেওয়া হয়। এসব উপকরণে রস গাঢ় হওয়ার পাশাপাশি গুড়ের রং উজ্জ্বল হয়।
উৎপাদন পর্যায়ে গুড়ে ভেজাল মেশানোর কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আবির হাসান। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন মানের গুড় আসে ঢাকায়। উৎপাদন পর্যায়ে ভেজাল রোধ করা গেলেই কেবল ভোক্তার জন্য আসল গুড় পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।
উৎপাদন পরিস্থিতি :গত অর্থবছরের চেয়ে এবার খেজুরের আবাদি জমি ও রস উৎপাদন দুটোই কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৭৫ হাজার ২৬০ একর জমিতে খেজুর গাছের আবাদ হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত হয়েছে মোট এক লাখ ৫২ হাজার ৭৪৭ টন খেজুর রস। আর সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৬৮ হাজার ৪০০ একর জমিতে খেজুর গাছের আবাদ হয়েছে। এসব গাছে উৎপাদন হয়েছে মোট এক লাখ ৪৯ হাজার ৭৬১ টন রস।
আসল গুড় চেনার উপায় :গুড় আসল না ভেজাল, তা চেনার উপায় আছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গুড়ের সঙ্গে চিনি মেশালে দেখতে চকচকে হয়। রসাল থাকে না। রং কিছুটা হলদে বা সাদা হয়ে যায়। আসল খেজুর গুড়ের পাটালি চকচক করে না। বাদামি বা কালচে লাল রঙের হয়। নরম ও রসাল থাকে। এ ছাড়া ভেজাল মেশানো হলে পাটালি খুব শক্ত হয়। আর ঝোলা গুড়ের ক্ষেত্রে নিচের অংশে শক্ত হয়ে যায় এবং তরল অংশ ওপরের দিকে উঠে যায়।
ভেজালের রসায়ন :রাজশাহীর পুঠিয়ার গন্ডগোহালী গ্রামের গাছি আতাবুদ্দিনের দাবি, হাইড্রোজ মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে গরম গুড়ে হাইড্রোজ দিলে আর ক্ষতি হয় না। হাইড্রোজ না দিলে সুন্দর হয় না গুড়ের রং। কালো গুড়ের চাহিদা নেই। যদি চাহিদা থাকত, তাহলে চাষিরা টাকা খরচ করে হাইড্রোজ কিনবে কেন?' তিনি বলেন, 'চুন দেওয়া হয় রসের মান ভালো রাখার জন্য। ফিটকিরি দেওয়া হয় ময়লা ও জীবাণু দূর করার জন্য। এগুলো ক্ষতিকর কিনা, আমার জানা নেই। মানুষ ফিটকিরি দিয়ে পানি পরিস্কার করে খায়। চুন দিয়ে পানও খায়।' আরেক গাছি সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'কালো গুড় হাটে নিলে কেউ নেয় না। গুড় হাটে বিক্রি করতে হলে চকচকে করতে হয়। এ জন্য যা যা লাগে দিতে হয়। তবে কেউ কেউ অর্ডার করে হাইড্রোজ ছাড়াই বেশি দামে নেয়। ফর্সা গুড় সবাই চায়।'
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর :ভেজাল মেশানো এসব গুড় খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন ভোক্তারা। পাকস্থলী, খাদ্যনালি, কিডনি, লিভারের ক্ষতিসহ নানা রোগ হতে পারে বলে মনে করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।
প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে প্রস্তুত করা খেজুরের গুড় স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। বিভিন্ন জেলায় গুড়ের সঙ্গে ভেজাল দেওয়া হয়। এই ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত কাজ করছে।
ভেজাল রোধের আইনে জটিলতা :ভেজাল মেশানোর কাজগুলো সাধারণত রাতে করা হয়। গুড়ে ভেজাল রোধে বিএফএসএর যে বিধান আছে, তাতে অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যেসব জায়গায় ভেজাল ধরা পড়ে, তার বেশিরভাগ স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। ফলে তাদের জরিমানা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। সে কারণে তাদের সতর্ক করা ছাড়া বিকল্প উপায় থাকে না।
খেজুরের গুড়ে সাংঘাতিক দুর্বৃত্তায়ন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিএফএসএর খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, খেজুর গুড়ে যে উপাদান থাকার কথা, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সেই উপাদান পাওয়া যায় না। গো-খাদ্য, চিনি, আটা-ময়দাসহ নানা উপাদান মেশানো হয়। ভেজাল দেওয়া মানেই অপরাধ। অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে।
রাজশাহীতে ৫০ মণ ভেজাল গুড় জব্দ :রাজশাহীর আড়ানীতে অভিযান চালিয়ে ৫০ মণ ভেজাল গুড়সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, গত রোববার বিকেলে বাঘার আড়ানীর চকরপাড়া গ্রামে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশ ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড় ও বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করে। গ্রেপ্তার সাতজন হলেন আড়ানীর চকরপাড়া গ্রামের রকিব আলী, তার সহযোগী সুমন আলী, অনিক আলী পাইলট, মাসুদ রানা, বিপ্লব হোসেন সাজু, মামুন আলী ও বাবু।
পুলিশ জানায়, আসামিরা চিনি, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা ও বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করে আসছিল। এসব ভেজাল গুড় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করার চেষ্টা ছিল। এ ঘটনায় বাঘা থানায় মামলা হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে গুড়ে এসব ক্ষতিকর উপাদান মেশানো হয়। ভেজাল রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের হুমকিতে পড়বে জনস্বাস্থ্য। তবে আইনি জটিলতা থাকায় সতর্ক করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা খেজুর গুড়ের কেজি সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। এর মধ্যে প্রতি কেজি খেজুরের পাটালি ১০০ থেকে ২৫০ এবং ঝোলা (তরল) গুড়ের কেজি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। ভেজাল আর খাঁটি গুড়ের কারণে পণ্যটির দামে এই বিশাল ফারাক দেখা যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ভেজালের সাত-সতেরো :খুচরা ব্যবসায়ী ও নিরাপদ খাদ্য সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত গুড়ের রং গাঢ় বাদামি হয়। চিনি মেশানো গুড় দেখতে খুব চকচকে হয়। আর হলদেটে রঙের গুড় হলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত রাসায়নিক মেশানো হয়েছে। আবার কখনও নিম্নমানের ঝোলা ও নরম গুড় গলিয়ে তাতে রং, সোডা, গো-খাদ্য, আটা-ময়দা, পাথুরে চুন দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। গুড়ের রং সাদা ও শক্ত করতে মেশানো হয় চিনি। এসব গুড়ে স্বাদ ও গন্ধ থাকে কম।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গুড়ের চেয়ে তুলনামূলক চিনির দাম কম। তাই খেজুর গুড়ে চিনি মেশানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, রাজশাহীতে যারা গুড় তৈরি করেন, প্রতিবছর তাদের কাছ থেকে কিনে এনে ঢাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করেন তিনি।
সেখানে গুড় তৈরির বর্ণনা দিয়ে এই ব্যবসায়ী জানান, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম। তাই চাষিরা খেজুরের রস জ্বাল করার সময় লালচে বর্ণ ধারণ হলেই তাতে চিনি ঢেলে দেন। প্রতি ১০ লিটার রসে দুই থেকে তিন কেজি চিনি দেওয়া হয়। চিনি গললে হাইড্রোজ ও ফিটকিরি দেওয়া হয়। এসব উপকরণে রস গাঢ় হওয়ার পাশাপাশি গুড়ের রং উজ্জ্বল হয়।
উৎপাদন পর্যায়ে গুড়ে ভেজাল মেশানোর কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আবির হাসান। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন মানের গুড় আসে ঢাকায়। উৎপাদন পর্যায়ে ভেজাল রোধ করা গেলেই কেবল ভোক্তার জন্য আসল গুড় পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।
উৎপাদন পরিস্থিতি :গত অর্থবছরের চেয়ে এবার খেজুরের আবাদি জমি ও রস উৎপাদন দুটোই কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৭৫ হাজার ২৬০ একর জমিতে খেজুর গাছের আবাদ হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত হয়েছে মোট এক লাখ ৫২ হাজার ৭৪৭ টন খেজুর রস। আর সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৬৮ হাজার ৪০০ একর জমিতে খেজুর গাছের আবাদ হয়েছে। এসব গাছে উৎপাদন হয়েছে মোট এক লাখ ৪৯ হাজার ৭৬১ টন রস।
আসল গুড় চেনার উপায় :গুড় আসল না ভেজাল, তা চেনার উপায় আছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গুড়ের সঙ্গে চিনি মেশালে দেখতে চকচকে হয়। রসাল থাকে না। রং কিছুটা হলদে বা সাদা হয়ে যায়। আসল খেজুর গুড়ের পাটালি চকচক করে না। বাদামি বা কালচে লাল রঙের হয়। নরম ও রসাল থাকে। এ ছাড়া ভেজাল মেশানো হলে পাটালি খুব শক্ত হয়। আর ঝোলা গুড়ের ক্ষেত্রে নিচের অংশে শক্ত হয়ে যায় এবং তরল অংশ ওপরের দিকে উঠে যায়।
ভেজালের রসায়ন :রাজশাহীর পুঠিয়ার গন্ডগোহালী গ্রামের গাছি আতাবুদ্দিনের দাবি, হাইড্রোজ মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে গরম গুড়ে হাইড্রোজ দিলে আর ক্ষতি হয় না। হাইড্রোজ না দিলে সুন্দর হয় না গুড়ের রং। কালো গুড়ের চাহিদা নেই। যদি চাহিদা থাকত, তাহলে চাষিরা টাকা খরচ করে হাইড্রোজ কিনবে কেন?' তিনি বলেন, 'চুন দেওয়া হয় রসের মান ভালো রাখার জন্য। ফিটকিরি দেওয়া হয় ময়লা ও জীবাণু দূর করার জন্য। এগুলো ক্ষতিকর কিনা, আমার জানা নেই। মানুষ ফিটকিরি দিয়ে পানি পরিস্কার করে খায়। চুন দিয়ে পানও খায়।' আরেক গাছি সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'কালো গুড় হাটে নিলে কেউ নেয় না। গুড় হাটে বিক্রি করতে হলে চকচকে করতে হয়। এ জন্য যা যা লাগে দিতে হয়। তবে কেউ কেউ অর্ডার করে হাইড্রোজ ছাড়াই বেশি দামে নেয়। ফর্সা গুড় সবাই চায়।'
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর :ভেজাল মেশানো এসব গুড় খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন ভোক্তারা। পাকস্থলী, খাদ্যনালি, কিডনি, লিভারের ক্ষতিসহ নানা রোগ হতে পারে বলে মনে করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।
প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে প্রস্তুত করা খেজুরের গুড় স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। বিভিন্ন জেলায় গুড়ের সঙ্গে ভেজাল দেওয়া হয়। এই ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত কাজ করছে।
ভেজাল রোধের আইনে জটিলতা :ভেজাল মেশানোর কাজগুলো সাধারণত রাতে করা হয়। গুড়ে ভেজাল রোধে বিএফএসএর যে বিধান আছে, তাতে অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যেসব জায়গায় ভেজাল ধরা পড়ে, তার বেশিরভাগ স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী। ফলে তাদের জরিমানা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। সে কারণে তাদের সতর্ক করা ছাড়া বিকল্প উপায় থাকে না।
খেজুরের গুড়ে সাংঘাতিক দুর্বৃত্তায়ন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন বিএফএসএর খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, খেজুর গুড়ে যে উপাদান থাকার কথা, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সেই উপাদান পাওয়া যায় না। গো-খাদ্য, চিনি, আটা-ময়দাসহ নানা উপাদান মেশানো হয়। ভেজাল দেওয়া মানেই অপরাধ। অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে।
রাজশাহীতে ৫০ মণ ভেজাল গুড় জব্দ :রাজশাহীর আড়ানীতে অভিযান চালিয়ে ৫০ মণ ভেজাল গুড়সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, গত রোববার বিকেলে বাঘার আড়ানীর চকরপাড়া গ্রামে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশ ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড় ও বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করে। গ্রেপ্তার সাতজন হলেন আড়ানীর চকরপাড়া গ্রামের রকিব আলী, তার সহযোগী সুমন আলী, অনিক আলী পাইলট, মাসুদ রানা, বিপ্লব হোসেন সাজু, মামুন আলী ও বাবু।
পুলিশ জানায়, আসামিরা চিনি, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকিরি, ডালডা ও বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করে আসছিল। এসব ভেজাল গুড় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করার চেষ্টা ছিল। এ ঘটনায় বাঘা থানায় মামলা হয়েছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com