এইচএসসিতে ছয় জন্মান্ধ শিক্ষার্থীর কৃতিত্বপূর্ণ ফল

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২২ । ১২:০২ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২২ । ১২:০২

পাবনা অফিস

ছয় শিক্ষার্থী

চোখের আলো নেই। জন্মান্ধ। এই প্রতিবন্ধকতার পরও অন্যসব শিক্ষার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছয় ছাত্র। শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়ে তারা সবাই জিপিএ-৪ এর ওপরে পয়েন্ট পেয়েছে।

পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ এবং পাবনা ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্র থেকে তারা পরীক্ষা দেয়। এরমধ্যে সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের ছাত্র একজন। শহীদ এম মনসুর আলী কলেজের একজন। বাকি চারজন দোগাছি কলেজের শিক্ষার্থী। পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয় ও সহায়তায় তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়।

পাবনার বিশিষ্টজন জন্মান্ধ এই ছয় শিক্ষার্থীর সফলতাকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সহায়তা করতে সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

যারা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করেছে, তারা হল, পাবনা সদর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের মো. মোয়াজ্জেম প্রামাণিকের ছেলে মো. রুহুল আমিন, সে পেয়েছে জিপিএ ৪.৬৭। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার গুজিরাম গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে তোফায়েল মিয়া, সে পেয়েছে জিপিএ ৪.০৮। রাজশাহীর পবা উপজেলার শাহমুখদুম গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম পেয়েছে জিপিএ ৪.০৮। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার দেরুলি গ্রামের কানাই মন্ডলের ছেলে গোলক মন্ডল পেয়েছে জিপিএ ৪.৩৩। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ বাঐতোরা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে খোকন আলী পেয়েছে ৪.৪২। একই জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার প্রতাপ বাঙালা গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে রাকিব হাসান পেয়েছে ৪.৩৩ পয়েন্ট।


শিক্ষার্থী রুহুল আমিন সমকালকে বলে, শ্রুতি লেখকের সহায়তায় একই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছি আমরা। অনেক সময় আমরা সঠিক বলে দিলেও শ্রুতি লেখক লিখতে ভুল করে বসেন। এতে নম্বর কমে যায়। সে বলে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশের সব অন্ধকে সাহায্য করাই আমার মূল লক্ষ্য।

পাবনা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন সমকালকে বলেন, অন্ধদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। এখন পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। দরিদ্র অন্ধদের শ্রুতি লেখক সম্মানী তো দূরের কথা, লেখাপড়া ন্যূনতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। এর পরেও থেমে থাকেনি এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষাজীবন।

তিনি আরও বলেন, এই ছয় পরীক্ষার্থীর মতো আরও শতাধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছে।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. এম আবদুল আলীম সমকালকে বলেন, এসব অন্ধ শিক্ষার্থীর চ্যালেঞ্জকে আমাদের সহায়তা করা উচিত। তাদের এই ফলাফল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। মানবকল্যাণ ট্রাস্টকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে সারাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন সমকালকে বলেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অন্ধ শিক্ষার্থীদের ফলাফল আশাব্যঞ্জক। সরকার তাদের সম্ভাব্য সহায়তা করবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com