সিএনএনের বিশ্লেষণ

ইউক্রেনে কী চান পুতিন

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২২ । ২২:৫০ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২২ । ২২:৫২

অনলাইন ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

দফায় দফায় বৈঠক এবং কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের পরও রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট অব্যাহত রয়েছে। এখনও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নজর রয়েছে সাবেক সোভিয়েত দেশটির দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অনুমান, ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দেড় লাখ রুশ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। সেনা প্রত্যাহার নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার পর অল্প সংখ্যক সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে মস্কো। তবে এখনও পুরোপুরি নিরাপদ নয় ইউক্রেন সীমান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শুক্রবার সতর্ক করে বলেছেন, যে কোনো মুহূর্তে ইউক্রেনের ওপর হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের।

বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক বৈঠকের পর চলতি সপ্তাহে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। তবে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর এ ঘোষণা বিশ্বাস করতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, মস্কো সেনা প্রত্যাহার না করে আরও বেশি সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম সীমান্তে জড়ো করেছে। এ ধরনের আয়োজন সাধারণত যুদ্ধ শুরুর লক্ষণ। ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইকেল কার্পেন্টার ওএসসিইর এক বৈঠকে বলেছেন, 'আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। জানুয়ারির ৩০ তারিখ পর্যন্ত তা ছিল ১ লাখের মতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশ।'


গোয়েন্দা রিপোর্ট ও স্যাটেলাইটে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের যেসব জায়গা রাশিয়া দখল করেছিল সেখানেই রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ওপুক ও ইয়েভপাটোরিয়া রেলইয়ার্ড। সেখানে রাশিয়ান সেনা টহল দিচ্ছে। লেক ডোনুজলাভ ও নোভোজারনয়েতে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পদাতিক বাহিনীসহ সাঁজোয়া যান ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে সামরিক মহড়ার জন্য বেলারুশে সেনা পাঠিয়েছে মস্কো। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া ইউক্রেনকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। ইতোমধ্যে দুই পক্ষের গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ারও তথ্য পাওয়া গেছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, শুক্রবার সকালে ৬০০টির বেশি বিস্ম্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা বৃহস্পতিবারের চেয়ে ১০০টি বেশি। দুই পক্ষই সবার ওপর এমনকি সবকিছুর ওপর গুলি চালাচ্ছে। ২০১৪-১৫ সালেও এ রকম দেখা যায়নি। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত 'বিপজ্জনক' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যে কোনো উপায়ে ইউক্রেন দখল করতে চান পুতিন। কিন্তু কেন? রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এতো আক্রোশ কেন সাবেক সোভিয়েতের এই দেশটির ওপর?

ট্রাম্প প্রশাসনে কাজ করা উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফিওনা হিলের মতে, ইউক্রেন নিয়ে এই সংকট নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই পুতিনের নজর ছিল ইউক্রেনের দিকে। মাঝে মাঝেই ইউক্রেনকে বিরক্ত করেছেন তিনি। ২০০৬ সালে ইউক্রেনে গ্যাস বন্ধ করে দেয় মস্কো। গত ২২ বছর ধরে শাসন ক্ষমতায় আছেন পুতিন। এই সময়ে নানাভাবে তিনি বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছেন ইউক্রেনকে।

হিল বলেন, পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার অধীনে রাখতে চান। তিনি এই কাজে সফল হলে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতে পারবেন। পুতিন একটি ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য বানাতে চান। সেই জন্যই তার নজর ইউক্রেনে। দেশটি এক সময় রাশিয়ার সঙ্গে ছিল। পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই পুতিনের ইচ্ছা ইউক্রেনকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা।

সিআইএ-এর রাশিয়ান প্রোগ্রামের সাবেক প্রধান জন সিফার সিএনএনকে বলেন, পুতিন চান সব দেশ রুশপন্থি হোক। সে কারণেই পুতিন চান না ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন জোটে কিয়েভ যোগদান করুক। উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে জার সাম্রাজ্যের মতো একটি পরিস্থিতি রৈ করতে চাচ্ছেন তিনি। অথবা তার ইচ্ছা সাবেক সোভিয়েতকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা। তবে মজার ব্যাপার হলো, পরিকল্পিত সোভিয়েতে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা না করে ব্যক্তি শাসনের ওপরই জোর দিয়েছেন পুতিন। এ জন্যই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একেবারে তৈরি তিনি।


© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com