অদম্য নারী

তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২২ । ১০:৩৬ | প্রিন্ট সংস্করণ

হাসান জাকির

নানা বাধা আর সংকটের মধ্যেও এগিয়ে চলছেন নারী। নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় সবার আগে প্রয়োজন নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এ ক্ষেত্রে নারীর সবচেয়ে বড় বন্ধু হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির অবারিত ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও নিচ্ছেন নারীরা। আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক টানাপোড়েন পেরিয়ে নারীর দৃপ্ত পথচলায় সঙ্গী এখন তথ্যপ্রযুক্তি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য মতে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ছাড়িয়েছে। একই ব্যক্তি একাধিক সিম ও হ্যান্ডসেট ব্যবহার করায় ঠিক কতসংখ্যক মানুষের হাতে হ্যান্ডসেট আছে সেটি বলা কঠিন। তবে এটি সহজেই অনুমেয় দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের দিক থেকে পুরুষের তুলনায় নারীরা খুব একটা পিছিয়ে নেই এটা বলা যায়। একই কথা খাটে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সাড়ে ১২ কোটিরও বেশি। নারীরাও এখন মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট তাদের প্রাত্যহিক নানা কাজে ব্যবহার করছেন। দেশে কিংবা বিদেশে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলছেন, ভিডিও কল করছেন, ফেসবুক ব্যবহার করছেন, ইউটিউব ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি এই ইন্টারনেট ও মোবাইল ডিভাইসকে অনেক নারীই আয়ের উৎস হিসেবে নিয়েছেন।

নারীর জন্য ঘরে বসে কাজের সবচেয়ে বড় সুযোগটি নিয়ে এসেছে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ ক্ষেত্রে দেশের সাফল্যও ঈর্ষণীয়। সারাবিশ্বে ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান সমকালকে জানান, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বর্তমানে দেশের সাড়ে ছয় লাখ নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। মার্কেটপ্লেসের বাইরেও সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করেন এমন ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তবে দেশের মোট ফ্রিল্যান্সারের মাত্র ১৫ শতাংশ নারী। ঘরে বসে কাজ করার দারুণ সুযোগ থাকলেও এ ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে সাধারণত রাতে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ ও কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক নারীই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা সহজেই এ খাত থেকে আয় করতে পারেন বলে জানান তিনি।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও দেশের নারীরা এখন উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসছেন। অনেক ছাত্রী, কর্মজীবী নারী ও গৃহিণী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। অনেকে খুব অল্প টাকা বিনিয়োগ করে ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তা হয়ে সম্মানজনক আয় করছেন।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, দেশে বর্তমানে ফেসবুককেন্দ্রিকই ১০ লাখেরও বেশি নারী উদ্যোক্তা আছেন। তারা অনেক বছর ধরে ব্যবসা করছেন এমন নয়। করোনাকালীন বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে অনেকেই তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রির মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন। গ্রুপ কিংবা পেজ খুলে ফেসবুক লাইভে পোশাক, গহনা কিংবা প্রসাধনী বিক্রি করছেন, যাদের আবার সিংহভাগ ক্রেতা নারী। এসব উদ্যোক্তার কিন্তু নিজস্ব অফিস নেই কিংবা ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স নেই। বৃহত্তর এ উদ্যোক্তা শ্রেণিকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা (ঋণ) দেওয়া গেলে এ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

নারী উদ্যোক্তাদের ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ উইমেন ইন ই-কমার্স এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত নাম। ফেসবুককেন্দ্রিক এ গ্রুপটির সদস্য এখন ১৩ লাখ, যার অধিকাংশ উদ্যোক্তা অবশ্যই নারী। গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, 'তাদের উদ্যোক্তারা নানা ধরনের পণ্য তৈরি করছেন। অনেকে ইতোমধ্যে বিদেশেও রপ্তানি করছেন। এসব নারী কিন্তু এক কিংবা দুই বছর আগে ঘরে বসেই থাকতেন। এখন তারা কিন্তু উদ্যোক্তা। অনেকে স্বল্প পরিসরে শুরু করে ব্যবসা বাড়িয়েছেন। পোশাক, গহনা, খাবার এগুলো তো আছেই, অনেকেই এখন লেদার আইটেম বানাচ্ছেন। পাটের বিভিন্ন পণ্য বানাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তা এবং সেবায় বৈচিত্র্য আনছেন তারা। এখন আমরা ঢাকাতে আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য কো-ওয়ার্ক স্পেস চালু করেছি। আমরা আমাদের উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানিতে সহায়তার জন্য অচিরেই 'এক্সপোর্ট ইনকিউবেটর' চালু করতে যাচ্ছি। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলাতেই হাইটেক পার্ক তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক চালু হয়েছে। আমরা এসব হাইটেক পার্কে আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য স্পেস বরাদ্দে আবেদন করেছি। আশা করছি, আমাদের উদ্যোক্তারা এসব পার্কে অফিসিয়াল সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, নারীর এই যে সাফল্য এটি কিন্তু সম্ভব হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে। ফলে নারী চাইলেই এখন কারও মুখাপেক্ষী না থেকে, নিজেকে বদলে ফেলতে পারেন। এই সুযোগটি দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। চাকরিজীবী হিসেবে, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কিংবা উদ্যোক্তা যে পরিচয়েই হোক না কেন- এগিয়ে যেতে তথ্যপ্রযুক্তির বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি কিন্তু নারীকে ধরতে হবে। এটিই এখন নারীর এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com