অমর একুশে গ্রন্থমেলা

নারীদের লেখা লেখার জমিন

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২২ । ০১:৩৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

লতিফুল ইসলাম

'সাম্যের গান গাই-/আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই'- তার পরও বৈষম্য ও অসাম্যে ভরা এই পৃথিবীতে 'বিশ্ব নারী দিবস' এলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরে দেখার চেষ্টা করা হয়, প্রতিকূলতা ঠেলে নারীরা কতটুকু এগোল। ঠিক তেমনি বইমেলা এলেও বিশেষভাবে দেখার সুযোগ হয়, লেখালেখি ও প্রকাশনার জগতে কতটুকু এগিয়েছে তারা। সময়ের পরিক্রমায় সমাজের অন্য ক্ষেত্রগুলোতে যেমন, তেমনি সাহিত্যের ভুবনেও তারা মাথা উঁচু করে বিচরণ করছে এখন। তবে মেলা আয়োজনের মতো সাংগঠনিক ক্ষেত্রে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও তেমন নেই। লেখালেখি করতে গিয়েও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের অনেককেই।

কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দা হক বললেন সমকালকে, বইমেলায় এখন নারীদের অনেকেই অংশ নিচ্ছেন। শুধু লেখক হিসেবে নয়, প্রকাশক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেছেন তারা। কিন্তু নারীরা লেখক হিসেবে যত সাবলীলভাবে মনের ভাব প্রকাশ করছেন, প্রকাশকরা প্রকাশনার ক্ষেত্রে ততটা এগোননি। কিন্তু আর বেশিদিন লাগবে না, প্রকাশনার ক্ষেত্রেও নারীরা প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে উঠবেন।

কথাসাহিত্যিক, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেন, নারী লেখকদের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। শুধু সংখ্যায় নয়, তাদের লেখার বিষয়-আশয়, আঙ্গিকও ঈর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রকাশক হিসেবেও এগিয়ে আসছেন নারীরা। তবে মেলা আয়োজন থেকে অনেক ক্ষেত্রে এখনও নারীদের অংশগ্রহণ ততটা বাড়েনি।

যুক্ত প্রকাশনীর প্রকাশক নিশাত জাহান রানা বললেন, বইমেলায় লেখক হিসেবে অনেকের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তারা ভালো গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখছেন। প্রকাশক হিসেবেও অনেকে যুক্ত হচ্ছেন। তাদের প্রকাশনা থেকে ভালো বইও বের হচ্ছে। কিন্তু মেলা আয়োজনে সাংগঠনিক জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়েনি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ যে জায়গায় হয়, সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। মেলা আয়োজনে নারীদের সমতার যে স্থানে হবে, সেটি হচ্ছে না।

অভ্র প্রকাশনীর প্রকাশক ও লেখিকা সমা খান বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ গড়ে ওঠেনি। নারীরা শিক্ষিত হলেও এখনও অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই তাদের অংশগ্রহণ বাড়লেও প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে না।

এ বছরের মেলায় রয়েছে কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, সেলিনা হোসেন, সুরমা জাহিদ, নাসরিন জাহান, ঝর্ণা রহমান, শাহীন আখতার, শাহনাজ মুন্নী, আফসানা বেগম, রাশিদা সুলতানা, পাপড়ি রহমান, রুমা মোদক, রঞ্জনা বিশ্বাস, ফাতিমা জাহান, ইশরাত তানিয়া, স্মৃতি ভদ্র, নাহিদা আশরাফী, মাহফুজা হিলালী, সাধনা আহমেদসহ বিভিন্ন লেখকের নতুন বই। শুধু কবিতা, গল্প, উপন্যাস নয়- প্রবন্ধ ও গবেষণামূলক গ্রন্থও লিখছেন অনেকে। লিখছেন ভ্রমণকাহিনী। বিচিত্র বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছেন তারা। তাদের লেখার জায়গাজমিন ক্রমশই বিস্তৃত হচ্ছে।

আগামী প্রকাশনী থেকে এ বছর এসেছে আনোয়ারা সৈয়দা হকের 'বঙ্গমাতা ও দুই কন্যার কথা' এবং 'নারীর কথা নারীর লেখা'। এ ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে নতুন অনেকের বই। এ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জানালেন, নারী লেখকদের বই বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল সোমবার অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিনে মেলা চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই আসে ৬৭টি।

বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ শিশু-কিশোর চিত্রপ্রদর্শনী :ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনে অবস্থিত ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনী কক্ষে 'বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ' শীর্ষক শিশু-কিশোর চিত্রপ্রদর্শনী' উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীতে ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের বইমেলায় বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রাবলি স্থান পায়। উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে।

আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান :বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় 'বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক পরিপ্রেক্ষিত' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আলোচনায় অংশ নেন মো. নজরুল ইসলাম খান এবং মনজুরুল আহসান বুলবুল। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

স্বাগত বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শ্রেণি-পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বঙ্গবন্ধু সেদিন বীরসত্তায় পরিণত হন, আর তার বীরচেতনা ব্যক্তিসত্তা থেকে জাতিসত্তার মধ্যে সঞ্চারিত হয়।

প্রাবন্ধিক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি কেবল সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধই করেননি, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন। স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় প্রত্যয় প্রতিফলিত হয়েছে ৭ মার্চের ভাষণে।

সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলার সাধারণ মানুষ তাদের আপন চিন্তায়, আপন কর্মে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মর্মবাণী ধারণ করেছিল আর তার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর এই অমর ভাষণ বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মানুষের প্রতিরোধের প্রেরণা হয়ে থাকবে।

গতকাল 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন কামরুল হাসান এবং আনজীর লিটন।

আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং সঞ্জীব পুরোহিত। ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার আনজীর লিটন এবং সুজন বড়ুয়া। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী জালাল খান ইউসুফী, শিবু রায়, সমর বড়ুয়া, সন্দীপন দাস, আবদুল হালিম খান, ফারহানা ফেরদৌসী তানিয়া, শ্যামা সরকার ও শরণ বড়ুয়া। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার, অজিত কুমার, মো. মামুনুর রশিদ ও ইফতেখার হোসেন সোহেল।

আজকের অনুষ্ঠান :আজ মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিনে মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ বিকো ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'সংগীত ও কবিতায় একুশের চেতনা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশ নেবেন ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া, এ এফ এম হায়াতুল্লাহ এবং মুস্তাফিজ শফি। সভাপতিত্ব করবেন নিরঞ্জন অধিকারী। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।



© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com