প্রচ্ছদ

কবি শামসুর রাহমানের চিঠি ও অধুনার প্রকাশ

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী

যে কোনো সাধারণ মানুষের জীবনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নান্তে চাকুরিপ্রাপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে আমি দুটি চাকুরির জন্য ঘটনাক্রমে দরখাস্ত করিয়াছিলাম। একটি সরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসারের চাকুরি। মানুষ বন্ধু-বান্ধবের দেখাদেখি অনেক কাজ করে। এভাবেই ব্যাংকে চাকুরির জন্য দরখাস্ত।

তখন এমএ ক্লাসে পড়ি। সহপাঠী শাহ আলম সারওয়ার ইতোমধ্যে এএনজেড ব্যাংকে চাকুরি লাভ করিয়াছে। কলাভবনে অর্থনীতি বিভাগের বারান্দায় ইহা নিয়া ছাত্রদের ব্যাপক আলোচনা চলে। তাহাদের আলোচনা হইতে চাকুরির বিজ্ঞাপন, আবেদনপত্র এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান লাভ হইল। আরেকদিন শুনি সরকারি ব্যাংকের চাকুরির জন্য কে কে আবেদন করিয়াছে, তাহা নিয়া আলোচনা চলিতেছে।

কেহ একজন জিজ্ঞাসা করিল, 'তুমি কর নাই?'

ঘাড় নাড়িলাম :'করি নাই।'

সহপাঠী জোর দিয়া বলিল, 'সময় আছে। একখানা দরখাস্ত পাঠাইয়া দাও।'

সকলেই তাহাকে সমর্থন করিল :তাহাদের বক্তব্য হইল- 'চাকুরী পাই বা না পাই, চাকুরী পাইয়াও করি বা না করি- একখানা দরখাস্ত ডাক করিতে দোষ নাই।'

দোষ যেহেতু নাই, আমি একখানা দরখাস্ত ঠুকিয়া দিলাম। ঢাকা কলেজে গিয়া লিখিত পরীক্ষা ইত্যাদি দিলাম। কিন্তু নিয়োগপত্র আসিল না। নিয়োগপত্র চিঠি বটে;- জীবনে প্রেমিকার চিঠি অপেক্ষা চাকুরি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। নিয়োগপত্র কেন আসে নাই, তাহা আরেক বৃত্তান্ত।

যাহা হউক, চাকুরির জন্য দ্বিতীয় দরখাস্তটির প্রাপক ছিলেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়। স্বউদ্যোগে এই দরখাস্ত করিয়াছিলাম বলিলে মিথ্যা ভাষণ হইবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা সংক্ষেপে বিসিএস-এর নাম কোনো কারণে আমার কর্ণকুহর অবধি পৌঁছায় নাই। অর্থনীতি বিভাগের সহপাঠী এবং মোহসীন হলের জ্যেষ্ঠ অধিবাসীদের নিকট এই মহার্ঘ চাকুরির বার্তা পাইলাম।

নানা কায়দা কসরতের পরে দরখাস্ত করিবার শেষ দিনে, সময় পার হইয়া যায়-যায় এই রকম অবস্থায়, সেগুনবাগিচার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বারান্দায় রক্ষিত বাক্সে দরখাস্তের মোটাসোটা লোফাফাটি ঢুকাইয়া দিয়া আসিলাম। প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিলাম। মনে আছে, বিসিএস পরীক্ষার সহিত এমএ পরীক্ষার রুটিনে ঝামেলা ছিল। তেজগাঁও টেক্সটাইল কলেজে সকালে (১০-১) বিসিএস পরীক্ষা দিয়া দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পৌঁছাইয়া- সূর্য সেন হলের বহির্ভাগে অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়ায় মুড়িঘণ্ট সহযোগে কিঞ্চিৎ অন্নাদি গলাধঃকরণ করিয়া- চারতলার সিঁড়ি লাফাইয়া যখন এমএ পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার হলে পৌঁছিয়াছিলাম, ততক্ষণে ১৫ মিনিট পার হইয়া গিয়াছে।

বিসিএসের উত্তীর্ণ আবেদনকারীরা সেপ্টেম্বর মাসে নিয়োগপত্র লাভ করিয়া অক্টোবরে যোগদানপত্র দাখিল করিল ও জজ-ম্যাজিস্ট্রেট বনিয়া গেল। আমি রূপালী ব্যাংকের প্ল্যানিং ডিভিশনে সিনিয়র অফিসারের একটি টেবিল-চেয়ার দখল করিয়া বসিয়া থাকি। মাঝেমধ্যে কিছু কাজও করিতে হয়।

একদিন বন্ধু ও সহকর্মী ফয়সাল মোকাম্মেল জিজ্ঞাসা করিল, 'দোস্ত, মনে কিছু করিও না- তোমার বিসিএসের চাকুরী তবে হয় নাই?'

তৎক্ষণাৎ মনে পড়িল, আমি বিসিএস পরীক্ষা দিয়াছিলাম, আর কোনো খবর রাখি নাই।

ফয়সাল মোকাম্মেলের বক্তব্য হইতে জানিলাম সেপ্টেম্বর মাসেই ফলাফল ঘোষিত হইয়াছে- নিয়োগপত্র পাইয়া উত্তীর্ণ চাকুরিপ্রার্থীরা ইতোমধ্যে কাজে যোগদান করিয়াছে। আমার নিয়োগপত্র আসে নাই। বিসিএস নিয়া আজ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে আশা, আকাঙ্ক্ষা ও উন্মাদনা, তাহা ১৯৮৩-তে ছিল না। তবু মন খারাপ হইল। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হইবার অভ্যাস পশভ ছিল না।

ফয়সাল মোকাম্মেল ক্যান্টিনে লইয়া গেল- শিঙাড়া ও চা খাওয়াইল। দ্রুত মনোব্যথা লাঘব হইল। মাসখানেক পরে- ডিসেম্বর (১৯৮৩) মাসের এক তারিখ হইবে- দিনটি বৃহস্পতিবার- ময়মনসিংহ হইতে আম্মাজানের ট্রাংকল আসিল :বাসায় একটি টেলিগ্রাম আসিয়াছে। তাহাতে লেখা অমুক স্থানে গিয়া অমুক তারিখের মধ্যে যোগদান না করিলে আমার নিয়োগপত্র বাতিল করিয়া দেওয়া হইবে।- কী ভয়ানক হুমকি!

তখন কয়েক বৎসর যাবৎ ঢাকা-ময়মনসিংহ একতা এক্সপ্রেস চালু হইয়াছে। বিকেল পাঁচটায় কমলাপুর হইতে ছাড়ে। ইহার ডাইনিংকারে বসিয়া আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ জংশনে পৌঁছিলাম। টেলিগ্রামে প্রেরিত বিসিএস কর্তৃপক্ষের শাসানি বৃথা যায় নাই। ১৯৮৩-এর ১১ ডিসেম্বর রোববার আমি চট্টগ্রাম গিয়া সিজিএস ভবনে অবস্থিত কাস্টমস ভ্যালুয়েশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান জনাব সাইফুল ইসলাম খানের (কবি হায়াৎ সাইফ) করকমলে যোগদানপত্র দাখিল করিলাম। তাহার ব্যক্তিত্ব, সদাচরণ ও কৌতুকপ্রবণতা মুগ্ধ করিল। জীবনে এইরূপ চৌকষ মানুষ কম দেখিয়াছি। আল্লাহপাক তাহাকে জান্নাতবাসী করুন।

জীবনে চিঠির গুরুত্ব রহিয়াছে। যোগাযোগের জন্য আমরা কত না প্রকারের চিঠি লিখিয়া থাকি। কারণে-অকারণে কত বিচিত্র রকমের চিঠি ডাকপিয়ন বিলি করিয়া যায়। চিঠি কত প্রকার হইতে পারে? দুটির কথা উল্লেখ করিতে পারি, নিয়োগপত্র ও প্রেমপত্র। ইহার কোনোটিকে খাটো করিয়া দেখিবার উপায় নাই। নিমন্ত্রণপত্রও পত্র বটে। চাকুরি হইতে বরখাস্তের পত্রও পত্র। বিভিন্ন চিঠির বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া হয়।

আব্রাহাম লিঙ্কন দাড়ি রাখিতেন না। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনকালে এক একাদশ বর্ষীয়া খুকী লিংকনকে চিঠি লিখিল, 'আপনি দাড়ি রাখিলে তাহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর চেহারার সহিত মানানসই হইবে, ভোটের বাক্স ভারী হইবে।' গ্নেইস বিডেল নামীয় ঐ কিশোরীর পত্র পাইয়া আব্রাহাম লিঙ্কন দাড়ি চাঁছা বাদ দিলেন। নির্বাচনে যিনি জয় লাভ করিলেন, তিনি দাঁড়িওয়ালা লিঙ্কন। এইরূপ মোক্ষম পরামর্শ সংবলিত পত্র ইহ-জীবনে আমার হস্তগত হয় নাই।

আইনস্টাইনের একটি চিঠি পাইয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছিলেন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ আগস্ট মাসে এই চিঠি পাইয়া ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট তাহার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল ওয়াটসনকে পারমাণবিক সমরাস্ত্র উদ্ভাবনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎক্ষণাৎ নির্দেশ প্রদান করিয়াছিলেন।- ইতিহাসে নিশ্চয় এই রূপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিঠির দৃষ্টান্ত রহিয়াছে।

চিঠি পাইয়া আমার উত্তর দিতে বিলম্ব হয়, তবে যাহা করিবার তাহা করিতে বিলম্ব হয় না। জীবনে কয়টি চিঠি পাইয়া কৃতার্থ বোধ করিয়াছি, তাহা মনে করিতে পারি না। তবে একটি চিঠির কথা বিশেষ করিয়া মনে পড়িতেছে। ইহা ১৯৮৫-এর ঘটনা।

আমি খুলনা কালেক্টরেটে সহকারী কালেক্টর হিসেবে পদস্থ। শুনিলাম কলকাতা সফর শেষে কবি আল মাহমুদ, কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মুজাহিদী এবং অন্যান্য কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক বেনাপোল দিয়া বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করিবেন। বিশেষ চিন্তা আর কী! বেনাপোল গিয়া তাহাদের অভ্যর্থনা জানাইলাম। বেনাপোল হইতে ঢাকাগামী বাস ছাড়ে সন্ধ্যায়। সরকারি রেস্টহাউসের বসার ঘরে তিন-চার ঘণ্টা নাগাড়ে আড্ডা চলিল। তখন কবি শামসুর রাহমানের অবস্থা খারাপ :তাহাকে কুপোকাৎ করিবার জন্য দৈনিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক হইতে প্রধান সম্পাদক বানানো হইয়াছে। তাহার কাজ বিশেষ কিছু নাই। অফিসে যাতায়াতের গাড়ি পাইতেও কষ্ট। অফুরন্ত অবকাশ।

রাহমান ভাই আমাকে স্বল্পই চিনিতেন। তবু সাহস করিয়া বলিলাম, 'দেশে ভালো সাহিত্যপত্রিকা নাই।'

তিনি মাথা দোলাইয়া একমত হইলেন।

বলিলাম, 'একটি ভালো সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশ করা জরুরী।' পুনর্বার মাথা দোলাইয়া তিনি ঐকমত্য জ্ঞাপন করিলেন।

আবু হাসান শাহরিয়ার ও সৈয়দ আল ফারুক আমার পরবর্তী বক্তব্য শুনিবার জন্য অধীর হইয়া উঠিয়াছে। তাহাদের দিকে নজর করিয়া কহিলাম, 'একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশ করিতে যাহা লাগে, তাহার আয়োজন আমার পক্ষে করা সম্ভব। তবে সামান্য একটি শর্ত রহিয়াছে।'

এযাবৎকাল রাহমান ভাই মাথা নিচু করিয়া আমার কথা শুনিতেছিলেন। শর্তের কথা শুনিয়া মুখ তুলিয়া তাকাইলেন।

আমি হাসিয়া বলিলাম, 'কঠিন কোনো শর্ত নহে। আপনাকে ইহার সম্পাদনার ভার গ্রহণ করিতে হইবে। ঢাকায় ইহার অফিস হইবে। আপনার সম্পাদনা সহকারী থাকিবে। আমার বন্ধু ইউসুফ হাসান শিল্প নির্দেশনা ও প্রোডাকশন দেখিবে। মাসে এক হাজার কপি ছাপা হইবে। এই ত্রৈমাসিক পত্রিকার অফিস হইবে দেশের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের আড্ডার জায়গা।'

আবু হাসান শাহরিয়ার, সৈয়দ আল ফারুক, নাসির আহমেদ সকলে হৈহৈ করিয়া উঠিল। আমার ওপর তাহাদের অগাধ আস্থা। আমার প্রস্তাবে রাজি হইবার জন্য তাহারা রাহমান ভাইকে চাপিয়া ধরিল। রাহমান ভাই আমতা আমতা করিতে লাগিলেন। তিনি অত্যন্ত নম্র প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। সবার চাপে পড়িয়া তিনি স্বীকার করিলেন, সম্পাদক হইতে তাহার আপত্তি নাই। তবে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিয়া তিনি তাহার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করিলেন। তিনি আশ্বস্ত করিলেন, এ বিষয়ে তাহার চিঠি পাইতে বিশেষ বিলম্ব হইবে না। তিনি আমার ঠিকানা সংগ্রহ করিলেন। সন্ধ্যার ঢাকাগামী বাসে তাহাদের উঠাইয়া দিয়া আমি বাড়ির পথে যাত্রা করিলাম।

ফারুক মঈনউদ্দীন খুলনার এবি ব্যাংকে কর্মরত। নভেম্বরের এক শীতার্ত সন্ধ্যায় তাহাকে ঘটনাটি খুলিয়া বলিলাম। রাহমান ভাইয়ের চিঠি আসিবে কি-না- আসিলে তাহা ইতিবাচক হইবার সম্ভাবনা কতটুকু- এইসব লইয়া কথাবার্তা হইল। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলিয়া যায়- শামসুর রাহমানের চিঠি আর আসে না। ফারুক বইমেলার উপলক্ষে ঢাকা গেল। ফারুকের অনুরোধে তুষার দাস দায়িত্ব নিল সে রাহমান ভাইকে ফোন করিয়া- প্রয়োজনে সাক্ষাৎ করিয়া- তাগাদা দিবে।

৩.

১৯৮৫। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ হইবে। আমার ব্যক্তিগত সহকারী একটি সাদা খাম লইয়া আসিল। অবশেষে কবি শামসুর রহমানের ঈপ্সিত চিঠি আসিয়াছে। রাহমান ভাই লিখিয়াছেন তিনি আমার প্রস্তাবে রাজি, তবে ঢাকা গিয়া আলোচনা করিলে ভালো হয়। পরের সপ্তাহেই শামসুর রাহমান ভাইয়ের তালতলার বাসায় আমি, ফারুক মঈনউদ্দীন, তুষার দাশ ও ইউসুফ হাসান একযোগে হাজির হইলাম।

সাব্যস্ত হইল ত্রৈমাসিক পত্রিকার নাম হইবে 'অধুনা'। বছরে চারটি সংখ্যা প্রকাশিত হইবে। পত্রিকার আকার হইবে সর্বনিম্ন ১০ ফর্মা। সকল লেখক-কবিকে নিয়মিত সম্মানী প্রদান করা হইবে। রাহমান ভাই সপ্তাহে দুই দিন বিকালে অফিসে আসিবেন। তুষার দাশ সম্পাদক সহকারীর দায়িত্ব পালন করিবেন, ইউসুফ হাসান হইবেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। প্রকাশনা হইবে অধ্যাপক শিরিন চৌধুরীর নামে। 'অধুনা'র মাসিক ব্যয় প্রাক্কলন করা হইল :ক) কবি শামসুর রাহমানের সম্মানী- ৫,০০০/-; খ) তুষার দাশ- ৩,০০০/-; গ) ইউসুফ হাসান- ৩০০০/-; ঘ) অফিস ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল- ৫০০০/-; ঙ) অফিসের নানাবিধ ব্যয় ১৫০০/- এবং চ) পিয়ন- ১০০০/-।

দ্রুত সর্ববিধ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হইল। নতুন বৎসরে জানুয়ারি মাসেই 'অধুনা'র প্রথম সংকলন প্রকাশের জন্য রাহমান ভাই ও তুষার দাশ যথাযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করিলেন। লেখা পাওয়া বড় সমস্যা। বিজ্ঞাপন সংগ্রহের দায়িত্ব পড়িল আমার ওপর।

জানুয়ারিতেই প্রকাশিত হইল অধুনার প্রথম সংখ্যা। ঢাকা হকার্স ইউনিয়ন ও কারেন্ট বুক স্টলের সহায়তায় এক সপ্তাহের মধ্যে বিপণন সুসম্পন্ন হইল। চাহিদা বেশি হওয়ায় সংরক্ষিত পঞ্চাশ কপিতে হাত দিতে হইল।

পরিতাপের বিষয়, 'অধুনা'র কোনো কপি আজ আর আমার কাছে নাই। তবে বলিতে পারি, রাহমান ভাইয়ের তৎপরতার কারণে ইহাতে সব বিখ্যাত ব্যক্তির লেখা মুদ্রিত হইয়াছিল। অধুনার দ্বিতীয় সংকলনের সূচিপত্র মুদ্রিত হইল।

অধুনাতে মুদ্রিত কয়েকটি রচনার কথা মনে পড়ে :প্রবন্ধ শিল্পকলার বিমানবিকীকরণ- হুমায়ুন আজাদ এবং বাস্তববাদ ও পরাবাস্তববাদ- সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তুষার দাশের কল্যাণে আহসান হাবীবের অপ্রকাশিত কবিতা- আমরা একদা মুদ্রিত হইয়াছিল। একটি সংখ্যায় কবিতা ছিল: আবুল হোসেন- নসিব আমার; শহীদ কাদরী- হন্তারকদের প্রতি; সাইয়িদ আতিকুল্লাহ- স্রোতের উজানে; রফিক আজাদ- ঘরবাড়ি বলতেই; আবদুল মান্নান সৈয়দ- নগ্নিকা; ফরহাদ মজহার- মেঘ মেশিনের সংগীত; হেলাল হাফিজ- ডাকাত; শিহাব সরকার- শান্তি যা তা বনগহনে; মনজুরে মওলা- একগুচ্ছ কবিতা।

এই সংখ্যাতেই ছাপা হইয়া ছিল হুমায়ূন আহমেদের ছোটগল্প শীত এবং সৈয়দ শামসুল হকের নেয়ামতকে নিয়ে গল্প নয়। দুটি গ্রন্থের সমালোচনা ছিল :সাজ্জাদ শরিফ করেছিলেন 'আহসান হাবীবের বিদীর্ণ দর্পণে মুখ' এবং তুষার দাশ 'আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা'।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com