
ইউপি নির্বাচনে আঁতুড়ঘরে দুই দলের ভিন্ন অবস্থান
ইসলামী আন্দোলনের উন্নতি, ওয়ার্কার্স পার্টির অবনতি
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সুমন চৌধুরী, বরিশাল

দেশে মূলধারার দুটি রাজনৈতিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বরিশালের দুটি প্রভাবশালী পরিবার থেকে দল দুটির সৃষ্টি। অন্য জেলার চেয়ে বরিশালে সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালীও তারা। এসব কারণে বরিশালকে দল দুটির আঁতুড়ঘর হিসেবেও গণ্য করা হয়। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির ভরাডুবিতে বরিশালে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে জেলায় তিনটি ইউপিতে জয়ী এবং এক ডজন ইউনিয়নে জয়ের কাছাকাছি থাকায় উজ্জীবিত ইসলামী আন্দোলন।
ওয়ার্কার্স পার্টি
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাত্র ৪টি ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতেও জয়ী হতে পারেনি ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুরি প্রতীক। বরং হাতছাড়া হয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন। ফলে দলটির উজিরপুরের একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ইউপি সদস্য ছাড়া জেলায় উল্লেখযোগ্য জনপ্রতিনিধি নেই।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার আব্দুর জব্বার খানের ছেলে ষাটের দশকের তুখোর ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে ১৯৮০ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির সৃষ্টি হয়। খান পরিবারের স্থায়ী নিবাস বাবুগঞ্জের দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে। পরিবারটির রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব রয়েছে বাবুগঞ্জে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠার পর উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায়ও শক্ত ভীত ছিল ওয়ার্কার্স পার্টির। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বাবুগঞ্জ-উজিরপুর আসনে রাশেদ খান মেনন এবং এবং ২০১৪ সালে বাবুগঞ্জ-মুলাদী আসনে জেলা সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান দলের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দলীয় একাধিক নেতাকর্মীর দাবি, ২০০৮ সালে রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনের এমপি হলে তার আসন হিসেবে পরিচিত বরিশাল-৩ আসনের এমপি হন মহাজোটের প্রার্থী জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় জাপার টিপুকে পরাজিত করেন ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ টিপু সুলতান। এর পরই উন্নয়নের ভাগ-বণ্টন নিয়ে এমপি শেখ টিপুর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিরোধ হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুজন আহমেদ জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে হাতুরি প্রতীকে শেখ টিপু সুলতান জয়ী হন। তখনও আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাদের বিরোধিতা করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ টিপু মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমানের পক্ষে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নৌকাকে পরাজিত করেছেন। আতিকুরসহ অন্যদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিস্কার করা হয়। এতে দলের শক্তি মোটেও কমেনি। ওয়ার্কার্স পার্টি এ আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এবারের ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে বহিরাগত, কালো টাকা ও প্রশাসন ব্যবহার করে হাতুুরিকে পরাজিত করা হয়।
জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল হক নীলু বলেন, 'আমরা ১৪ দলের শরিক হলেও বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগের রোষানলের শিকার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির বদলে আমাদেরই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় ওয়ার্কার্স পার্টির কোন্দলে অনেকে বহিস্কার হয়েছেন। আবার অনেকে দল ছেড়েছেন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে এসবের প্রভাব পড়েছে।'
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলার অপর প্রান্তের ইউনিয়নটির নাম চরমোনাই। এই গ্রামের পীর পরিবারের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন পীর সৈয়দ ফজলুল করীম দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে বর্তমান পীর ও দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনিই দলের প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এই ইউনিয়নে জয়ের ধারাবাহিকতা থাকলেও স্থানীয় সরকার ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে জেলায় হাতপাখা প্রতীকের সাফল্য ছিল না। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে চরমোনাইর পাশের ইউনিয়ন চাঁনপুরার বিজয়ী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান মো. আমানউল্লাহ ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিলে জনপ্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়ায় দুইয়ে। এবারের ইউপি নির্বাচনে সদরের চরমোনাই ও জাগুয়া এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতিতে জয়ী হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে জেলার ৩৭টি ইউপিতে হাতপাখার প্রার্থী ছিল। তিনটিতে জয় ছাড়াও কমপক্ষে এক ডজন ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে তারা। কয়েকটি ইউপিতে পরাজয়ের ব্যবধান ছিল ১০০ ভোটেরও কম।
ইসলামী আন্দোলনের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানান, মনোনয়ন জমা দিতে বাধা এবং পরে প্রত্যাহারে বাধ্য করায় ২০ ইউনিয়নে হাতপাখার প্রার্থী ছিল না। যেসব ইউনিয়নে ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছেন, সেখানে হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে গণজাগরণ হয়েছে। তার মতে, ইসলামী আন্দোলনকে মানুষ বিকল্প শক্তি হিসেবে নিয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টি
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাত্র ৪টি ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতেও জয়ী হতে পারেনি ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুরি প্রতীক। বরং হাতছাড়া হয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন। ফলে দলটির উজিরপুরের একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ইউপি সদস্য ছাড়া জেলায় উল্লেখযোগ্য জনপ্রতিনিধি নেই।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার আব্দুর জব্বার খানের ছেলে ষাটের দশকের তুখোর ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে ১৯৮০ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির সৃষ্টি হয়। খান পরিবারের স্থায়ী নিবাস বাবুগঞ্জের দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে। পরিবারটির রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব রয়েছে বাবুগঞ্জে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠার পর উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায়ও শক্ত ভীত ছিল ওয়ার্কার্স পার্টির। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বাবুগঞ্জ-উজিরপুর আসনে রাশেদ খান মেনন এবং এবং ২০১৪ সালে বাবুগঞ্জ-মুলাদী আসনে জেলা সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান দলের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দলীয় একাধিক নেতাকর্মীর দাবি, ২০০৮ সালে রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনের এমপি হলে তার আসন হিসেবে পরিচিত বরিশাল-৩ আসনের এমপি হন মহাজোটের প্রার্থী জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় জাপার টিপুকে পরাজিত করেন ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ টিপু সুলতান। এর পরই উন্নয়নের ভাগ-বণ্টন নিয়ে এমপি শেখ টিপুর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিরোধ হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুজন আহমেদ জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে হাতুরি প্রতীকে শেখ টিপু সুলতান জয়ী হন। তখনও আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাদের বিরোধিতা করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ টিপু মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমানের পক্ষে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নৌকাকে পরাজিত করেছেন। আতিকুরসহ অন্যদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিস্কার করা হয়। এতে দলের শক্তি মোটেও কমেনি। ওয়ার্কার্স পার্টি এ আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এবারের ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে বহিরাগত, কালো টাকা ও প্রশাসন ব্যবহার করে হাতুুরিকে পরাজিত করা হয়।
জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল হক নীলু বলেন, 'আমরা ১৪ দলের শরিক হলেও বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগের রোষানলের শিকার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির বদলে আমাদেরই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় ওয়ার্কার্স পার্টির কোন্দলে অনেকে বহিস্কার হয়েছেন। আবার অনেকে দল ছেড়েছেন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে এসবের প্রভাব পড়েছে।'
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলার অপর প্রান্তের ইউনিয়নটির নাম চরমোনাই। এই গ্রামের পীর পরিবারের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন পীর সৈয়দ ফজলুল করীম দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে বর্তমান পীর ও দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনিই দলের প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এই ইউনিয়নে জয়ের ধারাবাহিকতা থাকলেও স্থানীয় সরকার ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে জেলায় হাতপাখা প্রতীকের সাফল্য ছিল না। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে চরমোনাইর পাশের ইউনিয়ন চাঁনপুরার বিজয়ী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান মো. আমানউল্লাহ ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিলে জনপ্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়ায় দুইয়ে। এবারের ইউপি নির্বাচনে সদরের চরমোনাই ও জাগুয়া এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতিতে জয়ী হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে জেলার ৩৭টি ইউপিতে হাতপাখার প্রার্থী ছিল। তিনটিতে জয় ছাড়াও কমপক্ষে এক ডজন ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে তারা। কয়েকটি ইউপিতে পরাজয়ের ব্যবধান ছিল ১০০ ভোটেরও কম।
ইসলামী আন্দোলনের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানান, মনোনয়ন জমা দিতে বাধা এবং পরে প্রত্যাহারে বাধ্য করায় ২০ ইউনিয়নে হাতপাখার প্রার্থী ছিল না। যেসব ইউনিয়নে ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছেন, সেখানে হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে গণজাগরণ হয়েছে। তার মতে, ইসলামী আন্দোলনকে মানুষ বিকল্প শক্তি হিসেবে নিয়েছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com