
ফেসবুকে জানালেই বাড়ি পৌঁছে যায় স্বয়ম্ভর লাইব্রেরির বই
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২২ । ২১:৩০ | আপডেট: ১১ মার্চ ২২ । ২১:৩০
খাইরুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা

জীবন একটু স্বাভাবিক হতেই লাইব্রেরিতে পড়তে আসছেন শিশু-কিশোর, যুবকসহ সব বয়সের মানুষ। বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়ে লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ এখন সরব ও উৎসবমুখর। জ্ঞান চর্চা করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। এছাড়া প্রযুক্তি নির্ভরতা কমিয়ে বইয়ে আসক্তি গড়ে তুলতে অভিনব পদ্ধতি বের করেছেন স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি। ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে বইয়ের নাম, লেখকের নাম জানালেই বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় বই। আর পাঠকরা পড়তে পারেন তা একদম ফ্রি'তে।
২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের কলেজরোডে ভাড়া বাড়িতে সর্ব প্রথম স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করেন এনামুল হক নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী। ৬১টি বই নিয়ে লাইব্রেরিটি যাত্রা শুরু করলেও এখন রয়েছে প্রায় দুই হাজারের বেশি বই।
৮ বছরের প্রচেষ্টায় পূর্ণতা পেতে শুরু করেছে লাইব্রেরটি। প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন পাঠক। লাইব্রেরি চত্বরে চলে বই পড়া, আবৃত্তি, পেপার পড়া, আড্ডাসহ নানা কর্মকান্ড। প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার পাঠক লাইব্রেরিতে আসেন।
স্বয়ম্ভর লাইব্রেরিতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যয়, হুমায়ূন আহমেদ, আহসান হাবিব, গোলাম মোস্তফাসহ দেশ-বিদেশের লেখক ও সাহিত্যিকদের বই। আর এসব বই পড়া যায় একদম ফ্রিতে। এমনকি পাঠকদের পছন্দের বই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বাড়িতে বই পৌঁছে দেয়া এবং নিয়ে আসার কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। স্বয়ম্ভর লাইব্রেরিতে সদস্য আছেন ৪৫০ জন। স্বেচ্ছাসেবক আছেন ২৫ জন। একজন লাইব্রেরিয়ান নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি শুক্রবার লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বসে পাঠক বৈঠক।
লাইব্রেরিতে পড়তে আসা একজন পাঠক রাকিব বলেন, করোনার সময় বিনা টাকায় বাড়িতে বসে স্বয়ম্ভর লাইব্রেরির বই পড়েছি। এখন লাইব্রেরিতে নিয়মিত পড়তে আসি। এখানে এসে খুব ভালো লাগে।
লাইব্রেরির সদস্য নয়ন জানান, জ্ঞান অর্জনের জন্য বইয়ের কোন বিকল্প নেই। বইয়ের প্রতি মানুষের দরদ ও ভালোবাসা থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত বইয়ের সাথে সম্পর্ক গভীর হচ্ছে। প্রযুক্তি নির্ভরতা কমে আসছে।
লাইব্রেরিতে পড়তে আসা আরেকজন পাঠক আন্দনিতা প্রাপ্তি বলেন, বই হচ্ছে একটা ছোট বাগানের মত। বাগানে সৌরভ আছে,গন্ধ আছে কিন্তু বর্ণ নেই। বর্ণ আছে সৌরভ নেই। বই থেকে সব কিছু পেতে পারি। বইয়ের প্রতি সবার ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। বই পড়লে মানসিকতার পরিবর্তন হয়।
অনিকা আক্তার মাইশা জানান, পাবলিক লাইব্রেরি ছিল সেটা বন্ধ রয়েছে। সময় নষ্ট না করে বই পড়লে জ্ঞান অর্জন হবে। তাই এখানে পড়তে আসেন তিনি।
স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠাতা এনামুল হক বলেন, আলোকিত সমাজ গঠনের জন্য এ লাইব্রেরি গড়ে তুলি। সমাজের মানুষের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা অনেক কম। সব বয়সের মানুষের বই পড়তে হবে। বই পড়লে হবে না, বইয়ের ভাষা বুঝতে হবে। সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে লাইব্রেরিটি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আলমডাঙ্গায় স্বয়ম্ভর নামের একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব বয়সের মানুষের মিলনমেলা হয় সেখানে। ব্যতিক্রমি এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com