
ওয়ানডে খেলে দেশে ফিরবেন সাকিব
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২২ । ১৩:৪১ | আপডেট: ২২ মার্চ ২২ । ১৩:৪১ | প্রিন্ট সংস্করণ
সেকান্দার আলী

পরিবারের প্রতি সাকিবের টান অন্যরকম। মাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেন না। সেই মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ছোট মেয়ে নিউমোনিয়ায় ভুগছে। আর একমাত্র ছেলেও ঠান্ডাজ্বর নিয়ে হাসপাতালে। শাশুড়ির শরীরে বাসা বেঁধেছে দুরারোগ্য ক্যান্সার। ভীষণ ঝড় বয়ে চলেছে সাকিবের পরিবারের ওপর দিয়ে। এই কঠিন মুহূর্তে পরিবারের খুব প্রয়োজন তাকে। তিনি তা জানেন এবং বোঝেনও। তবুও খেলা রেখে দেশে ফিরতে রাজি হননি ৩৪ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের কাঁধে পরিবার সামলানোর দায়িত্ব চাপিয়ে দেশের দায়িত্ব পালন করতে দক্ষিণ আফ্রিকা রয়ে গেলেন সাকিব। কাল প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বিশ্বকাপ সুপার লিগের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচ খেলে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। এ ঘটনা প্রমাণ করে, সাকিবের হৃদয়ের কতটা জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট ও দেশের স্বার্থ। তাই তো তিনি সমকালকে বলতে পারলেন, 'খেলাটাও গুরুত্বপূর্ণ।'
মানসিক বিক্ষিপ্ততার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চাননি সাকিব। বিসিবি কর্মকর্তাদের চাপ এবং মিডিয়ার সমালোচনার মুখে ছুটি বাতিল করে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা যান তিনি। দেশ ছাড়ার আগের দিন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, ওয়ানডে ও টেস্ট দুই সংস্করণই খেলবেন। রাজ্যের চাপ মাথায় নিয়ে দুটি ওয়ানডে খেলেও ফেলেন। শুক্রবার প্রিটোরিয়ার সেঞ্চুরিয়ানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাওয়া ঐতিহাসিক জয়ে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। অথচ মাঠে একমুহূর্তের জন্য কাউকেই বুঝতে দেননি, কতটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার মনের ওপর দিয়ে। মা, ছেলেমেয়ে ও শাশুড়ির অসুস্থতার খবর বাইরেও প্রচার করতে চাননি তিনি। বিষয়টি হাসপাতাল সূত্রে জানাজানি হওয়ার পর সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিশ্বের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডার বিস্মিত হন। তবে ফোনালাপের একপর্যায়ে মনে হলো কিছুটা অভিমানের মেঘও জমেছে সাকিবের মনের আকাশে। ক্রিকেটপাড়ার গুঞ্জন, ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের উপেক্ষা ভালো লাগেনি তার। ভেতরে আরও কিছু অজানা কারণ থাকলেও থাকতে পারে, যেটা সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডে খেলতে তাড়িত করছে তাকে।
ঢাকায় সাকিবের পরিবার একাকীত্ব বোধ করার কথা নয়। বিসিবি থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে তাদের। গতকাল দেশে ফেরার বিমানের টিকিটও কাটা হয়েছিল। বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বিকেলে মিডিয়াকে জানান, সাকিব দেশে ফিরছেন। পরক্ষণেই জোহানেসবার্গ থেকে জানানো হয়, তিনি ফিরছেন না। কাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে খেলবেন। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন ভিডিও বার্তায় বিষয়টি পরিস্কার করেন, 'এটা সত্যি কথা, তার যাওয়ার কথা ছিল। বিসিবি থেকে জালাল (ইউনুস) ভাই হয়তো বলেও দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর সাকিব সিদ্ধান্ত নেয় যে যাবে না। খেলেই যাবে। এখন সাকিব যাচ্ছে না। হয়তো বা তৃতীয় ওয়ানডে খেলেই যাওয়ার একটা চিন্তা-ভাবনা করবে।'
যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাকিব বিচক্ষণ। গত ১৫ বছরে এতটা দ্বিধাগ্রস্ত হতে দেখা যায়নি তাকে। এবার যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেছেন তিনি। খুব বেশি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। খালেদ মাহমুদ সুজনেরও মনে হচ্ছে তাই, 'একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি আছে, ওর (সাকিব) ফ্যামিলির অনেকে অসুস্থ। যে কারণে ওর মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। বার বার ঢাকায় ওর পরিবার সঙ্গে কথা হচ্ছে দেশে যাওয়ার ব্যাপারে। আমাদের ওর জন্য প্রায়ই টিকিট বুক করতে হচ্ছে। তবে সাকিবই যাবে না। ও খেলে যাবে। হি ইজ প্লেইং।'
এই পরিস্থিতিতেও কেন খেলতে চান সাকিব সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, "পারিবারিক বিষয়টি তো সব সময়ই যে কোনো মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওর (সাকিব) জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে ও পুরোপুরিভাবে খেলতে চায়। প্রথম থেকেই খেলার ব্যাপারে 'হি ওয়াজ ভেরি ইনটেন্স, সিরিয়াস।' প্রথম ম্যাচে তো ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলো, দ্বিতীয় ম্যাচে রান করেনি, তবে দারুণ বোলিং করেছে। সে খেলতে চায়, সে চায় এই সিরিজটা জিততে, নিজে ভালো করতে।"
সাকিবের অনেক কিছুই সমর্থকদের অপছন্দ। নানা ঘটনায় সমালোচিত হতে হয় তাকে। তবে ক্রিকেটের প্রতি সাকিবের নিবেদন নিয়ে কখনোই কোনো প্রশ্ন ছিল না। শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকলে দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেন। এ মুহূর্তে যেমন দিতে চাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। টিম ডিরেক্টরের মতে, 'ও জানে যে, ও ছাড়া আমাদের জন্য কতটা কঠিন কম্বিনেশন ঠিক করা। খুশির কথা হচ্ছে, সাকিব এই সিরিজের জন্য হয়তো স্যাক্রিফায়েস করছে। যেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো সংবাদ। আশা করি, ওর বাসায় সব ঠিকঠাক থাকবে। আশা করি, তৃতীয় ওয়ানডে সে খেলবে, ম্যাচটা আমরা জিতব, সিরিজ জিতব। এরপর হয়তো সিদ্ধান্ত নেবে, কখন যাবে না যাবে।'
প্রথম থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলতে চাচ্ছিলেন না সাকিব। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলায় খেলতে রাজি হন। পারিবারিক কারণে শেষ পর্যন্ত টেস্ট না খেলেই দেশে ফিরতে হবে তাকে। পাঁড় নিন্দুকও এতে দোষ খুঁজবে না। তাই ভেতরে যা-ই থাক, সাকিব যে মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা সত্যিই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দেশের ক্রিকেটে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com