তবু আলোচনায় মেয়র আরিফ

এক সপ্তাহ আগেই নেতৃত্বে কারা আসছেন, প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২২ । ০২:১০ | প্রিন্ট সংস্করণ

চয়ন চৌধুরী, সিলেট

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ঠিক হবে কারা আসছেন সিলেট জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্বে। গতকাল সোমবার জেলার আওতাধীন ১৩ উপজেলা ও পাঁচ পৌর বিএনপির কমিটির এক হাজার ৮১৮ জন কাউন্সিলরকে ছবিযুক্ত ভোটার কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এদের হাতে ভাগ্য নির্ধারণ হবে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের। ক'দিন ধরে তিন পদে ৯ জন প্রার্থী ভোটারদের পক্ষে আনতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। সব মিলিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে সম্মেলনের পর দুপুরে নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠের কাউন্সিলকে ঘিরে প্রস্তুতির কার্পণ্য নেই। তার পরও ভোটযুদ্ধের উত্তেজনায় কোথায় যেন ছেদ পড়ছে।

'হাইকমান্ডের নির্দেশে' সভাপতি পদে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার কাউন্সিলকে ঘিরে উত্তেজনায় পানি ঢেলে দিয়েছে। বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফের অনুসারীদের ভোট এখন কার বাক্সে পড়বে, তা নিয়েই আলোচনা। সাত দিন আগে হাইকমান্ডের নির্দেশে মেয়র আরিফের ভোটযুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তৃণমূলের নেতারাও বাস্তব পরিণতি বুঝে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক নেতা। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, মেয়র আরিফ প্রার্থী হওয়ার ফলে নির্বাচনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল; সরে দাঁড়ানোর ফলে তা আর নেই। এক সপ্তাহ আগেই নেতৃত্বে কারা আসছেন, প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময় থেকে সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে দুই মেরুর সৃষ্টি হয়। একদিকে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনের দলীয় প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও অন্যদিকে মেয়র আরিফ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে মেয়র আরিফের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে আছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এই সুযোগে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বড় অংশের নেতৃত্ব চলে যায় তুলনামূলকভাবে রাজনীতিতে নবীন মুক্তাদিরের হাতে। আরিফের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে মুক্তাদিরের হাত থাকার কথাও ব্যাপকভাবে চাউর আছে।

গত ২১ মার্চ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বহু কাঙ্ক্ষিত সম্মেলন ও কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। এতে সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর পাশাপাশি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন মেয়র আরিফ। ছাত্রদল থেকে শুরু করে বিএনপি- জীবনের পুরো সময় মহানগরে রাজনীতি করেছেন তিনি। এবার হঠাৎ জেলার সভাপতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে নিজের আধিপত্য বিস্তৃত করতে চেয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সঙ্গে দলীয় আধিপত্য নিয়ে তার প্রতিযোগিতা 'ওপেন সিক্রেট'।

তবে শেষ বেলায় সম্মেলন ও কাউন্সিল স্থগিত হওয়ার পর আধিপত্যের লড়াই থেকে মেয়র আরিফকে সরে দাঁড়াতে হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় দফা যাচাই-বাছাইয়ের সময় সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কামরুল হাসান শাহীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী শাকিল মোর্শেদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এই দু'জনের কেউ কোনো উপজেলা বা পৌর বিএনপির কমিটিতে না থাকায় কাউন্সিলে ভোটার হতে পারবেন না। এই নিয়মের জন্য তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আব্দুল গাফফার। এ ছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকায় সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুল আহাদ খান জামালের প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়।

এই অবস্থায় কাউন্সিলে সভাপতি পদে সাবেক সভাপতি শামীম ও কাইয়ুমের মধ্যে লড়াই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তবে মেয়র আরিফের অনুসারী ভোটারদের ভোট নিয়ে শেষ বেলায় দুই প্রার্থীর মধ্যে রশি টানাটানি চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির এক নেতা। ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ কাউন্সিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত দিলদার হোসেন সেলিমকে পরাজিত করে সভাপতি হয়েছিলেন শামীম। এবারে সেই তুলনায় তিনি সহজ প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে পড়েছেন বলে মনে করেন শামীমের অনুসারীরা। যদিও কাইয়ুমের অনুসারীরা দাবি করেছেন, বিগত দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থতার জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্ব চাইছেন।

সর্বশেষ ছয় বছর আগে জেলা বিএনপির কাউন্সিলে আলী আহমদ সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার আলী আহমদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমরান। এই দু'জনের পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আ ফ ম কামাল। তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন, প্রচারে আলী ও এমরান বাকি দু'জনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এম মুজিবুর রহমান মুজিব, লোকমান আহমদ ও মো. শামীম আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গতকাল দুপুরে নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারে জেলা প্রেস ক্লাবের হলরুমে কাউন্সিলকে সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে ছবি সংবলিত কার্ড বিতরণ করে জেলা বিএনপি। এ সময় বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা জানান, প্রথমে সভাপতি পদে তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা করেছিলেন। এখন আর সেই উত্তেজনা নেই উল্লেখ করে সদর উপজেলার একজন নেতা বলেন, হাইকমান্ডের পছন্দের বিষয়টি অনেকের কাছেই পরিস্কার হয়ে গেছে। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে কাউন্সিলরদের অনেকে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার এক নেতা। সাধারণ সম্পাদক পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের প্রায় সবাই।





© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com