ভোজ্যতেল সরবরাহ কমার ব্যাখ্যা চেয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২২ । ১৯:৫১ | আপডেট: ০২ জুলাই ২২ । ২০:১৯

সমকাল প্রতিবেদক

দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কমপক্ষে চারটি কোম্পানির কাছে সরবরাহ কেন কমেছে তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 

কোম্পানিগুলোকে ৩০ মার্চ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। পাশাপাশি আমদানি শুল্ক কমানোর পর কি পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে তার তথ্য জানতে চেয়েছে কোম্পানিগুলোর কাছে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, অধিদপ্তরের মনিটরিং টিম কয়েকটি ভোজ্যতেল কোম্পানির কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। তাতে দেখা গেছে, কোম্পানিগুলোর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে সরবরাহ কম। কিন্তু কোম্পানিতে যথেষ্ট ভোজ্যতেল রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলোর জবাব থেকে কম সরবরাহের কারণ জানা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৭ মার্চ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং টিম নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের কারখানা পরিদর্শন করে। পরিদর্শন দল দেখেছে ওই কোম্পানি ফেব্রুয়ারি মাসে ১৪ হাজার ৩৮ টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছে। আর মার্চ মাসে সরবরাহ করেছে ৮ হাজার ২৬৪ টন। আবার একই টিম ২৮ মার্চ টি কে গ্রুপের নারায়ণগঞ্জের কারখানা পরিদর্শন করেছে। 

টি কে গ্রুপ ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭ হাজার ৩৭১ টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করলেও মার্চ মাসে করেছে ২১ হাজার ৯১৯ টন। 

আর মঙ্গলবার অধিদপ্তরের মনিটরিং টিম বসুন্ধরা গ্রুপের কারখানা পরিদর্শন করেছে। 

নতুন ভোজ্যতেলের ব্যবসায় যুক্ত হওয়া এই গ্রুপ ফেব্রুয়ারি মাসে বাজার ১৭ হাজার টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছে। আর মার্চ মাসে করেছে ১৩ হাজার ৫২ টন। আরেক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী কোম্পানি এস আলমের কারখানাতেও ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে কম সরবরাহের তথ্য পেয়েছে পরিদর্শন টিম।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। আর খোলা তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছিল প্রতি লিটার ১৪৩ টাকা। ওই সময় পাম তেলের প্রতি লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৩৩ টাকা। 

এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ব্যবসায়ীরা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাড়তি দামের প্রস্তাবে সায় দেয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। 

খোলা সয়াবিন ও পাম তেল অনেক বাজারে পাওয়া যায়নি। বোতলজাত তেলও অনেক জায়গায় কম পাওয়া গেছে। আবার কোনো কোনো কোম্পানি ভোজ্যতেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত দিয়ে বেচাকেনা করে। কোনো কোনো বাজারে সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়। 

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার প্রথমে সয়াবিন ও পাম তেলের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে থাকা ১৫ শতাংশ ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে থাকা ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে সরকার। সবশেষে গত ১৫ মার্চ আমদানি পর্যায়ে থাকা ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা পাবেন।

সূত্র জানায়, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ পরিস্থিতির সুবিধা নিতে চেষ্টা করেছে। সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর এ ধরনের আচরণে সরকার ক্ষুদ্ধ। কারণ রমজান আসন্ন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এরকম সময়ে সরকার কোম্পানিগুলোর থেকে সহযোগিতা আশা করেছে। 

কিন্তু পরিশোধনকারী কোম্পানি তা না করে বেআইনিভাবে পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এজন্য যেসব কোম্পানি সরবরাহ কমিয়েছে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে সরকার শুল্ক সুবিধা দেওয়ার পর কোম্পানিগুলোর আমদানির তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আগামীতে ভোজ্যতেলের দাম ও সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে।


© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com