ডরোথি কাউন্টস

প্রচল ভাঙার একজন

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২২ । ১৩:০১ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাহফুজুর রহমান মানিক

স্কুলে শেতাঙ্গ ছাত্রদের দ্বার নিগ্রহের শিকার হতে হয় ডরোথি কাউন্টসকে। ২০০৮ সালে হার্ডিং হাইস্কুল ভুল স্বীকারের পর তাকে অনরারি ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ডরোথি কাউন্টস ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী। ১৯৫৬ সালের কথা, ডরোথি কাউন্টস সমাজের সাদা-কালোর বৈষম্য কমানোর অংশ হিসেবেই তিনি ভর্তি হলেন চার্লট এলাকার হ্যারি হার্ডিং হাইস্কুলে। মাত্র চার দিন তিনি টিকতে পারলেন। ডরোথি যখন প্রথমদিন স্কুলে যান, তাকে পাথর ছুড়ে মারা হয়, থু থু নিক্ষেপ করা হয়, তার পিঠে ঘুষি মারা হয়। এরই মধ্যে তার পরিবার অসংখ্য হুমকি পায়, ডরোথির স্কুলের জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলা হয়, তার লকার ভেঙে ফেলা হয়, এমনকি তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ডরোথিকে তার মা-বাবা নিরাপত্তার কথা ভেবে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। বলাবাহুল্য, সে সময় তার সঙ্গে থাকা আরও তিন কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীকেও স্কুল ত্যাগ করতে হয়। বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া ডরোথি কাউন্টসের জীবনে ১৫তম বছরে যখন এমন ঘটনা ঘটছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য জায়গার অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না।

সে সময় আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের লিটল রক হাইস্কুলেও নয়জন কৃষ্ণাঙ্গ ভর্তি হন। তবে সেটাও এক আদালতের নির্দেশে, সে সময় নয়জনের জন্য এক বছর ধরে কয়েক হাজার আমেরিকান সৈন্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। অথচ ওই সময় ডরোথি কাউন্টস হাইস্কুলে একা ভর্তি হলেও নিরাপত্তা পাননি। মিডিয়ার নজর মনোযোগ ছিল না বললেই চলে।

যা হোক, হার্ডিং হাইস্কুলের ঘটনায় দমে যাননি ডরোথি কাউন্টস কিংবা তার পরিবার। কৃষ্ণাঙ্গ হলেও মেয়েটির পড়াশোনা চালিয়ে নিতে কাউন্টসকে পাঠানো হয় ফিলাডেলফিয়ায়। সেখানে তাকে এক একীভূত বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানের পাঠ চুকিয়ে তিনি ১৯৬১ সালে ফিরে আসেন সেই চার্লটে। নর্থ ক্যারোলাইনার চার্লটের জন স্মিথ ইউনিভার্সিটিতে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে সেখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হন। ততদিনে অবস্থারও উন্নতি হয়।

পেশাগত জীবনে এসে ডরোথি কাউন্টস প্রথমে শিশুসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি গির্জাকেন্দ্রিক এক শিশু যত্ন কেন্দ্রে কাজ করেন। যেখানে অল্প আয়ের পরিবারের শিশুরা আসত। পাশাপাশি কাজ করতেন চার্লটের একটি অলাভজনক সংগঠন চাইল্ডকেয়ার রিসোর্সে। যে সংগঠনটি শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে অ্যাডভোকেসির কাজ করত।

তবে কাউন্টস কিন্তু ফিরেছেন সেই হার্ডিং হাইস্কুলে, যে স্কুল তিনি নিরাপত্তার জন্য ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এবার ফিরেছেন বীরবেশে। ওই ঘটনার ৫২ বছর পর স্কুল কর্তৃপক্ষ হয়তো তাদের ভুল বোঝে। আসলে দোষ তো তখন কেবল স্কুলেরই ছিল না।

সেখানকার সমাজই ছিল কাউন্টসের বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালে হার্ডিং হাইস্কুল ডরোথি কাউন্টসকে অনরারি ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করে। ২০১০ সালে তার কাছে বলা চলে জাতীয়ভাবে ক্ষমাও চাওয়া হয়, নেতৃস্থানীয়দের এক শ্বেতাঙ্গ যে কি-না ১৯৫৭ সালে তাকে অত্যাচার করে, তিনি কাউন্টসের কাছে ক্ষমা চান।

শুধু তাই নয়, ২০১০ সালের শেষ দিকে হার্ডিং হাইস্কুল ডরোথি কাউন্টসের সম্মানে লাইব্রেরির নামকরণ করে। কালো মানুষের প্রেরণা হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন ডরোথি কাউন্টস।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com