সহে না যানজটের যাতনা

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২২ । ০১:১৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

মো. গনি মিয়া বাবুল

১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে দুই কোটির বেশি মানুষ ঢাকা মহানগরীতে বসবাস করে। এ নগরীতে গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ফলে কর্মমুখী মানুষকে তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয়। রোজায় এ যানজট আরও তীব্র হয়। কারণ, এ সময় অনেকে ঈদের শপিংয়ে বের হন। ঈদকে সামনে রেখে হকারদের ফুটপাতের পাশাপাশি কোনো কোনো স্থানে সড়কের অংশবিশেষ দখল করে পসরা সাজিয়ে বেচাকেনাও যানজটের আরেকটি কারণ। এতে যেমন পথচারীর চলাচল ব্যাহত হয়। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীতে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলছে। সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এটিকে প্রসববেদনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমরাও বিশ্বাস করি এ সাময়িক সমস্যা কেটে যাবে। ওয়াসা পানির লাইন মেরামতের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে। ফলে অনেক সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এসব সাময়িক সমস্যা সময়ের ব্যবধানে সেরে যাবে। উন্নয়ন কাজের জন্য এ সাময়িক কষ্ট নগরবাসী মেনে নিয়েছে।

কিন্তু ঢাকা মহানগরীর যানজট একটি স্থায়ী সমস্যা। এর সমাধান কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে আরও প্রযুক্তিগত দিক থেকে ভাবতে হবে। এ শহরে বেশ কয়েকটা উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও সুফল মিলেছে। মেট্রোরেল চালু হলে হয়তো আরও সুফল মিলবে। কিন্তু এখনও পুরানা পল্টন মোড় থেকে ফার্মগেট যেতে ছুটির দিন বাদে অন্যদিন সকাল ৯টা থেকে রাত অন্তত ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ শুক্রবার দিন এ পথ যেতে সময় লাগে ১০-১৫ মিনিট।

মহানগরীর যানজটের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা সবার কাছে এক আতঙ্কের নাম। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হচ্ছে। সড়কের মড়কে খালি হচ্ছে হাজারো মায়ের কোল। সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমান সময়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, যা বেদনাদায়ক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। সরকারের একার পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংগঠন, এনজিও, ছাত্রসমাজ, যাত্রী, চালক, পথচারীসহ সকলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ সরকারই নিতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার নতুন আইন করেছে। এই আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের আরও কঠোর হওয়া উচিত। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সর্বপ্রথম সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো খতিয়ে বের করা আবশ্যক।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো হচ্ছে- সচেতনতার অভাব, অদক্ষ ও অশিক্ষিত চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা, দুর্নীতি, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার, অপরিকল্পিত ও ভঙ্গুর সড়ক, ওভারক্রসিং, অতিরিক্ত গতি, ওভারব্রিজের স্বল্পতা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি, অনিয়ম, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালক এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানো। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংবাদমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যানজট নিরসনে বিজ্ঞানসম্মত সমাধান বের করার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুগ্ম মহাসচিব, নিরাপদ সড়ক চাই

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com