
কেনাকাটা
উৎসবের বাজারে খুশির বন্যা
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২২ । ০২:০৯ | প্রিন্ট সংস্করণ
তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সানমার শপিং সেন্টারে ঈদের পোশাক পছন্দ করছেন এক তরুণী - সমকাল
ঈদ মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন কাপড়। একই আনন্দ দোলা দিয়ে যায়, বাঙালির সর্বজনীন উৎসব 'পহেলা বৈশাখও'। কিন্তু পর পর দুই বছর সেই আনন্দকে মাটি করে দিয়েছিল প্রাণঘাতী করোনা। তবে এবার করোনার ভয়াবহতা কমে আসায় এই দুই উৎসবকে ঘিরে অন্যরকম এক 'উৎসবের বাজারে' পরিণত হয়েছে মার্কেটগুলো। ক্রেতাদের সরগরম আনাগোনায় মুখে হাসি ফিরছে ব্যবসায়ীদেরও।
ঈদ আর পহেলা বৈশাখ- এই দুই উৎসব সামনে রেখে এবার চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন। হাল ফ্যাশনের কাপড়ে সাজিয়েছেন দোকানপাট। দুই বছর মনের মতো করে কেনাকাটা করতে না পারার আক্ষেপ ঘোচাতে এবার মার্কেটগুলোতে আগেভাগেই অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। তাই আগাম বেচাকেনায় সরগরম মার্কেটগুলো।
আগামী ১৪ এপ্রিল বৃস্পতিবার বাঙালির সর্বজনীন উৎসব 'পহেলা বৈশাখ' বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হবে। এর পরই মের প্রথম সপ্তাহে উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার প্রভাব কিছুটা কম থাকায় এবার শীত মৌসুমে শীতের কাপড় বেশ বেচাকেনা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন আরও স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে এবারের ঈদ ও পহেলা বৈশাখে জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে। দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন উদ্যমে দোকান সাজিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বিনিয়োগ করেছেন কোটি কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোয় দিনে দিনে ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, জুতা, স্যান্ডেল ও গহনাসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানে এবার আগাম বেচাকেনা বেড়েছে। সাধারণ মার্কেটগুলোতে ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা বেশি হলেও ফ্যাশন হাউসগুলোতে তুলনামূলক পহেলা বৈশাখের কাপড়-চোপড়ের সমারোহ ও বিক্রি দুটোই বেশি। নববর্ষের প্রথম দিনে আনন্দ করার জন্য রঙ-বেরঙের পাঞ্জাবি, ফতোয়া, থ্রিপিসের চাহিদা বেশি। তরুণরাই এসব কাপড়ের প্রধান ক্রেতা। গ্রীষ্ফ্মকাল হওয়ায় সুতির তৈরি কাপড় বেচাকেনা হচ্ছে চোখে পড়ার মতো।
গত শনিবার দুপুরের দিকে নগরীর সানমার শপিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ভর দুপুরেও মার্কেটভর্তি ক্রেতা আর ক্রেতা। এসব ক্রেতাদের বেশিরভাগই তরুণ শ্রেণির। প্রায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও থ্রিপিস ও পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে তুলনামূলক বেশি ক্রেতা চোখে পড়েছে। ক্রেতাদের নজর কাড়তে 'ডলের' গায়ে পরিয়ে রাখা হয়েছে হাল ফ্যাশনের সব কাপড়-চোপড়। এর মধ্যে এবার ঈদের কাপড়ে পাকিস্তানের 'গারারা' ও ইন্ডিয়ার 'পেপলন'সহ আরও কয়েক ধরনের থ্রিপিস তরুণীদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। 'সাজ' নামে একটি দোকানের সেলসম্যান আল আমিন জানালেন, এবারের ঈদ সামনে রেখে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের 'গাররা' ও 'শারারা' নামে থ্রিপিস ধরনের পোশাক তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইন্ডিয়ার কিছু পার্টি ফ্রক বেশ চলছে। পাশাপাশি দেশে তৈরি কাপড়ের চাহিদাও রয়েছে। মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে একই মার্কেটের 'ওমেনস ওয়ার্ল্ড' নামে আরেকটি দোকানের সেলসম্যান শুভ জানালেন, রমজানের আগে শবেবরাতের পর থেকে মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা একটু একটু বাড়তে থাকে। তবে প্রথম রমজান থেকে সেটা অনেকটাই বেড়ে যায়। এবার যেভাবে আগেভাগে ক্রেতা বাড়ছে তাতে ১০ রমজান থেকে রাতজাগার পালা শুরু হয়ে যাবে।
ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা গেছে নগরীর নিউমার্কেট, ইউনেস্কো সেন্টার ও আমিন সেন্টারসহ আরও কয়েকটি মার্কেটে। আমিন সেন্টারের ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. শাহিদ আলী আলাপকালে সমকালকে বলেন, 'করোনায় মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। তার পরও ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে। তাই এবার আমরা মার্কেটের সব ব্যবসায়ী মিলে কম লাভ, বেশি বিক্রি- এই বিষয়টিকে জোর দিচ্ছি। সব ক্রেতাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে এবার আমরা র্যাফল ড্র-ও করছি না। আশা করি, আমিন সেন্টারে অন্তত কোনো ক্রেতা পণ্য কিনে ঠকবেন না।
এদিকে শুধু মার্কেটই নয়, বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোতেও সমানে বেচাকেনা হচ্ছে। কয়েকটি ফ্যাশন হাউসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঈদের ও পহেলা বৈশাখের কাপড় তৈরির ক্ষেত্রে সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্ফ্মকাল হওয়ায় সুতির কাপড়ের মধ্যে তাঁতের কাপড়, খাদি, জামদানি, মসলিন কাপড় চলছেও বেশ।
চট্টগ্রামের ডিজাইনার্স ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা রওশন আরা চৌধুরী বলেন, ফ্যাশন হাউসগুলোতে সারা বছরই কমবেশি বেচাকেনা হলেও ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে ঘিরে নতুন নতুন ডিজাইনের কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করা হয়। এজন্য এই দুই উৎসবকে সামনে রেখে নতুন বিনিয়োগ করে ফ্যাশন হাউসগুলো। কিন্তু করোনার কারণে পর পর দুটি বছর কোনো ব্যবসা না হওয়ায় এ খাতের ব্যবসায়ীদের বেশ ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় আশার আলো দেখছে ফ্যাশন হাউসগুলো।
ফ্যাশন হাউস 'শৈল্পিকের' ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচএম ইলিয়াস জানিয়েছেন, করোনার ভয়াবহতা কেটে যাওয়ায় শৈল্পিকসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ঈদ ও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে নতুন উদ্যমে শুরু করেছে। বিনিয়োগ করেছে কোটি কোটি টাকা। পরিস্থিতি যেভাবে আছে, সেভাবে থাকলে এবার ভালো কিছু হবে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com