আদালত অঙ্গনে দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না: প্রধান বিচারপতি

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২২ । ২১:২২ | আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২২ । ০১:১১

সমকাল প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

‘আদালত অঙ্গনে কোনোরকম দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না’- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘একজনের দুর্নীতির কারণে পুরো বিচার বিভাগের বদনাম হয়ে যায়। আমরা তাদের কাউকে কাউকে চিনি। এগুলো বরদাশত করা হবে না। এটা রোধ করতে হবে। নয়তো সাধারণ মানুষের অভিশাপে আমরা শেষ হয়ে যাব।’

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। ‘সুপ্রিম কোর্টে সরকারি আইন সহায়তা কাযক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষে বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার ও সেকশন সুপারদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আদালত অঙ্গনে সবাই সৎ থাকার চেষ্টা করার পরেও কিছু কিছু (কর্মকর্তা-কর্মচারী) ভালো থাকেন না। কিন্তু আমরা মানুষের কাছ থেকে সব সময় নিচ্ছি, কিন্তু তাদেরকেও তো সেবা দিতে হবে। সেবাটা নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে আইনজীবীরাও অনেকে ভালো আছেন, কিন্তু তাদেরও অনেকে বিচারপ্রার্থীর প্রতি টাকাপয়সার জন্য চাপ দিয়ে থাকেন। তাদেরও ভাবতে হবে আমরা বিচারপ্রার্থীদের কতটুকু দিচ্ছিছ, সেটা দেখতে হবে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, জনগণের করের টাকায় আমরা দায়িত্ব পালন করছি, তাই আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি। প্রায়শই আদালতে (সুপ্রিম কোর্ট) সেকশনগুলোতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন হচ্ছে না বলে অভিযোগ আসে। এসব ব্যাপারে অন্তর দিয়ে বুঝতে হবে। মানুষের কষ্ট যদি অনুভব করা যায়, তাহলে তাদের জন্য কিছু করার তাগিদ পাওয়া যায়। আপনারা সেই কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করেন।

সরকারি খরচে বিনামূল্যের আইনি সেবা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, সুন্দরবন বা ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হয়তো এক টুকরো জমি রক্ষার জন্য অসহায় মানুষ সুপ্রিম কোর্টে আসে। আইনজীবীদের কাছে আসে, আপনাদের কাছে আসে। অনেক ক্ষেত্রে আইনজীবীদের কাছে তেমন সহযোগিতা পান না তারা। অনেক আইনজীবী খারাপ আচরণ করেন, টাকা-পয়সা চান। এসব ব্যাপারে লিগ্যাল এইডকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রধান বিচারপতি এ সময় বিচারকসহ প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহি করতে হবে বলেও মনে করিয়ে দেন।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল মো. বজলুর রহমান। অনুষ্ঠানে আমাদের প্রত্যাশা শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল।

আদালতের অসাধু কর্মকর্তাদের দিকে ইঙ্গিত করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আদালতে কজলিস্টে মামলা কীভাবে ওঠানামা করে এখানে সবাই জানেন। আপনারা এগুলো করবেন না। সুনামের সঙ্গে সততার সঙ্গে কাজগুলো করবেন। বিচারকদেরও লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তিতে দায়িত্বশীল হতে হবে, তারা না চাইলে শুধু আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

বিচারপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, মানুষের জন্য মানুষের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মানুষের জন্য কাজ করা। সেলক্ষ্যে সবাইকে অসহায় মানুষকে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে আসতে হবে।

বিচাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতের মান মর্যাদা এখনও জনগণের কাছে অক্ষুণ্ন হয়ে আছে। বিচারপ্রার্থীসহ দেশবাসী আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এজন্য আদালত এবং আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে, ন্যায়নিষ্টভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলেই অসহায় মানুষের জন্য লিগ্যাল এইড সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com