
ছোট অনিয়ম ধরতেই বেশি তৎপর বিএসইসি
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২২ । ০৯:৩৭ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২২ । ০৯:৩৭
সমকাল প্রতিবেদক

প্রতীকী ছবি
শেয়ারবাজার সংক্রান্ত ছোটখাটো অনিয়ম ধরতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যত তৎপর, শেয়ার কারসাজির মতো গুরুতর অপরাধ শনাক্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তত তৎপর নয়।
গত মার্চে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মোট ৯২টি অনিয়মের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন) নিয়েছে বলে নিজস্ব ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করেছে। বিএসইসির প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত মার্চের এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনগুলোর মধ্যে অপরাধ গুরুতর নয় বলে ৯১টি ঘটনায় সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুধু সতর্ক করেছে। একটিমাত্র ঘটনায় (বিএসইসির নিয়োজিত বিশেষ নিরীক্ষককে তথ্য দিয়ে সহায়তা না করার অপরাধে) তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাকটিভ ফাইন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজনকে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
গত মার্চে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ব্রোকারেজ হাউসই বেশি। এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রাহকদের (শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী) থেকে অনুমোদিত সীমার তুলনায় বেশি নগদ জমা নেওয়া, নন-মার্জিন অ্যাকাউন্টে বা নন-মার্জিন শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ দেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পরিচালকদের মার্জিন ঋণ দেওয়ার ঘটনাই বেশি। তাছাড়া এসব ঘটনার সিংহভাগই বহু বছর আগের।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চে যে ৯২টি অনিয়মের কারণে সতর্ক করা হয়েছে, তার মধ্যে ২০টি ২০১৩ সালের। এ ছাড়া ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫৩টি এবং ২০২১ ও ২০২২ সালের ১৮টি। চলতি বছরে প্রথম তিন মাসে বিএসইসি মোট ২৪৫টি অপরাধের নিষ্পত্তি করেছে। সে ক্ষেত্রেও একই চিত্র মিলেছে। এর মধ্যে ২৩৮টি ঘটনায় সংশ্নিষ্টদের সতর্ক করেছে বিএসইসি।
এসব অনিয়মের মধ্যে অ্যাকটিভ ফাইন ছাড়া অন্য দুটি ঘটনায় চার ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে মোট ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত আমান কটন ফাইব্রস কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডিসহ চার পরিচালককে তিন কোটি টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা এবং বহির্নিরীক্ষক আতা খান অ্যান্ড কোংকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে সংস্থাটি। কিন্তু সম্প্রতি ওই আদেশ বাতিল হয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমীন সমকালকে বলেন, গত দুই বছরে বা এখন শেয়ার নিয়ে যে কারসাজি হচ্ছে, কমিশন তা আমলেই নিচ্ছে না। এখন কোনো ব্রোকারেজ তার গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫ লাখর বেশি নগদ জমা নিয়ে যতটা আইনের ব্যত্যয় করেছে, তার থেকে শেয়ার কারসাজি কী কম গুরুত্বপূর্ণ। নন-মার্জিন শেয়ারে ঋণ দেওয়ায় সতর্ক করে কী এ বাজারের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যাবে। বড় অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর কমিশনের হাতে সময় থাকলে তবেই এসব ছোটখাটো বিষয়ে সময় দেওয়া উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কমিশন ছোটখাটো অনিয়ম ধরতে যত সময় ব্যয় করে, তার ১ শতাংশও যদি শেয়ার কারসাজি ও আইপিও অনিয়ম ধরতে ব্যয় করত, তবে এ বাজারের চিত্র বদলে যেত। শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্নেষকদেরও একই মত।
জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, বাজারের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সমসাময়িক ও আলোচিত বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, সব অনিয়মই অনিয়ম। সব অনিয়মের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, সব অনিয়মের মাত্রা এক নয়। যখন ছোট অপরাধে কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু বড় কারসাজির অপরাধীকে কোনো প্রশ্নের মুখেও ফেলা হয় না- তখন সে 'আশকারা' পায়। এতে বাজারে ভুল বার্তা যায়, কারসাজি বেড়ে যায়।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, সব ধরনের অনিয়মের ব্যবস্থা নেওয়া কমিশনের কাজ। যে কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্টদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পুরো সুযোগ দিতে হয়। এ জন্য অনেক সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে দেরি হলে বলা যাবে না যে কমিশন অনিয়ম ধরতে তৎপর নয়।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com