
হাওরের বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি: তদন্ত প্রতিবেদন ‘২-৩ দিনের মধ্যে’
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২২ । ১৬:৫৫ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২২ । ১৬:৫৫
সমকাল প্রতিবেদক

সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের নানা এলাকায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দু’তিন দিনের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হাওর পরিদর্শন শেষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওড়ে ৭২৭টি প্রকল্পে ১২২ কোটি টাকায় ৫৩৬ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ হয়েছে। এ বাঁধ নির্মাণকাজের সময়সীমা ছিল ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সময় বাড়িয়েও বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি।
গত ২ এপ্রিল থেকে উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরে সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল।
ফসল রক্ষায় টানা দিনরাত পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও হাওরপাড়ের কৃষকরা।
অভিযোগ রয়েছে- হাওর অঞ্চলের বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। আর এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালীরা জড়িত রয়েছেন। ফলে বাঁধ সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকার অপচয় ও লুটপাট হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের একাধিক মন্ত্রী হাওর এলাকা পরির্দশন করেন।
পরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলে পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কর্মচারীর বাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । শত শত শ্রমিকও প্রতিনিয়ত কাজ করছে। বাঁধের গোড়ায় মাটি ভর্তি বস্তাও ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ রক্ষায়ও কাজ করা হচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে । আগামী বোরো মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার দেয়া হবে। এছাড়া, সারা বছর ধরে ভিজিএফসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে, যাতে খাদ্যের জন্য কেউ কষ্ট না করে। কৃষকবান্ধব সরকার হাওর অঞ্চলে ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার কৃষকদের দিচ্ছে যাতে করে উৎপাদন খরচ কম লাগে।’
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ১৭টি ছোট–বড় হাওর ও বিলের ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। প্রথম দফা পাহাড়ি ঢলের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার দ্বিতীয় দফায় ঢল নামতে শুরু করেছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় ধান কাটা হয়েছে ৮৪ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমির। যা মোট ধানের ২৪ ভাগ। এবার হাওর ধান চাষাবাদ হয়েছে দুই লাখ ২২ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ১৪ লাখ মেট্রিক টন।
সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের বলা হচ্ছে, ধান ৮০ ভাগ পাকলেই তা কেটে ফেলার জন্য।
বৃহস্পতিবার প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ( উন্নয়ন) মিজানুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক(পূর্ব) মাহবুবর রহমান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) এস এম শহিদুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com