
৫৫২৭ মৃত্যুফাঁদ সাত মাসেও বন্ধ হয়নি
চট্টগ্রামের খাল-নালা
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২২ । ০৩:০৬ | প্রিন্ট সংস্করণ
আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম

একের পর এক দুর্ঘটনার পরও চট্টগ্রামের খাল-নালা রয়েছে এ রকম অরক্ষিত। গত মঙ্গলবার রাতেও এই খালে পড়ে আহত হয়েছেন এক পোশাককর্মী। নগরের হাজী চাঁন মিয়া সড়কের মির্জাখালের ছবি - সমকাল
খাল-নালায় পড়ে হতাহতের ঘটনায় সাত মাস আগে চিহ্নিত করা হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাড়ে পাঁচ হাজার 'মৃত্যুফাঁদ'। কথা ছিল অরক্ষিত স্থানগুলোয় নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে করা হবে সুরক্ষিত ও নিরাপদ। কিন্তু তা হয়নি। ফলে খাল-নালায় পড়ে প্রাণহানি ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেই চলছে। এত মৃত্যু ও দুর্ঘটনার পরও নির্বিকার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নগরবাসীর নিরাপত্তায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে নগরের হাজী চাঁন মিয়া রোড এলাকায় মির্জাখালে পড়ে আহত হন এক পোশাক শ্রমিক। তাকে খাল থেকে টেনে তোলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
গত বছরের অক্টোবরে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা চিহ্নিত করে সিটি করপোরেশন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি স্থানে। এসব পয়েন্ট আছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। সম্প্রতি এসব খাল-নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ পাঁচজন মারা গেছেন। গত ছয় বছরে মারা গেছেন ৯ জন।
এর মধ্যে একজনের খোঁজ মেলেনি। আহত হয়েছেন অনেকে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বহদ্দারহাট থেকে খতিবের হাট হয়ে শমসেরপাড়া পর্যন্ত বয়ে গেছে মির্জাখাল। এ খালের পাড় বেয়ে গেছে হাজী চাঁন মিয়া রোড। খালটিতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চললেও কোথাও নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। কোনো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও চোখে পড়েনি। গত মঙ্গলবার রাতে খালটির পাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পড়ে যান এক পোশাক শ্রমিক। তার চিৎকার-চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
খালপাড় এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল মোনাফ সমকালকে বলেন, আগে খালের পাড়ে রেলিং ছিল। এখন কাজের জন্য তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। বৃষ্টি হলে সড়ক ও খাল একাকার হয়ে যায়। ঝুঁকি নিয়েই মানুষ চলাচল করে।
সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সড়কের পাশের নালাটি। গত বুধবারও নালাটি উন্মুক্ত দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি হলে নালা আর সড়ক একাকার হয়ে যায়।
নগরের আরাকান সড়কের হারেস শাহ লেইনের খালের পাশেও নালা উন্মুক্ত। এ ছাড়া নগরের বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত চাক্তাইখাল। এ খালের অধিকাংশ অংশই অরক্ষিত। চাক্তাইখালের দুইপাড়ে রয়েছে সড়ক। একটি গেছে বারইপাড়া। এটা দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। অন্যটি গেছে ঘাসিয়াপাড়া। এটা হাঁটাপথ। বৃষ্টি হলেই পথটি ডুবে যায়। খালের দুইপাড়ে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই।
নির্বিকার চসিক-সিডিএ : চট্টগ্রাম নগরে খাল আছে ৫৭টি। খালগুলোর দৈর্ঘ্য ১৬৫ কিলোমিটার। নালা রয়েছে ৯৭২ কিলোমিটার।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এর মধ্যে ৩৬টি খালের ৯৭ কিলোমিটার ও ৩০২ কিলোমিটার নালায় সংস্কার কাজ করছে সিডিএ। বাকি ২১ খালের ৬৮ কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চসিকের। এসব খাল-নালার অধিকাংশই অরক্ষিত। একের পর এক মৃত্যুর পর খোলা নালায় স্ল্যাব ও খালে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার দাবি উঠলেও তা নিয়ে ভ্রূক্ষেপ নেই কারও।
গত ৬ এপ্রিল সিটি করপোরেশন ও সিডিএর সমন্বয় সভায় সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেছিলেন, নালায়-খালে মানুষ পড়েছে। মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে যার যার অধীনে যে নালা খালগুলো আছে, সেগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই কথার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, খোলা খাল-নালায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক খোলা নালায় স্ল্যাব বসানো হয়েছে এবং খালের পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান সমকালকে বলেন, বারবার বলার পরও খাল-নালায় প্রাণহানি রোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না সেবা সংস্থাগুলো। এটা দুঃখজনক। বর্ষার আগেই দুর্ঘটনা রোধে নালাগুলোর ওপর সরানো যায় এমন স্ল্যাব ও খালগুলোর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com