সাক্ষাৎকার

শিগগিরই পুঁজিবাজারে আসছে মেঘনা ব্যাংক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২২ । ১২:৫১ | প্রিন্ট সংস্করণ

ওবায়দুল্লাহ রনি

সোহেল আর কে হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেঘনা ব্যাংক

সমকাল :মেঘনা ব্যাংক কেমন চলছে?

সোহেল আর কে হোসেন :
গত দু'বছর ছিল করোনা অতিমারি। এর মধ্যেও মেঘনা ব্যাংকে একটা রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে। গত বছর আমাদের পরিচালন মুনাফায় ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তারল্য যেন পর্যাপ্ত থাকে, সে দিকে বাড়তি নজর দেওয়ায় ঋণ-আমানত অনুপাত ৭৫ শতাংশে রয়েছে। যেখানে ব্যাংক ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। তিন বছর আগে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। তা কমে গত ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছে। চলতি বছর শেষে এটি ৪ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এভাবে কমাতে কমাতে ২০২৩ সাল শেষে খেলাপি ঋণ আড়াই থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। যদিও করোনা-পরবর্তী খেলাপি ঋণ কমানো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। তবে আমাদের মোট খেলাপি ঋণ যেহেতু ২৩৫ কোটি টাকার নিচে, ফলে এটা বড় কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না। একই সঙ্গে ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করতে কাজ করা

হচ্ছে। মূলধন পর্যাপ্ততার হার যেখানে সাড়ে ১২ শতাংশ হওয়ার কথা, মেঘনা ব্যাংকের আছে ১৭ শতাংশের বেশি।

সমকাল :মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন আপনারা?

সোহেল আর কে হোসেন :
মেঘনা ব্যাংক মূলধন ভিত্তি আরও শক্তিশালী করতে শিগগিরই আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার পরিকল্পনা করছে। এ জন্য শিগগিরই আবেদন করা হবে। প্রথমে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকার শেয়ার ইস্যু করা হবে। এর আগে গত ডিসেম্বরে আমরা

বন্ড ইস্যু করেছিলাম। ইস্যুর মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে ৮৫ শতাংশ বন্ড বিক্রি হয়ে গেছে। এটি একটি ব্যাংকের শক্তিশালী অবস্থানের জানান দেয়। তারল্যের ক্ষেত্রে অন্য যেসব রেশিও রয়েছে, মেঘনা ব্যাংক ভালো অবস্থানে আছে। অতিমারির মধ্যে বিপদে পড়া গ্রাহকদের ব্যবসা পুনরুদ্ধারে সহায়তার কারণে মেঘনা ব্যাংক সম্মানজনক দুটি আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।

সমকাল :ব্যাংক খাতের জন্য কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

সোহেল আর কে হোসেন :
বৈশ্বিক মূল্যস্ম্ফীতি ব্যাপক বেড়ে যাচ্ছে। ভোগ্যপণ্য, প্রয়োজনীয় পণ্য, বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম ব্যাপক বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বৈশ্বিক বাণিজ্য পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। আমাদের এখানে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। তবে রিজার্ভ কমছে। গ্রাহকদের জন্য এটা চ্যালেঞ্জ। আর গ্রাহকদের চ্যালেঞ্জই ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো বৈদেশিক মুদ্রা। ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিনের ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুটা চাপ হলেও ব্যাংক ও দেশের জন্য এটা ভালো। আরেকটি ইস্যু হলো সাইবার নিরাপত্তা। এ ছাড়া অতিমারির কারণে বিভিন্ন নীতি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে গ্রাহকদের বিক্রি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নীতি সহায়তা তুলে নিলে কিছু প্রভাব তো আসবে। নীতি সহায়তা না থাকলে হয়তো খেলাপি বাড়বে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সেটা ম্যানেজ করতে পারবে।

সমকাল :ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি তহবিল নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করে। এখানে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?

সোহেল আর কে হোসেন :
তারল্য ব্যবস্থাপনা ব্যাংকের দায়িত্ব। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন রেশিও দিয়ে তারল্য যেন যথেষ্ট থাকে, সেটা নিশ্চিত করে। ব্যাংকগুলোতে এক বছরের বেশি মেয়াদি আমানত খুবই কম। অথচ সাত-আট বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবাসন, বাড়ি, গাড়ির ঋণ ১৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দুইয়ের মধ্যে সময়ের পার্থক্যটা অনেক বেশি। এটা কমাতে নতুন আমানত পণ্য আনতে হবে। অবশ্য ব্যাংকগুলো এখন অনেক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করছে। গ্রাহকদের অনেকে বন্ড ইস্যু, প্রেফারেনসিয়াল শেয়ার ইস্যু করে টাকা তুলছে। আবার শেয়ারবাজারের প্রতিও আস্থা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হয়তো সূচক ওঠানামা করছে। তবে সবসময় সূচক বাড়বে, সেটা তো হতে পারে না।

সমকাল :এতগুলো ব্যাংকের মধ্যে মেঘনা ব্যাংক এমন কী করছে যে, গ্রাহক এই ব্যাংকে আসবে?

সোহেল আর কে হোসেন :
নতুন একটা ব্যাংক এলে তাদের গ্রাহক আকর্ষণে আলাদা কিছু করতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া এখন ডিজিটাল রূপান্তর হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নতুন ব্যাংকের বাড়তি সুবিধা আছে। কেননা, বড় ব্যাংকগুলোর মতো অনেক বেশি ভৌত অবকাঠামো নেই। মেঘনা ব্যাংকের মাত্র ৪৭টি শাখা। এ বছর আরও চারটি খোলার পর ৫১টি হবে। দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো এটিএমে অনেক বিনিয়োগ করেছে। যে হারে বিনিয়োগ করেছে, সে তুলনায় ব্যবহার কম। এ ক্ষেত্রে মেঘনা ব্যাংকের কৌশল হলো- এটিএম অনেক না বাড়িয়ে কোনো খরচ ছাড়া অন্য ব্যাংকের এটিএম ব্যবহার করতে পারবে। আবার করোনার মধ্যে সঞ্চয়ী হিসাবের সঙ্গে ফ্রি ইন্স্যুরেন্স সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গত দেড় বছরে অফশোর ব্যাংকিং, ইসলামিক ব্যাংকিং, প্রায়োরিটি ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। ডিজিটাল ফাইন্যান্স সল্যুশন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডে অনেক নতুনত্ব আনা হয়েছে। মোবাইল অ্যাপস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অনেক উন্নত সেবা মিলছে। অনলাইনে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে এবং গ্রাহক বাসায় বসে তা করতে পারছেন। ভবিষ্যতে ঋণ আবেদন ও অন্যান্য ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য গ্রাহক বাসায় বসেই আবেদন করতে পারবেন। শাখা না বাড়িয়ে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সেবা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। গ্রাহক অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল গিফট ভাউচার তার পরিচিতজনকে পাঠাতে পারছেন। কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন শিগগিরই চালু হবে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com