সাক্ষাৎকার

ট্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই জাকাত দেওয়া যাবে

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

--

দেওয়ান নাজমুল হাসান

ট্রাস্ট ব্যাংক এবং আজিয়াটা ডিজিটাল সার্ভিসেসের যৌথ উদ্যোগে গত বছরের ২৮ জুলাই বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা করে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস 'ট্যাপ'। ট্যাপ-এর সেবা এবং এমএফএস খাত নিয়ে সমকালের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ট্যাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দেওয়ান নাজমুল হাসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির হোসেন

সমকাল :আপনারা যাত্রা করেছেন প্রায় এক বছর। আপনাদের গ্রাহক ও পরিবেশকের সংখ্যা কেমন বিস্তৃত হয়েছে?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :আমরা বাজারে একদমই নতুন। তবু ৯ মাসে আমাদের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক এবং আমরা আমাদের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে আমাদের ৪২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন। এজেন্ট ও পরিবেশকের সংখ্যা যথাক্রমে ৯৬ হাজার এবং ১৭৫টি। প্রতি মিনিটে আমাদের গ্রাহক ১২ জন করে বাড়ছে।

সমকাল :সম্প্রতি আপনারা ট্যাপ অ্যাপের মাধ্যমে জাকাত দেওয়ার ফিচার উদ্বোধন করেছেন। মানুষ কীভাবে এর মাধ্যমে

জাকাত দেবে?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :প্রক্রিয়াটি খুব সহজ। কেউ যদি জাকাত দিতে চান, তবে ট্যাপ অ্যাপের 'মোর' অপশনে যেতে হবে। তারপর 'জাকাত ট্যাপ' ক্লিক করলে জেলা এবং থানার নাম দিয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানার তালিকা দেখতে পাবেন। এরপর তালিকাভুক্ত যে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় জাকাত দিতে চান, তা নির্বাচন করে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। এরপর শুধু সেন্ড করলেই হবে। নির্দিষ্ট গ্রাহকদের দেওয়া জাকাত সরাসরি ওই মাদ্রাসার অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। আমাদের নিজস্ব কল সেন্টার ১৬৭৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করে দেশের যে কোনো মাদ্রাসা ও এতিমখানা এ তালিকায় যোগ হতে পারবে।

সমকাল :জাকাত দেওয়ার ফিচার চালুর পেছনে কোন বিষয়টি আপনাদের অনুপ্রাণিত করেছে?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কিন্তু সমাজের বাইরে নই। সমাজকে বাদ দিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে পরিচালিত করতে পারব না। আমাদের সমাজে অনেকেই জাকাত দেন। কিন্তু সবাই দ্বিধায় থাকেন- কোথায় দেবেন বা কম সময়ে সহজে কোথায় দেওয়া যাবে। এ কারণে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বিবেচনা করে এ ফিচার চালু করেছি। যে কেউ যেন ঘরে বসেই জাকাত দিতে পারেন এ জন্য আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।

সমকাল :আমাদের প্রথম উদ্ভাবনী সেবা কোনটি? এতে কেমন সাড়া পেয়েছেন?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :আমাদের উদ্দেশ্য ক্ষুদ্র লেনদেনে নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করা। সেই দিক মাথায় রেখেই আমরা আমাদের প্রথম উদ্ভাবনী সেবার পরিকল্পনা করেছি। এটি হচ্ছে ট্যাপের মাধ্যমে রিকশা ভাড়া দেওয়া। অনেক সময়ই দেখা যায় রিকশা ভাড়া দিতে গিয়ে খুচরা টাকা নিয়ে সমস্যা হয়। কিন্তু এখন থেকে যাত্রী ও রিকশাচালক দু'জনের কাছেই যদি ট্যাপ অ্যাপ থাকে, তবে ডিজিটাল উপায়েই ভাড়া পরিশোধ করা যাবে। তবে এ সেবা এখন শুধু পরীক্ষামূলকভাবে ধানমন্ডিতে চলছে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৩০০ রিকশাচালককে একটি করে কিউআর কোডসংবলিত কার্ড দেওয়া হয়েছে। ট্যাপ অ্যাপ দিয়ে ওই কিউআর কোড স্ক্যান করে রিকশাচালকের ট্যাপ ওয়ালেটে ভাড়া দিতে পারবেন যাত্রীরা।

সমকাল :অর্থনীতিতে এমএফএসের ভূমিকা কেমন?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :সম্প্রতি জাতিসংঘ ও এটুআই পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ডিজিটাল পেমেন্ট বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপিতে যোগ করবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। ডিজিটাল পেমেন্টের বড় একটি অংশ এমএফএসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অর্থনীতিতে এর ভূমিকা কেমন। এর ভূমিকা শুধু টাকার অঙ্ক দিয়ে বোঝা যাবে না। এর সামগ্রিক প্রভাব বেশ ব্যাপক ও বহুমাত্রিক। যারা এক সময় আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং খাতের বাইরে ছিল, তারা সহজেই প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও এখন এ সুবিধার আওতায় এসেছেন। ব্যাংকের মাধ্যমে টিটি বা ডিডি করে টাকা পাঠানো ছিল ঝক্কির ব্যাপার এবং লেনদেন ছিল সময়সাপেক্ষ। সেই কাজ এমএফএস সহজ করে দিয়েছে।

সমকাল :এমএফএসের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :এখনও অনেকের কাছে এমএফএস মানে টাকা পাঠানো এবং টাকা ওঠানো। কিন্তু এর সম্ভাবনা বিপুল। আমরা সেবাকে এ ধারণার বাইরে নিয়ে আসতে চাই। আমরা ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে জোর দিতে চাই। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখনও ডিজিটাল লেনদেনের আওতার বাইরে রয়েছেন। আমরা তাদের ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় আনতে চাই।

সমকাল :ট্যাপের মাধ্যমে আপনারা কী কী সেবা দিচ্ছেন?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :আমরা বর্তমানে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, সেন্ড মানি, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বীমার কিস্তি পরিশোধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি, সেনাবাহিনীর নিয়োগ-সংক্রান্ত ফি, রেমিট্যান্স গ্রহণ, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ইন্টারনেট বিল, টিভি বা ডিটিএইচ বিল, ইন্ডিয়ান ভিসা ফি প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি এবং ডোনেশন প্রদানসহ সব মোবাইল ফোন অপারেটরের রিচার্জ সেবা দিচ্ছি। আমাদের সেবার পরিধি শিগগিরই আরও বিস্তৃত হবে।

সমকাল :সরকারের কাছে আপনাদের

প্রত্যাশা কী?

দেওয়ান নাজমুল হাসান :একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার প্রতিষ্ঠায় নতুন কোম্পানিগুলোকে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। আমরা চাই, সরকার যেন এমএফএস খাতে এসএমপি (সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার) বিধিমালা চালু করে। এতে একদিকে যেমন নতুন এবং তুলনামূলকভাবে ছোট কোম্পানি সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ পাবে, অন্যদিকে গ্রাহকরাও একচেটিয়া বাজারের পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সুফল পাবেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com