
চারদিক
নার্স সংকট নিরসন জরুরি
প্রকাশ: ১২ মে ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফাতিমা আক্তার

মানবসেবায় অনন্য দায়িত্ব পালনকারী নার্সদের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শনের দিন হিসেবে বিশ্বব্যাপী আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস পালিত হবে। আধুনিক নার্সিং সেবার সূচনা করেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তিনি ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিনটি 'ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে বিশ্বব্যাপী। গোটা বিশ্বে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অন্যান্য পেশার চেয়ে নার্সের সংখ্যা বেশি। আধুনিকতম স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগীদের চাহিদা সম্পর্কে ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন ইত্যাদি পড়ে তার মধ্যে। প্রতিটি দেশ নিজের মতো করে পালন করে এই দিনটি।
ডার্বিশায়ার থেকে ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স। সেই সময়ে লন্ডনের হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। এর অন্যতম কারণ সে সময়ে কেউ সেবিকার কাজে এগিয়ে আসতেন না। কারণ সামাজিকভাবেও মর্যাদা দেওয়া হতো না এই পেশাকে। তবে নাইটিঙ্গেল জানতেন, পৃথিবীতে তিনি এসেছেন সেবিকা হওয়ার জন্যই। বাবা-মা বিরূপ কথা বলেছেন সময়ে সময়ে। কিন্তু আশা ছাড়েননি ফ্লোরেন্স। অবশেষে বাবা-মায়ের অনুমতি মিললে ১৮৫১ সালে নার্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে উড়াল দেন তিনি। প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। জোগাড় করেছিলেন ৪৫ হাজার পাউন্ড। লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল', যার বর্তমান নাম 'ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং'। ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন 'উইমেন্স মেডিকেল কলেজ'।
ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের। মানুষের সেবায় তার দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য ১৮৮৩ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তাকে 'রয়েল রেড ক্রস' সম্মানে ভূষিত করেন। ১৯০৭ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে 'অর্ডার অব মেরিট' সম্মানে সম্মানিত হন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। ১৯০৮ সালে পান লন্ডনের 'অনারারি ফ্রিডম' উপাধি।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন হেড নার্স। ইংরেজ-তুর্কি নির্বিশেষে দু'দেশের আহত মুমূর্ষু সৈনিকদের দিনরাত প্রাণ খুলে সেবা করেন তিনি। গভীর রাতে হাসপাতালের করিডোরে রোগীদের প্রয়োজন দেখতে হাতে মোমবাতি নিয়ে হেঁটে বেড়াতেন। তাই এখনও মানুষ স্মরণে রেখেছেন লেডি উইথ ল্যাম্পকে। ১৮৬০ সালে লন্ডনে বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি হয় নার্সিং শেখানোর স্কুল নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং। এই স্কুল নির্মাণেও তার অবদান ছিল।
হাজারো মানুষের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আজ সারাবিশ্বে নার্স একটি ভরসার প্রতীক ও সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করবে। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস এবং নার্সদের অন্যান্য সংগঠন শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের তথ্যমতে, করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে নার্স হচ্ছে একক ও সর্ববৃহৎ পেশা। দেশে দক্ষ নার্সের গুরুত্ব অপরিহার্য। কভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত থেকে বাংলাদেশে ২৪ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ২ হাজার ৮০০ নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবায় বড় গলদ নার্স সংকট। বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছতে বড় বাধা হয়ে আছে নার্সের ব্যাপক ঘাটতির বিষয়টি। প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দুই লাখ নার্স কম, যে ঘাটতি পূরণে কোনো উদ্যোগ নেই। একজন রোগীর সুস্থতার জন্য যেমন চিকিৎসকের ভূমিকা রয়েছে; তেমন নার্সের ভূমিকাও কম নয়। চিকিৎসক ও নার্স প্রতিপক্ষ নয়, বরং তারা পরিপূরক। চিকিৎসক রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেওয়ার পর পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করেন নার্স। অর্থাৎ রোগীকে সময়মতো ওষুধ খাওয়ানো, স্যালাইন গাঁথা, ক্যানোলা তৈরি থেকে শুরু করে রোগীর খাবার খাওয়ানোর দায়িত্বও নার্সকে নিতে হয়। একজন রোগীর যখন অবস্থার অবনতি হয়, তখন সবার আগে ছুটে আসেন নার্স। সবার জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে দেশে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগ দিতে হবে।
ফাতিমা আক্তার: সিনিয়র স্টাফ নার্স, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ডার্বিশায়ার থেকে ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স। সেই সময়ে লন্ডনের হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। এর অন্যতম কারণ সে সময়ে কেউ সেবিকার কাজে এগিয়ে আসতেন না। কারণ সামাজিকভাবেও মর্যাদা দেওয়া হতো না এই পেশাকে। তবে নাইটিঙ্গেল জানতেন, পৃথিবীতে তিনি এসেছেন সেবিকা হওয়ার জন্যই। বাবা-মা বিরূপ কথা বলেছেন সময়ে সময়ে। কিন্তু আশা ছাড়েননি ফ্লোরেন্স। অবশেষে বাবা-মায়ের অনুমতি মিললে ১৮৫১ সালে নার্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে উড়াল দেন তিনি। প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। জোগাড় করেছিলেন ৪৫ হাজার পাউন্ড। লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল', যার বর্তমান নাম 'ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং'। ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন 'উইমেন্স মেডিকেল কলেজ'।
ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের। মানুষের সেবায় তার দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য ১৮৮৩ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তাকে 'রয়েল রেড ক্রস' সম্মানে ভূষিত করেন। ১৯০৭ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে 'অর্ডার অব মেরিট' সম্মানে সম্মানিত হন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। ১৯০৮ সালে পান লন্ডনের 'অনারারি ফ্রিডম' উপাধি।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন হেড নার্স। ইংরেজ-তুর্কি নির্বিশেষে দু'দেশের আহত মুমূর্ষু সৈনিকদের দিনরাত প্রাণ খুলে সেবা করেন তিনি। গভীর রাতে হাসপাতালের করিডোরে রোগীদের প্রয়োজন দেখতে হাতে মোমবাতি নিয়ে হেঁটে বেড়াতেন। তাই এখনও মানুষ স্মরণে রেখেছেন লেডি উইথ ল্যাম্পকে। ১৮৬০ সালে লন্ডনে বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি হয় নার্সিং শেখানোর স্কুল নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং। এই স্কুল নির্মাণেও তার অবদান ছিল।
হাজারো মানুষের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আজ সারাবিশ্বে নার্স একটি ভরসার প্রতীক ও সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করবে। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস এবং নার্সদের অন্যান্য সংগঠন শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের তথ্যমতে, করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে নার্স হচ্ছে একক ও সর্ববৃহৎ পেশা। দেশে দক্ষ নার্সের গুরুত্ব অপরিহার্য। কভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত থেকে বাংলাদেশে ২৪ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ২ হাজার ৮০০ নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবায় বড় গলদ নার্স সংকট। বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছতে বড় বাধা হয়ে আছে নার্সের ব্যাপক ঘাটতির বিষয়টি। প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় দুই লাখ নার্স কম, যে ঘাটতি পূরণে কোনো উদ্যোগ নেই। একজন রোগীর সুস্থতার জন্য যেমন চিকিৎসকের ভূমিকা রয়েছে; তেমন নার্সের ভূমিকাও কম নয়। চিকিৎসক ও নার্স প্রতিপক্ষ নয়, বরং তারা পরিপূরক। চিকিৎসক রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেওয়ার পর পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করেন নার্স। অর্থাৎ রোগীকে সময়মতো ওষুধ খাওয়ানো, স্যালাইন গাঁথা, ক্যানোলা তৈরি থেকে শুরু করে রোগীর খাবার খাওয়ানোর দায়িত্বও নার্সকে নিতে হয়। একজন রোগীর যখন অবস্থার অবনতি হয়, তখন সবার আগে ছুটে আসেন নার্স। সবার জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে দেশে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগ দিতে হবে।
ফাতিমা আক্তার: সিনিয়র স্টাফ নার্স, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com