বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি ৫শ কোটি ছাড়াল

প্রকাশ: ১২ মে ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১২ মে ২২ । ১০:৫৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

ওবায়দুল্লাহ রনি

আমদানি ব্যয় যে হারে বাড়ছে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় হচ্ছে সে তুলনায় কম। এতে চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। এ অবস্থায় গাড়িসহ বিলাসপণ্যের আমদানিতে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও এ সময়ে যাতে আমদানি দায় পরিশোধে কেউ যেন ব্যর্থ না হয় সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল ২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর আগে কোনো এক অর্থবছর এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি।

জানা গেছে, গত অর্থবছর বিভিন্ন ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত ডলার থাকায় তাদের কাছ থেকে রেকর্ড ৭৯৪ কোটি ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হতে থাকে। গত বছরের জানুয়ারিতে ৪২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার থেকে আগস্টে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। অথচ এখন তা ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। গত মঙ্গলবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ২২৪ কোটি ডলারের দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার মূল কারণ আমদানি ব্যয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সে পতন। গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আমদানি ব্যয় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার হয়েছে। রপ্তানি ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। এতে করে ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ সময়ে রেমিট্যান্স ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে এক হাজার ৫৩০ কোটি ডলারে নেমেছে। এতে করে চলতি হিসাবে রেকর্ড এক হাজার ৪০৭ কোটি ডলারের ঘাটতি হয়েছে। তবে বিদেশি ঋণ ৫৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে ৬৬২ কোটি ডলার হয়েছে। যে কারণে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ৩১০ কোটি ডলার হয়েছে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ ব্যাপকভাবে পরিশোধ শুরু হলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বিশ্ববাজারে দরবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় ব্যাপক বাড়ছে। একই সময়ে রেমিট্যান্স কমছে। রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির পরও বাজার ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। বিক্রি না করে ডলারকে আরও শক্তিশালী হতে দিলে মূল্যস্ম্ফীতির ওপর চাপ তৈরি হবে। আবার রিজার্ভ যে পর্যায়ে নেমেছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আমদানি দায় মেটানোর নূ্যনতম মাত্রায়। ফলে বর্তমানের এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য উভয় সংকট। এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ম্ফীতি একটু বাড়লেও রিজার্ভ যেন না কমে সেদিকে জোর দিতে হবে। ডলারের দর সমন্বয় করতে হবে। তাতে মূল্যস্ম্ফীতি বাড়বে। তবে যে হারে বাড়বে তা বড়লোকের জন্য সমস্যার কোনো কারণ হবে না। এটা দরিদ্রদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হবে। এই চাপ সামলাতে তাদের খাদ্য সহায়তার পরিবর্তে নগদ সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত যে ডলার বিক্রি করেছে তার মধ্যে জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাকি ২৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি হয় গত বছরের ১৯ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। আগস্টের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কিনেছিল। এরপর কোনো ব্যাংক আর ডলার বিক্রির জন্য আসেনি। সাধারণভাবে কোনো ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত ডলার থাকলে অন্য ব্যাংক কিনতে না চাইলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্রি করে। তবে এখন বিক্রির মতো ডলার ব্যাংকের হাতে নেই। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ২২৭ কোটি ডলার ধারণের ক্ষমতা বা নেট ওপেন পজিশন লিমিট (এনওপি) রয়েছে। অথচ তাদের কাছে আছে ৭৫ কোটি ডলারের কম।

বাজারে উদ্বৃত্তের চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোট ৭৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছিল মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে কিনেছিল ৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছর ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করলেও এক ডলারও কিনতে পারেনি। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর বিক্রি করে ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের এ সময় পর্যন্ত বর্তমানে প্রতি ডলারে এক টাকা ৯০ পয়সা বাড়িয়ে আন্তঃব্যাংকেই ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। নগদ ডলার কিনতে যেখানে ৯৩ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com