ছাত্রলীগের ভাষা শান্তির ভাষা, ছাত্রদল সন্ত্রাসের ডিস্ট্রিবিউটর: সাদ্দাম হোসেন

প্রকাশ: ২৪ মে ২২ । ২২:২৬ | আপডেট: ২৪ মে ২২ । ২৩:০৭

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের ভাষা হচ্ছে শান্তির ভাষা, ছাত্রলীগের ভাষা হচ্ছে মিছিলের ভাষা। আর ছাত্রদল সংগঠনটি অপশক্তির ডিস্ট্রিবিউটর, সন্ত্রাসের ডিস্ট্রিবিউটর। তারা সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে (ঢাবি) ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীর মাঝে ভীতি ছড়াচ্ছে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম থাকবে কিনা সেই আশংকা করছে শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে। সেই শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানানোর জন্য, সংহতি জানানোর জন্য আমরা অবস্থান করেছি এবং এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসবিরোধী স্লোগান দিয়েছে। অছাত্রদের বা ঠিকাদারদের কাছে যে ছাত্র রাজনীতি তুলে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে সে ছাত্ররাজনীতি তারা মুক্ত করতে চাইছে। 

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের ওপর হামলার প্রশ্নই আসে না। শিক্ষার্থীরা আমাদের ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে, প্রশাসনকেও বলেছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে যদি প্রতিবাদ জানান, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই।’

আজ সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রদলের অন্তত ৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ঢাবি শিক্ষার্থীরাই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতিহত করেছে বলে দাবি ছাত্রলীগের।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, আমি (রাকিব), সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমানসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে যাচ্ছিলাম। দুই দিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের মহড়া দিচ্ছে বলে মিছিলে আমরা কোনো স্লোগান পর্যন্ত দিইনি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলি। বলি যে, আমরা তো শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছি, আমাদের অপরাধটা কী?’

তিনি বলেন, ‘বিনা উসকানিতে তারা হকিস্টিক, রড, চাপাতি, লাঠিসোঁটাসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। হামলায় ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ইজাজুল করিম ও সদস্য মানুসূরা আলম গুরুতর আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে আমাদের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মীর আহত হয়েছেন।’

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা করে। এতে আমাদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অনেকে আহত হয়েছে।’

হামলাকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বহিরাগত ব্যক্তিরা অংশ নেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের হামলায় আহত আমাদের অনেক নেতা-কর্মী জীবনমৃত্যুর শঙ্কায় রয়েছেন। চিকিৎসা শেষে ছাত্রদল অবশ্যই ক্যাম্পাসে যাবে।’ 

ছাত্রদলের অন্তত ৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে সংগঠনটি দাবি করেছে

ছাত্রদলের দুই নেতাকে মেরে ড্রেনে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ

এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে বেলা ১১টার দিকে ছাত্রদলের দুই নেতাকে মারধরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের গেটের পাশে অবস্থিত ড্রেনে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের অভিযোগ, এ হামলায় শহীদুল্লাহ হলের একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী অংশ নেয়। 

তাদেরকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ঢামেকে নেওয়া হয়েছে। ড্রেনে ফেলা দেওয়া দুই ছাত্রদল নেতা হলেন- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এজিএস ছাত্রদল নেতা আল আমিন বাবলু এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহ-সভাপতি মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

ছাত্রদল নেতা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানান, দোয়েল চত্বর মিছিল দিয়ে আসছিল। পরে শহীদুল্লাহ হলের কর্মীরা টেনে ভেতরে নিয়ে মারধর শুরু করে। লাঠি-হকিস্টিক দিয়ে মারধর করে তারা। এর পাশাপাশি তারা চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। আমার পা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। 


ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের শোডাউন 

ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে, এমন ধারণা থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের হাতে স্টাম্প ও লাঠিসোঁটা দেখা যায়। এছাড়া ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকে মোটরসাইকেলে করে পুরো ক্যাম্পাসে ‘শোডাউন’ করতে দেখা গেছে। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বছরের পর বছর ধরে সহাবস্থান চলছে। ক্যাম্পাসে কী এমন হয়েছে, জঙ্গি মনোভাব নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য লাঠিসোঁটা হাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হবে? আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে, কার কী রাজনৈতিক পরিচয় সেটি আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ভোরবেলা যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কী ঘটেছে, সে বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছেও প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।’

সম্প্রতি ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মিছিল সমাবেশও করেন। তবে সম্প্রতি টিএসসি এলাকায় ছাত্রদলের কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দিকে যাচ্ছিলেন বলে জানান তারা। এ  সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com