সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

দরিদ্রদের সহায়তা ভাতা বাড়ছে না

প্রকাশ: ২৭ মে ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৭ মে ২২ । ০২:১০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শেখ আবদুল্লাহ

মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় কমেছে। সম্প্রতি চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে করে দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের জীবনযাপন সহজ করতে দেশের অর্থনীতিবিদরা গরিব মানুষের হাতে সহায়তা হিসেবে নগদ টাকার পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেশিরভাগ ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে। যদিও মোট ভাতাভোগী বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী অর্থবছরে আরও ১০০ উপজেলায় ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাকে ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে ১০০ উপজেলার সব বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করা হচ্ছে। এতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে ১১ লাখ। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রায় আট লাখ। চলতি অর্থবছরে ৫৭ লাখ এক হাজার মানুষকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। বছরে দুইবার এ ভাতা দেওয়া হয়। এ বাবদ সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে ৬৮ লাখ বয়স্ক মানুষ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। বর্তমানে ২৬২টি উপজেলায় ওই ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরে আরও ১০০ উপজেলায় এ কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৩৬২টি এর আওতায় আসবে। এর বাইরে ২০ লাখ ৮ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধীকে সরকার চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা ভাতা দিচ্ছে।

ছয় বছর ধরে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারীদের ভাতা বাড়েনি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এ অর্থ খুবই সামান্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর প্রতিবন্ধীদের ভাতা তিন বছর ধরে ৭৫০ টাকা। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে মূল্যস্ম্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রতিবছর সামাজিক নিরাপত্তায় মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যাও বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়। নতুন অর্থবছরে তা অপরিবর্তিত থাকছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। বর্তমানে সারাদেশে ১ লাখ ৮৭ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকেন।

জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে দুস্থ নারীদের অবস্থার পরিবর্তনে বেশ কিছু উদ্যোগ থাকছে আগামী বাজেটে। তৃণমূল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ, অতিগরিব নারীদের দরিদ্রতা থেকে বের করে আনা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক লবণাক্ততা মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়ানোসহ দুস্থ নারীদের সামগ্রিকভাবে জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তার ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। ৩০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অন্যান্য অধিকাংশ কর্মসূচিতেও বিশেষ পরিবর্তন আসছে না। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, ভিজিডি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, বেদে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকছে। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস ও অন্য রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতেও বরাদ্দ বাড়ছে না। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নেও বরাদ্দের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না; বরং ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়ছে ৫ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এ খাতে মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এই অর্থের বড় অংশই ব্যয় হবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায়। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদ ভর্তুকির অর্থও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ রাখা হয়।

এ বিষয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সমকালকে বলেন, ১০ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ পরিবারকে পাঁচ মাস ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সরকারের রয়েছে, এর সুবিধাভোগী বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা যেতে পারে। এতে যাঁরা খাদ্যের কষ্টে পড়েছেন, তাঁরা উপকৃত হবেন।





© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com