চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য: রপ্তানি আয় ছাড়াল ১ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশ: ০৫ জুন ২২ । ১০:২৩ | আপডেট: ০৫ জুন ২২ । ১০:২৩

শেখ আবদুল্লাহ

প্রতীকী ছবি

প্রথমবারের মতো দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এ খাতে রপ্তানি হয়েছে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে এতটা রপ্তানি আয় হবে সেটা অবশ্য বছরের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও আশা করেনি। কারণ পুরো অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০৩ কোটি ডলার। ১১ মাসেই এ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে আট কোটি ডলার বেশি রপ্তানি আয় এসেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৮৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি হয়। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর চামড়া খাতে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব দেশে চামড়াজাত পণ্যের বিক্রি ভালো। এ ছাড়া পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেওয়ার পর থেকে ভ্রমণের প্রয়োজনে নতুন করে চাহিদা বেড়েছে জুতা, ব্যাগ ইত্যাদির। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে দেশে মূল্যস্ম্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে এ ধরনের পণ্যের চাহিদা কমার আশঙ্কা রয়েছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে এ খাতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে ফুটওয়্যার বা পাদুকা থেকে। মোট ৬৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি।

এরপরই রয়েছে চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য। বাংলাদেশ থেকে চামড়ার তৈরি বেল্ট, মানিব্যাগ, নানা ধরনের লেডিস ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের বাক্স, জ্যাকেট, হ্যান্ডগ্লাভস, গাড়িতে ব্যবহূত জিনিসপত্র অনেক দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। পাদুকা ছাড়া অন্যান্য চামড়াপণ্য থেকে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ৩০ কোটি ২৭ লাখ ডলার রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া এ সময়ে চামড়া রপ্তানি থেকে ১৪ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চামড়াজাত শিল্পে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে দেশে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা এখনও শতভাগ পরিবেশসম্মত নয়। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে পরিবেশসম্মত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম পরিবেশসম্মত হতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে তার স্বীকৃতি পেতে হবে। তাহলে এ খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। এ জন্য চামড়া খাতের শীর্ষস্থানীয় এই উদ্যোক্তা সব রপ্তানি খাতে সমান নীতি সুবিধা ও রপ্তানি বহুমুখীকরণে বিশেষ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেন। তিনি মনে করেন, প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও চামড়ার পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়াজাতকরণ নিশ্চিত করা গেলে ২০২৪ সাল নাগাদ এ খাতের রপ্তানি ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

এ খাতের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের চামড়া খাতের প্রধান সমস্যা কমপ্লায়েন্সের অভাব। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য কম দাম পাচ্ছে। আবার স্থানীয় বাজারেও চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব। সে জন্য এ খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে স্থাপিত ইটিপি এখনও পূর্ণাঙ্গ পরিবেশবান্ধবভাবে কাজ করছে না। আবার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ঠিক হয়নি। এসব কারণে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম পাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে সিনথেটিক ও কাপড়ের পাদুকার রপ্তানিও বেড়েছে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৪০ কোটি ৮২ লাখ ডলারের এ ধরনের পাদুকা রপ্তানি হয়েছে। এটি পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার কোটি ডলার এবং আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com