ইবিতে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড

বিতর্কিতরা বিশেষজ্ঞ সদস্য শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ

প্রকাশ: ০৭ জুন ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৭ জুন ২২ । ০১:৪২ | প্রিন্ট সংস্করণ

মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু, ইবি

বিভাগভিত্তিক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে বিশেষজ্ঞ সদস্যের মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে। সংশ্নিষ্ট বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করার পাশাপাশি বিতর্কিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগের জন্য আলাদা নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের অনুমোদন দেন উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম। দুই বছর মেয়াদি প্রতিটি বোর্ডে উপাচার্য থাকেন সভাপতি এবং সদস্য হিসেবে থাকেন বিভাগীয় সভাপতি, একজন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য।

বিশেষজ্ঞদের নামের তালিকায় দেখা যায়, ৩৬টি বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু'জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন মনোনয়ন পেয়েছেন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিদারুল ইসলাম রয়েছেন একটি বোর্ডে। সিন্ডিকেট সদস্য ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুব দুটি বোর্ডে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া ১২টি করে বোর্ডে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে আছেন।

ফার্মেসি বিভাগের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রহমান। ফার্মেসি অনুষদের ডিন থাকাকালীন তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক রহমতউল্লাহকে আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ করা হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সিন্ডিকেট। বঙ্গবন্ধুর খুনি খোন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

৩৬টি বোর্ডের মধ্যে আইন, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি, অর্থনীতিসহ কিছু বিভাগে প্লানিং কমিটির সুপারিশ মানা হয়েছে। অন্যান্য বিভাগে সুপারিশ না মেনে বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।

বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদও জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম। গত ২৩ মে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় প্রায় ২৫ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

কী বলছেন শিক্ষক নেতারা :শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হেসেন বলেন, বিভিন্ন বিভাগ থেকে অভিযোগ আসছিল। এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানতে গিয়েছিলাম। প্লানিং কমিটির সুপারিশ নিতে হয়, তা নাকি উপাচার্য জানতেন না। উপাচার্য যখন এভাবে বলেন, তখন আমাদের কী বলার থাকে!

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এবার একটু বাইরে থেকে বেশি নেওয়া হয়েছে। অনেকে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিটের সভাপতি ও আইসিটি বিভাগের প্লানিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক তপন কুমার জোদ্দার বলেন, গত ২৫ বছরে আমাদের বিভাগে প্লানিং কমিটির বাইরে বিশেষজ্ঞ দেওয়া হয়নি। আমাদের অসন্তুষ্টির কথা প্রশাসনকে বলেছি। নিয়োগের আগেই প্রশাসন সবার মাঝে বিতর্ক ও শঙ্কা তৈরি করেছে।

প্রশাসনের বক্তব্য :কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উপাচার্যের ক্ষমতা আছে, যে কাউকে তিনি নিতে পারেন।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি আর কোষাধ্যক্ষ যদি ১২টাতে করে থাকি তবে অসুবিধা কী। আমাদের তো ৩৪টাতে থাকা উচিত। সিন্ডিকেট থেকে উপাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি তার মতো করে নাম রেখেছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম সমকালকে বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ হবে কেন। বিশেষজ্ঞ নিয়োগে সিন্ডিকেট থেকে উপাচার্যের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সবকিছু উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে নিয়ে করেছি। আর বিশেষজ্ঞ তো একা বোর্ডে থাকবেন না। যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়ে প্রয়োজনে চ্যালেঞ্জ করার কথাও বলেন তিনি।





© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com