সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

'আমি কী নিয়া বাঁচুম'

প্রকাশ: ০৭ জুন ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৭ জুন ২২ । ০২:২৩ | প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁদপুর প্রতিনিধি ও কচুয়া সংবাদদাতা

ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এমরানের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তান কোলে এক স্বজন সমকাল

সীতাকুণ্ড বিস্ম্ফোরণে নিহত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এমরান হোসেন মজুমদার রেখে গেছেন দুটি শিশুসন্তান। আরেক সন্তান দুনিয়ার আলো দেখার অপেক্ষায়। এমরানের নির্মম মৃত্যুতে তাই স্বজনরা শোকের সাগরে ভাসছেন। তিন সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আঁতকে উঠছেন তাঁরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন তাঁর লাশের অপেক্ষায় সবাই।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার এমরান (৪০) চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সিংআড্ডা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর মৃত্যুতে শোকে নির্বাক অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও স্বজনরা। তাঁর পাঁচ ভাইয়েরও চোখের পানি থামছে না। এমরানের বড় সন্তান তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী, আর ছোটটি প্রতিবন্ধী।

শেষবারের মতো এমরানের লাশ দেখার অপেক্ষায় পরিবার ও আত্মীয়স্বজন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে এমরানের ছোট ভাই লাশ শনাক্ত করেছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ দেওয়া হবে।

আর্থিক সংকটের কারণে এমরান এসএসসি পাসের পর আর লেখাপড়া করতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি নেন ২০০১ সালে। চাকরিরত অবস্থায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাস করেন। সীতাকুণ্ডে 'ফায়ার লিডার' পদে কর্মরত ছিলেন তিনি।

বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের সঙ্গে ছিলেন এমরান। সেখানে বিস্ম্ফোরণে নিহত হন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে গত দু'দিন পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসছেন। তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও স্বজনদের কান্নায় এলাকার মানুষও ভাষা হারিয়ে ফেলছেন। এমরানের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তাঁদের অনাগত সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই পিতৃহারা হলো। নিহতের ভাই সোলেমান বলেন, এমরানের এমন মৃত্যু তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।

নিহত এমরান হোসেনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, 'শনিবার রাত ৯টার দিকে আমার সঙ্গে স্বামী এমরানের শেষ কথা হয়। তার পর থেকে মোবাইলে অনেকবার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি আমার স্বামীর লাশটা শেষ দেখা দেখতে চাই! ও ভাইরা, আমি কী নিয়া বাঁচুম!' সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এত কষ্ট কেমনে সহ্য করমু ভাই। যে সন্তানটা আইব গো ভাই, সে চোখ খুলেই বাপহারা, এতিম!' নিহতের ভাই সোলেমান পাটওয়ারী বলেন, শনিবার রাতে আমার ভাই এমরান মজুমদার বাড়িতে শেষ কথা বলেন। আমরা শুধু আমার ভাইয়ের লাশটা একনজর দেখতে চাই। ভাইয়ের এমন মৃত্যু আমরা মানতে পারছি না।





© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com