মুক্তগদ্য

কাঠফাটা রোদ্দুর

প্রকাশ: ০৭ জুন ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাহমুদ অর্ক্য

শুরুটা চৈত্র থেকে। মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। বসন্তের রঙিন ফুলের ওপর থেকে হারিয়ে যেতে থাকে মুক্তার মতো শিশিরবিন্দু। ধুলাবালিতে একাকার- পানির অভাবে মলিন হতে থাকে ফুলের পাপড়ি। ঋতুরাজ বসন্তের বিদায়ের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সূচনা লিখতে হঠাৎ করেই রুদ্ররূপে আগমন ঘটে গ্রীষ্ফ্মের। আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছি সাদরে। কালবৈশাখী কিংবা জৈষ্ঠ্যের মধুময় সময়ে ফল পাকানোর জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে কাঠফাটা রোদ্দুরে। অসহ্য হয়ে ওঠা গোঁয়ার প্রকৃতিকে দুমড়ে-মুচড়ে এক করে ফেলতে চায় কালবৈশাখী। চোখে পড়ে শুকনো মাঠ-ঘাট, খাল-বিল-নদী। শুকিয়ে চৌচির ফসলের জমি। 'আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই'- এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার চারদিকে। সে সময় ছাপিয়ে এখন প্রকৃতি ভিন্ন রূপ নিয়েছে।

সকাল থেকেই মাথার ওপর জ্বলন্ত সূর্য জৈষ্ঠ্যের আগমনকে নিয়ত ঘোষণা করতে থাকে। সময় যতই এগিয়ে যায় এর কঠোরতা ততই যেন তীব্র হয়। কাঠফাটা রোদের তাপ সইতে না পেরে পাকতে শুরু করে মৌসুমি ফল। এভাবে ধীরে ধীরে সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে প্রকৃত রূপ ভেসে ওঠে এর তাপদাহের প্রখরতায়। কবির ভাষায়, 'ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্ফ্মের দুপুরে/খাল-বিল চৌচির জল নেই পুকুরে।/মাঠে ঘাটে লোক নেই খাঁ খাঁ রোদ্দুর/পিপাসায় পথিকের ছাতি কাঁপে দুদ্দুর।'

জ্যৈষ্ঠ শেষে এখন যেন বাংলার বুকে এসে গেছে ফলের যৌবনময় সময়। ট্রাকে ট্রাকে তাপদাহে তপ্ত ফলের সমাহার। গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে কাঠফাটা দুপুরের প্রখরতা তুলনামূলক বেশি। যতই দিন যায় ক্রমেই বাড়ে শহুরে উত্তাপ। ভ্যাপসা গরমে প্রাণ নাজেহাল মানুষের। অফিস যাত্রী থেকে স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, ব্যবসায়ী থেকে করপোরেট মানুষ কিংবা ফুটপাতের দোকানি- কেউই রেহাই পায় না তপ্ততা থেকে। এ সময় গাড়িতে ওঠা তো একেবারেই দুঃসাধ্য; দম বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।

ক্রমেই বেড়ে যায় তাপমাত্রার পারদ। একটু ঘোরাঘুরি করলেও ঘামে ভিজে যায় গোটা শরীর। পথের কর্মব্যস্ত মানুষ দুপুরের গরম থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে গলা ভেজায় ঠান্ডা শরবত কিংবা কোমল পানীয় দ্বারা। আর অফিস কিংবা বাড়িতে মানুষ স্বস্তি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে কৃত্রিম শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে। তবুও জীবনযাত্রা স্তব্ধ হয়ে যায় না। একদিক থেকে যেমন গ্রীষ্ফ্মের দুপুর বাংলার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে, অন্যদিকে তেমন গ্রীষ্ফ্মের তাপদাহই পরবর্তীর বর্ষাকে আবাহন করে আনে। তাই তো গ্রীষ্ফ্মকালের শেষ হতে না হতেই আকাশের বুকে গুরুগম্ভীর মাদল বাজিয়ে বর্ষা ঘোষণা করে তার আগমনী বার্তা।

সাবেক সভাপতি, সুহৃদ সমাবেশ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com