ভাঙাগড়ার দ্বীপে জীবনযুদ্ধ

প্রকাশ: ০৭ জুন ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৭ জুন ২২ । ১১:১৯ | প্রিন্ট সংস্করণ

আবদুর রহমান, টেকনাফ (কক্সবাজার)

নাফ নদের ভাঙনে বসতভিটা হারানোর জায়গাটি দেখাচ্ছেন নূরজাহান বেগম-সমকাল

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নাফ নদের ভাঙনে প্রতিনিয়ত বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছে মানুষ। সচ্ছল ব্যক্তিরা ঘরবাড়ি হারিয়ে দূরে চলে যাচ্ছেন। তবে দরিদ্ররা দ্বীপের বাঁধেই টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন। দ্বীপে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অন্তর্ভুক্ত শাহপরীর দ্বীপ। এখানে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি গ্রামে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসতি। ভাঙনের কারণে গত দশ বছরে প্রায় ৫ হাজারের মতো মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে চলে গেছেন। তাঁরা অনেকে টেকনাফ পৌরসভা, সদরের ছোট হাবিরপাড়া, মহেশখালীপাড়া, ডেইলপাড়া, সাবরাং, নয়াপাড়া, হ্নীলা, উখিয়ার পাইন্ন্যাসা, পালংখালী, কুতুপালংসহ বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। বহু মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার।

সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে নাফ নদের পাড়ে জালিয়াপাড়া। সেখানে এখনও শখানেক পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। এখনও ভাঙন থেমে নেই দ্বীপে। এমনকি বিলীনের পথে দুটি বিদ্যালয় ভবন।

ভাঙনকবলিত লোকজন বলছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলে নদের ধারেই আশ্রয় নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা নাফ নদের তীরে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি আঙুল তুলে পুরোনো বসতির সীমারেখা দেখানোর চেষ্টা করছিলেন জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম (৬০)। এখন নাফ নদের তীরে যেখানে নৌকা ভাসমান দেখা যাচ্ছে, সেখানেই এক সময় প্রায় ৩০০ পরিবারের একটি পাড়া ছিল, ছিল রাস্তাঘাট। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তখন থেকেই ভাঙন চলছে। সব মিলে তাঁর বসতি ভেঙেছে চারবার। সংশ্নিষ্টদের গাফিলতির কারণে আজ তাঁদের বেহাল অবস্থা। তাঁর আশঙ্কা, যেভাবে ভাঙছে, এখানেও বেশিদিন থাকা যাবে না।

মো. হানিফ (৪৮) নামের আরেকজন বলেন, 'অভাবের কারণে ঘরের কাছে ভাঙন চলে এলেও ঘরটা অন্যত্র সরানোর সুযোগ নেই।' তাঁর ভয়, হয়তো আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে এই স্থানটি নদে চলে যাবে।

কথা বলার সময় ভিড় করেন ফাতেমা বেগম, নুরজাহান, মনজুর আলমসহ অনেকে। জানান তাঁদের সব হারানোর কাহিনি। তাঁরা সবাই জমিজমা হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দ্বীপের ৫৫ শতাংশ (৩৫-৭০ বছর বয়সী) মানুষ কমপক্ষে ৪-৬ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এখানকার ৫০ শতাংশ লোক কৃষক এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। কৃষিজমি ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেকে বেকার। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, তাঁর এলাকার প্রায় ৫০০ মানুষ নাফ নদের পাড়ে জীবনযাপন করছেন। ১২ বছর আগে দ্বীপের পশ্চিমে বাঁধ ভাঙার কারণে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বসতি হারান। সেই বাঁধটি পুনর্নির্মাণ হলেও নতুন করে পূর্বদিকে ভাঙন ধরেছে।

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্বীপের নাফ নদের পাড়ে বসবাসকারী মানুষ পর্যায়ক্রমে আশ্রয়স্থল হারাচ্ছেন। তাঁদের অন্যত্র সরানো যায় কিনা, সে বিষয়ে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

ইউএনও কায়সার খসরু জানান, ঝুঁকিতে থাকা গৃহহীন মানুষকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সংশ্নিষ্টদের বলা হবে। পাশাপাশি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, নাফ নদের পাড়ে দুটি বিদ্যালয়সহ যেসব বসতি রয়েছে, তা রক্ষায় গত বছর ৪০ লাখ টাকার বাঁধ দেওয়া হয়। তবু ভাঙন ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর পরও কয়েক দিনের মধ্য ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com