চালের বাজার ‘মাতাবে’ বঙ্গবন্ধু ধান, প্রথম বছরেই মন জিতল কৃষকের

প্রকাশ: ০৭ জুন ২২ । ১৯:৫১ | আপডেট: ০৭ জুন ২২ । ১৯:৫৪

খুলনা ব্যুরো

বাম্পার ফলন হয়েছে বঙ্গবন্ধু ধানের। ছবি: সমকাল

চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে প্রথমবারের মতো সীমিত পরিসরে চাষ হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান-১০০, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ধান’। ধানের আকার ছোট যা নাইজারশাইল, জিরাশাইল, দাতখানি বা কাটারির মতো। হালকা লালচে রংয়ের এ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। 

জানা যায়, একর প্রতি ৩৬-৪০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে, যা প্রচলিত জাত ব্রি ধান-২৮ এর চেয়ে বেশি। ধানের দানা পুষ্ট এবং আকার কিছুটা গোলাকার। 

ইতোমধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই শেষে তা অনেক কৃষক আগ্রহভরে চাল বানিয়ে ভাত রান্না করে খেয়ে বলেছেন, এ ধানের চাল বাজার মাতাবে। ঝরঝরে ভাত ঠিক কাটারিভোগের চালের মতো ছোট ও চিকন। এ চালে কেবল ঘ্রাণ নেই। তা ছাড়া সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বিশেষ করে জিঙ্কের উপস্থিতি প্রচলিত সব জাতের ধানের চেয়ে বেশি। অ্যাইমাইলোজের পরিমাণও বেশি। ভাত সুস্বাদু। আতপ ও সেদ্ধ উভয় চালই আকর্ষণীয় আকারের। তবে যেহেতু চাষ হয়েছে সীমিত জমিতে তাই এ চাল এ বছরই বাজারে আসছে না। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে আরও ৩-৪ বছর সময় লাগবে। তবে যারা সৌখিন চাষি বা ক্রেতা তারা চুক্তিভিত্তিতে এ ধান চাষ করে চাল বানিয়ে বাজারে আসার আগেভাগেই স্বাদ নিতে পারেন বা পারিবারিকভাবে খেতে পারেন। এ চালের সবচেয়ে বড় উপকার জিঙ্কের বেশি উপস্থিতি। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, রোগ-প্রতিরোধ ও খিদে বাড়াতে এ চাল উপকারী। 

খুলনার ডুমুরিয়ায় এক বিঘা জায়গায় এ ধান চাষ করান সৌখিন ধানচাষি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান। একই জমিতে ২০১০ সালে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৫০ ‘বাংলামতি’  চাষ করে সারাদেশে সাড়া ফেলেন। 

এবার বঙ্গবন্ধু ধান চাষ সর্ম্পকে তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবিত এ ধান সম্পর্কে জেনে আমি ব্রির সদর দপ্তর গাজীপুরে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে বীজের ব্যাপারে ব্রির গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিলে আমি সেখানকার প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে ৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করি। ওই বীজ দিয়েই ডুমুরিয়ার কার্তিকডাঙ্গা বিলে এক বিঘা জমিতে এ ধানের চারা লাগানোর ব্যবস্থা নিই। এবার ঈদুল ফিতরের প্রায় ৮/১০ দিন আগেই ধান কাটা হয়। কাটা ও মাড়াই শেষে ধান ভাঙিয়ে যে চাল পাই তাতে আমি অবাক। শতকরা ৯৫ শতাংশের বেশি চাল পূর্ণাঙ্গ রয়েছে অর্থাৎ ভাঙেনি; যা সাধারণত ধান কেটে শুকিয়ে এত তাড়াতাড়ি এ রকম ভালো চাল পাওয়া যায় না। 

এ চালের ভাতের ব্যাপারে তিনি জানান, নিঃসন্দেহে ব্রির এটি ভালো জাত হিসেবে কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসা শুরু হলে এটি ক্রেতার আগ্রহ অর্জন করবে। যারা আতপ ও সেদ্ধতে একটু চিকন ও ছোট আকারের চাল পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি খুবই পছন্দের হবে। ভালো মানের হোটেলগুলোতেও এ চালের ভাত ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়াবে। এ বছর বঙ্গবন্ধু ধানের সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে গোপালগঞ্জে ও এর মধ্যে কোটালিপাড়ায়। 

ব্রির গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি এক হাজার কেজি বীজ কৃষকদের দেন। তার মধ্যে অল্প কিছু নড়াইল ও বাগেরহাট এলাকাতেও গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তার প্রদত্ত বীজে ৫০০ একরেরও বেশি জায়গায় এ ধান চাষ হয়েছে, যা সারা দেশে চাষকৃত জমির এক তৃতীয়াংশের বেশি। গোপালগঞ্জের চাষিরা সাধারণত মোটা ধান চাষ ও মোটা চাল খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ধানের চাষ করে তারা খুশি। কারণ এ ধানের উৎপাদনও ভালো এবং রোগবালাই কম হয়েছে। বাজারে দু’চারজন ধান বিক্রি করলেও তার দাম পেয়েছেন প্রচলিত ২৮ জাতের চেয়ে বেশি। ফলে এ ধান আগামী মৌসুমে ব্যাপক চাষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ব্রি ধান-২৮ বা অন্য অনেক ধানের অবাদের স্থান দখল করে নেবে বঙ্গবন্ধু ধান।

তিনি আরও জানান, এ ধানের জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ ধানের উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার। প্রতিকেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম, অ্যামাইলোজ ২৬.৮% ও প্রোটিন ৭.৮%।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com