জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা

প্রকাশ: ০৭ জুন ২২ । ২০:৪৬ | আপডেট: ০৭ জুন ২২ । ২২:০৭

সমকাল প্রতিবেদক

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর জুরাইনে মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতিকে আটকানোর পর কথা-কাটাকাটির জেরে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল লোক। এতে এক সার্জেন্টসহ পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। জুরাইন রেল গেট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের বক্সটিও হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের আহত সদস্যরা হলেন—সার্জেন্ট আলী হোসেন, ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম ও শ্যামপুর থানার এসআই উৎপল চন্দ্র। 

তাদের মধ্যে সার্জেন্টকে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাতে ২১ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। পুলিশের অপর দুই সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আটক তিনজন হলেন— মো. রনি, তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশাত ভুইয়া ও শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভূইয়া। তাদের মধ্যে রনি-নিশাদ দম্পতি উল্টোপথে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করছে। 

রনি নিজেকে আইনজীবী এবং ‘বার্তা বিচিত্রা’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছেন। তার স্ত্রী ওই পোর্টালের সম্পাদক।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্টের দাবি করা টাকা না দেওয়ায় তাকে ও তার স্ত্রী-শ্যালককে ট্রাফিক বক্সে আটকানোর খবর পান তারা। সেখানে ওই নারীকে লাঞ্ছিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোক উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

শফিকুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সমকালকে বলেন, ওই তিনজন মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। তখন পেছনে বসা একজনের মাথায় হেলমেট ছিল না। এসময় সার্জেন্ট আলী হোসেন সেটি থামালে তর্কাতর্কি শুরু হয়। চালক নিজেকে সাংবাদিক ও আইনজীবী পরিচয় দিয়ে তর্ক জুড়ে দেন। তখন আরোহী নারীও সার্জেন্টের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাদের বক্সের ভেতরে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই আকস্মিকভাবে শত শত লোক এসে পুলিশ বক্সে হামলা শুরু করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের সরানোর চেষ্টা করলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

শফিকুরের মতো অনেকেই বলেন, তারা পুলিশ বক্সে নারীকে লাঞ্ছিত করার খবর পান। তাছাড়া ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজিতে এমনিতেই এলাকার লোকজন বিরক্ত। ঘটনার পর হয়তো তারই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টোপথে রনি মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আসছিলেন। আরোহী ছিলেন স্ত্রী নিশাত ও শ্যালক আরাফাত। তখন ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন সেটি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে রনি দুর্ব্যবহার শুরু করেন। ইউনিফর্ম পরা থাকলেও উল্টো তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরে দুইজনকে অদূরে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে সঙ্গে থাকা নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আশপাশে থাকা লোকজন নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে সার্জেন্টকে মারধর শুরু করে। পুলিশ বক্সটিও ভাংচুর করে। লোকজন দেখে চালক রনি সার্জেন্টের বুকের উপর পা তুলে চেপে বসে। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে আসা উৎসুক জনতার মধ্য থেকে কেউ সার্জেন্টের হাতে ছুরিকাঘাত করে।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি সাইদুল ইসলাম বলেন, সার্জেন্টের সঙ্গে ‘বডিওর্ন’ ক্যামেরা ছিল। ঘটনার পরপরই ওই ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন তারা। তাতে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এক ব্যক্তি এক নারীকে নিয়ে উল্টো পথে বাইক চালিয়ে আসছিলেন। ওই নারীর মাথায় হেলমেট ছিল না। এ সময় ট্রাফিক কনস্টেল বাইকসহ চালককে রাস্তার পাশে দাঁড়াতে বলেন। ট্রাফিক সার্জেন্ট তার কাছ থেকে কাগজপত্র দেখতে চান।

তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই নারী আরোহীর গায়ে কাউকে হাত দিতে দেখা যায়নি।

এদিকে পুলিশের সঙ্গে ওই ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন স্থানীয় লোকজন। এসব ভিডিওর একটিতে দেখা যায়, বাইকে থাকা ব্যক্তি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘প্রতিদিন মাস্তানি করেন, আজ আমি দেখাচ্ছি। এরপর তিনি উল্টো পুলিশ সার্জেন্টকে কাগজপত্র বের করতে বলেন। ওই সময় উত্তেজিত হয়ে সার্জেন্ট বলেন, তিনি পুলিশের পোশাক পরে আছেন, হাতে ওয়াকিটকি রয়েছে। অন্য কোনো পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। হঠাৎ করে নারী আরোহী বলে ওঠেন, ‘আমার গায়ে হাত দিলেন কেন?’

বাইক চালক রনিকে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে সেখান থেকেই তিনি নিজের ফেসবুকে লাইভ করেন। বলতে থাকেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ দেখেন, যারা প্রত্যেকদিন জুরাইনে চাঁদাবাজি করে, চাঁদাবাজি করার সময় আমার সঙ্গে কথা হয়। আমার সঙ্গে অসদাচরণ করে। একপর্যায়ে আমাকে মারধর করে। কোন আইনে আছে মারধর করা যাবে? কেন আপনি মারলেন?’

বক্সের ভেতরই সার্জেন্ট আলী হোসেন লাইভে তার ছেঁড়া জামা তুলে দেখান। তখন রনি বলেন, ‘এটা তো জনগণ ছিঁড়েছে।’ তাকে বলতে শোনা যায়, আমাকে শাবল দিয়ে জীবননাশের চেষ্টা করেছেন। এরপর একটি শাবল দেখানো হয়। তিনি ঘটনার সময়ে ৯৯৯-এ ফোন করলেও ব্যস্ত দেখায় বলে বলেন। বলতে থাকেন, ট্রাফিকের কোন আইনে আছে? গাড়ির লাইসেন্স দেখানোর পর সে আমার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। এরপর লাইসেন্স দেখিয়ে বলেন, এই যে গাড়ির লাইসেন্স। টাকা দিতে অস্বীকার করি, তখন তারা আমাকে শাবল দিয়ে আঘাত করে। উত্তেজিত জনতা কীভাবে তাদের থানা ভাঙচুর করছে দেখেন।’ ওই সময়ে লাইভ ভিডিওতে ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। তখন তিন পুলিশ সদস্যকে বক্সের এক পাশে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল ইসলাম জানান, গুজব ছড়িয়ে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। পুলিশের স্থাপনাও ভাংচুর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আটক তিনজনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা, হামলা ও ভাংচুরের মামলা করা হয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com