ইলোরার 'স্বপ্নডানা'

প্রকাশ: ১৯ জুন ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

লাবণী মণ্ডল

করোনা মহামারিতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখন নারী ঘরে বসে যুক্ত হন বিভিন্ন কাজে। শুরু হয় হাজারো নারীর উদ্যোক্তা জীবন। তেমনই একজন ইলোরা আফরোজ রিমু 'স্বপ্নডানা'র পরিচালক। যিনি পৃথিবীকে স্বপ্নের মতো ভালোবাসেন। নতুন নতুন চিন্তা করতে ভালোবাসেন। নিজের স্বপ্নকে বড় থেকে বড় করতে চান। যে স্বপ্ন থেকে উদ্যোক্তা জীবনকে বেছে নেন।

ইলোরা পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষের পরপরই চাকরিতে যুক্ত হন। একটি গার্মেন্টসের মানবসম্পদ বিভাগে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন। এর মধ্যে আগ্রহের জায়গা থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিজেকে শানিত করার জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিআইএম) থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেন। তবে প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সহযোগিতার কেউ না থাকায় চাকরিতে ফেরা হয়নি। হতাশাও খানিক ভর করে। ইলোরা বলেন, 'যেখানে মানুষ চাকরি পায় না, সেখানে চাকরি পেয়েও না করতে পারার যাতনা আমাকে কুরে কুরে খেত। নিজের মা এখনও চাকরি করেন, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি থেকেও তা কাজে লাগাতে পারলাম না।'

২০২০ সাল। উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্সের ফেসবুক পেজে ইলোরা যুক্ত হন এক বন্ধুর মাধ্যমে। এরপরই শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। ১৭ জুলাই 'স্বপ্নডানা' নামের যাত্রাপথ শুরু হয়। যে নামটির সঙ্গে ইলোরার স্বপ্নের কথা জড়ানো। তিনি প্রথমে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত টেক্সটাইলের বেডশিট, বেডকভার, গামছা, লুঙ্গি নিয়ে কাজ শুরু করেন। খুলনায় বসবাস করার সুবাদে সুন্দরবনের খাঁটি মধু নিয়েও কাজ শুরু করেন। এরপর আরও বেশ কয়েকটি খাদ্যপণ্য যোগ হয়।

মাত্র ১০ হাজার টাকার পণ্য দিয়ে যে উদ্যোক্তা জীবন শুরু, এখন সে উদ্যোক্তার মাসিক আয় লক্ষাধিক টাকা। তিনি বেকার জীবনকে মেনে নিতে পারেননি, যার কারণে উদ্যোক্তা জীবনে পেয়েছেন সফলতা। তাঁর বন্ধুরা প্রতিনিয়ত পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন তাঁর উদ্যোগের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরাই। এরপর সবচেয়ে বড় সহযোগিতা পেয়েছেন জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে। তিনিই ইলোরার উদ্যোগের নেপথ্য নায়ক। মা-বাবাও সাহায্য করেন।

স্বপ্নডানার ঋতুভিত্তিক আচার, চুঁইঝালের আচার, কুমড়ো বড়ি, হানি নাটস, নিজস্ব শ্রমিক দ্বারা তৈরীকৃত খেজুরের গুড়, গোলপাতার গুড়, দেশি সরিষা কিনে ভাঙানো তেল মানুষের ভেতর বিশ্বাস জুগিয়েছে। ভেজালের এ যুগে স্বপ্নডানা যেন এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। এ প্রসঙ্গে ইলোরা বলেন, 'আমার উদ্যোগের সর্বাধিক বিক্রীত পণ্য হলো খাদ্যপণ্য। ভেজালের এই যুগে খাঁটি পণ্য সরবরাহ করার চ্যালেঞ্জটা আমার কাছে খুব আনন্দের ছিল। কারণ খাদ্যপণ্যে মানুষের আস্থা পাওয়া খুব সহজ। একবার পণ্য ক্রেতার মন কেড়ে নিলে, বারবার অর্ডার পাওয়া সম্ভব। এ জন্য আমার পরিশ্রম বেশি হলেও তৃপ্তি অনেক।'

ইলোরা শুধু একজন উদ্যোক্তা নন। সমাজসচেতন ব্যক্তিও। নারী প্রশ্নে রয়েছে তাঁর সুদৃঢ় বক্তব্য। তিনি চান সমাজের প্রতিটি নারীর নিজস্ব একটি পরিচয় থাকুক, সমাজবাস্তবতায় সম্মানজনক একটি অবস্থান তৈরি হোক। নারীকে তাঁর কাজের মাধ্যমে মানুষ জানুক। তিনি বিশ্বাস করেন তাঁর স্বপ্নডানার ছোট্ট একটি কারখানা হবে, যেটি লুঙ্গির বা তোয়ালের জন্য বিখ্যাত হবে। এরপর বড় কোনো শহরে একটি শোরুম থাকবে কুমারখালীর তাঁত পণ্য নিয়ে। স্বপ্নকে থামিয়ে দিতে নয়, স্বপ্নকে বাড়িয়ে দেওয়াটাই তাঁর অদম্য ইচ্ছা।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com