সাক্ষাৎকার

ব্যাপকভাবে রপ্তানিই লক্ষ্য

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০২ জুলাই ২২ । ০২:৫২ | প্রিন্ট সংস্করণ

মকবুল্লা হুদা চৌধুরী, সেলস ডিরেক্টর, বাটারফ্লাই

সাড়ে তিন দশক আগে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ইলেকট্রনিকস এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করছে বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেড। দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে বাটারফ্লাই ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এখন তাদের টার্গেট আন্তর্জাতিক বাজারে দৃঢ়ভাবে পা রাখা। বাটারফ্লাই গ্রুপের উত্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সমকালকে বিশদ জানিয়েছেন কোম্পানির সেলস ডিরেক্টর মকবুল্লা হুদা চৌধুরী।

সমকাল: ইলেকট্রনিকস সামগ্রী এক সময় ধনীরা ব্যবহার করতেন। বর্তমানে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। ইলেকট্রনিকস পণ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে বাটারফ্লাই ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

মকবুল্লা হুদা চৌধুরী: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ পরিষেবা গ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় হোম অ্যাপ্লায়েন্সের চাহিদা আগের তুলনায় ব্যাপক বেড়েছে। এখানে বাটারফ্লাই গ্রুপ সহজ কিস্তির মাধ্যমে পণ্য কেনার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণে আরও বেশি ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে বাটারফ্লাই গ্রুপ ২৫০টি শোরুম ও তিন শতাধিক ডিলারের মাধ্যমে ক্রেতাকে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

অন্যান্য সামগ্রীর দাম গত ২০ বছরে অনেক বেড়ে গেলেও ইলেকট্রনিকস পণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি। যেমন ২০ বছর আগে একটি মাঝারি রেফ্রিজারেটর বা টিভির দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ছিল। বর্তমানেও প্রায় সেই দাম আছে। এর কৃতিত্ব বাটারফ্লাইসহ অন্যান্য দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারীদের। বাটারফ্লাই বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি রেফ্রিজারেটর দেশেই উৎপাদন করছে। ফলে ইলেকট্রনিকস পণ্যের দাম কমে এসেছে। দেশের প্রতিটি শহর ও জেলায় বাটারফ্লাই গ্রুপের শোরুম এবং বিভিন্ন জায়গায় কারখানা থাকায় অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

সমকাল: বাটারফ্লাইয়ের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মকবুল্লা হুদা চৌধুরী: একটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হওয়া অত্যন্ত জরুরি। বাটারফ্লাই গ্রুপ ১৯৮৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। বাটারফ্লাই আড়াইশ শোরুমের এক-তৃতীয়াংশে ম্যানেজার হচ্ছেন নারী। আমাদের প্রকৌশলী এবং অফিসেও নারী কর্মচারীর অগ্রাধিকার রয়েছে। কর্মচারীর সুবিধার্থে অফিসে যাতায়াত ও লাঞ্চের ব্যবস্থা কোম্পানি করে থাকে। এ ছাড়া বছরে তিনটি বোনাস, প্রফিট বোনাস, লিভ পে, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ছাত্রবৃত্তিসহ নানা সুবিধা প্রদান করে আসছে।

আমাদের নারী কর্মচারীদের জন্য অফিসে এবং কারখানায় ডে-কেয়ারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা তাঁদের ছোট সন্তানদের জন্য চিন্তিত না হন। বাটারফ্লাই গ্রুপ তাঁদের কর্মচারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেন প্রত্যেক কর্মচারী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে উপভোগ করতে সক্ষম হন এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পর্ক সবসময় সুদৃঢ় রেখে কোম্পানিকে আরও বেশি গতিশীল করা যায়।

সমকাল: দেশীয় শিল্প বিকাশে আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন।

মকবুল্লা হুদা চৌধুরী: সংশ্নিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কাঙ্ক্ষিত সাহায্য-সহযোগিতা পেলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে এ দেশ থেকে ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যাপকভাবে রপ্তানি হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বাটারফ্লাই সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

সমকাল: এ ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করেন কি?

মকবুল্লা হুদা চৌধুরী: সরকার শিল্প উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজস্ব নীতির ঘন ঘন পরিবর্তন কোম্পানিগুলোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

সমকাল: বাটারফ্লাইয়ের বৃহৎ কোম্পানিতে রূপান্তরের পেছনের গল্পটা জানতে চাই।

মকবুল্লা হুদা চৌধুরী: জনাব এম এ মান্নান ১৯৮৭ সালে বাটারফ্লাই গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুটা ছিল সেলাই মেশিনের ব্যবসা দিয়ে। তবে বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ইলেকট্রনিকস এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করছে বাটারফ্লাই। এ পর্যায়ে পৌঁছতে এম এ মান্নানের দিকনির্দেশনাই পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে। তিনি বলতেন, পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। অভিজ্ঞতা জিনিসটি কেউ কাউকে শেখাতে পারে না। যতক্ষণ না নিজে অভিজ্ঞতাটি অর্জন করা যায়, ততক্ষণ সত্যিকারভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা যায় না। এম এ মান্নানের মতে, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। পরিশ্রমের মাধ্যমেই সৃজনশীল বিকশিত হয়। পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতা প্রতি পদে সহায়ক হয়।

এই আদর্শকে অনুসরণ করে এবং ৪টি মূলমন্ত্র বজায় রেখে বাটারফ্লাই এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হলো- স্থিতিশীলতা, বিকাশ, আস্থা ও পরিবেশবান্ধব। এ চারটি নীতি বাটারফ্লাই গ্রুপের ভিত্তি। ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জনই বাটারফ্লাই গ্রুপের মূল লক্ষ্য।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com