‘বাইচ্ছা-কাইচ্ছা লইয়া খাইতাম পাররাম না, ঘর ঠিক করতাম কেমনে?’

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২২ । ১৮:৪২ | আপডেট: ০২ জুলাই ২২ । ১৮:৪৪

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

এক মাস হই যার পানির লগে যুদ্ধ কইররা কোন মতে বাইছা আছি। ঘর থাকি পানি নামলেও দাইরর হিরর লগে (বারান্দার কানায় কানায়) পানি লাগি থাকছে। হিবায় দি (অন্য দিকে) পানি নামার লগে লগে টিন ছুইট্টা পড়ি যার। বাইচ্ছা-কাইচ্ছা লইয়া খাইতাম পাররাম না, ঘর ঠিক করতাম কেমনে?

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার  হামরকোনা গ্রামের বানভাসি শিরিনা বেগম (৪০) হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ঘরের বারান্দা মেরামত করা অবস্থায় এই কথাগুলো বলছিলেন।

শনিবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরের হামরকোনা গ্রামে গিয়ে এভাবে অনেক বানভাসিকে নিজেদের শেষ আশ্রয়টুকু মেরামত করতে দেখা যায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হামরকোনা, নতুনবস্তি, ব্রাহ্মণগ্রাম, দাউদপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত। গত ১৫ জুন থেকে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা উজানের ঢলের পানিতে নদীর তীররক্ষা বাঁধের কয়েকটি জায়গা উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। পরবর্তীতে এসব সব স্থান দিয়ে ধারাবাহিকভাবে পানি প্রবেশ করায় বাঁধের অন্তত ৬টি স্থান ভেঙ্গে যায়।

বাধের এসব ভাঙ্গা দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এতে পানি কিছুটা কমলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। হামরকোনা গ্রামের মাদ্রাসার নিকটবর্তী স্থান দিয়ে অবিরত পানি প্রবেশ করায় স্বাধীন মিয়া, বরকত মিয়াসহ অনেকের ঘরবাড়িতে এখনও কোমড়সম পানি রয়েছে। তারা ছেলে-মেয়ে নিয়ে স্থানীয় মাদ্রাসায় বসবাস করছেন।

নিজেদের ঘরে ফেরার তাগিদে কয়েকজন মিলে টিন, কচুরীপানা ও আবর্জনা বাঁধের মধ্যে ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টায় কাজ করছিলেন। এ সময় বরকত মিয়া বলেন চেয়ারম্যান মেম্বারের খবর নাই নিজের প্রয়োজনে ঘর-দুয়ার রক্ষায় বাঁধ মেরামতের চেষ্টা কররাম। কোনদিন যে পানি হরব (শুকাবে) ইতা আলতায় জাননইন।

স্বাধীন মিয়া জানান, প্রতিদিন শরীল খাটাইয়া যা আয়-উপার্জন হয় তা দিয়া হামেশার খাই খরচ চলে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে বানের পানি ঘর-বাড়িতে থাকায় কাম-কাজ যাইতাম পাররাম না। তাই খুব কষ্টে দিনাতিপাত কররাম।

এ বছর স্থানীয় আজাদ বখত উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও হামরকোনা গ্রামের প্রিয়া আক্তার জানান, বন্যার কারণে এবারের পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় পড়ালেখায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বানের পানি ঘওে ওঠায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই ও প্র্যাক্টিক্যাল খাতায় নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।

তিনি আরও জানান আমার রিক্সাচালক পিতা পক্ষে এ অতিরিক্ত ব্যয় ভার বহন খুবই কষ্টকর হবে। খলিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী বলেন, ভাঙ্গা রাস্তা মেরামতের বরাদ্দ আসলে সংস্কার করা হবে।

এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরদার মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, সদর উপজেলার কুশিয়ারা তীরের হামরকোনাসহ বিভিন্ন বন্যা উপদ্রুত গ্রাম সরেজমিন পরির্দশন করেছি। তীররক্ষা বাঁধকে রাস্তায় পরিণত করায় প্রতিবছর ভাঙ্গা-গড়ায় সরকারি টাকার অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে নদী তীরবর্তী মানুষ বানের কবল থেকে স্থায়ী ভাবে মুক্তি পাচ্ছে না।

ফলে বাঁধ এবং রাস্তা পৃথক করে পরিকল্পিতভাবে সংস্কার কাজের প্রকল্প গ্রহণ করা হলে সাধারণ মানুষ নিত্যনৈমত্তিক দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, পানি কমার পরপর ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে এবং বরাদ্দ প্রাপ্তির পর সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com