
আলোচনায় সর্বদলীয় সরকার
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তুহিন তৌহিদ

চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সরকার গঠনে গতকাল শুক্রবারও আইনপ্রণেতাদের তাগিদ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, নতুন এ সরকারকে কি মেনে নেবে শ্রীলঙ্কার জনগণ। দেশটির একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিক্ষোভকারীরা নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের দাবি তুলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা মনে করেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট কাটতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, এর বাস্তবায়ন হবে কবে বা এ সরকার আদৌ গঠন সম্ভব কিনা- এ রকম নানা প্রশ্ন সামনে আসছে।
জানা যায়, সর্বদলীয় সরকারে শ্রীলঙ্কার সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। দেশ ছেড়ে পালানো গোটাবায়া রাজাপাকসের দল এসএলপিপির প্রতিনিধিও থাকবেন এতে। এ ছাড়া প্রধান রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি অব শ্রীলঙ্কা (সিপিএসএল), ডেমোক্রেটিক লেফট ফ্রন্ট (ডিএলএফ), লঙ্কা সামা সমজা পার্টি (এলএসএসপি), ন্যাশনাল লিবারেশন পিপলস পার্টি (এনএলপিপি), শ্রীলঙ্কা পিপলস পার্টির (এসএলপিপি) ও সমাজি জনা বালাওয়েগায়ার (এসজেবি) প্রতিনিধিরাও থাকবেন এ সরকারে। এ নিয়ে গত বুধবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের তাগিদ এসেছে।
প্রশ্ন হলো- শ্রীলঙ্কার সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংকটময় পরিস্থিতিতে এক কাতারে দাঁড়াবেন কিনা। এ প্রশ্নের উত্তর পেতে দেশটির রাজনৈতিক বিভাজনের চিত্র কেমন, সেটা দেখা জরুরি। শ্রীলঙ্কার চলমান সংকটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারকে দুষছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের অনুগত কিছু আইনপ্রণেতা ও আমলাদেরও দোষ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রাজাপাকসের দল এসএলপিপিকে ঢালাওভাবে দোষ দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, সংকটের সময় দলটির অনেক আইনপ্রণেতা অন্য দল বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রতিবাদী হয়েছিলেন। তাই রাজনৈতিক বিভাজনটা খুব বড় নয়।
কলম্বো থেকে প্রকাশিত ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কার ক্রিশ্চিয়ান কাউন্সিল 'জনগণের আওয়াজ'কে সম্মান দেখিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, দেশটির বামপন্থি দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার গঠনের দাবি তুলেছে। তারা বলছে, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই; কেবল গোটাবায়ার পদত্যাগে লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হলে বর্তমান মন্ত্রিসভার সব সদস্য পদত্যাগ করবেন। যত দ্রুত সম্ভব তাঁরা নতুন সরকারের কাছে দেশ পরিচালনার ভার হস্তান্তর করবেন। এ নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরাও ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, শ্রীলঙ্কা কী সর্বদলীয় সরকারের মাধ্যমে তাদের সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করবে, নাকি অদূরভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগোবে। দেশটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে গেলে সর্বদলীয় সরকার আদতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবেই কাজ করবে।
চরম এ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্বের। তাঁর কাজ হবে একটা ঋণে নিমজ্জিত ও সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে থাকা জাতিকে টেনে তুলে আনা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিলকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে। সম্প্রতি আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, চলমান পরিস্থিতি থেকে দেশকে টেনে তুলতে পারবেন তিনি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তাঁর সময় লাগবে দেড় থেকে দুই বছর। তবে সামনের বছরটি হবে লঙ্কানদের জন্য কঠিন। কিন্তু সেই রনিলের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না বিক্ষোভকারীরা। তাঁরও পদত্যাগের জোর দাবি উঠেছে। ফলে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি সামনে কোন দিতে মোড় নেয় তা এখনই বলা মুশকিল।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com