
আমিরাতে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশিদের আধিপত্য
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২২ । ১৪:১৯ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২২ । ১৪:১৯
কামরুল হাসান জনি, ইউএই

আরব আমিরাতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পরিচালিত পোশাক কারখানা
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের হাত ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান শহরে সুঁই সুতো আর আধুনিক যন্ত্রপাতির মেলবন্ধনে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে লাখো কোটি তৈরি পোশাক। দীর্ঘদিন ধরে আমিরাতের এই প্রদেশে পোশাক উৎপাদনের একচেটিয়া বাজার ধরে রেখেছেন বাংলাদেশিরা। ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করলেও ক্রমান্বয়ে ব্যবসায় সফলতা পেয়েছেন অনেকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমিরাতের তৈরি পোশাক উৎপাদনের অন্যতম বড় বাজার এটি। যেখানে প্রায় ২ হাজার গার্মেন্টস ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১০ হাজারের অধিক বাংলাদেশি কর্মী এ শিল্পে জড়িত। আজমানের এক বাজারেই রয়েছে বাংলাদেশিদের প্রায় ৫ শতাধিক তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়াও রপ্তানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আলাদা শ্রেণিবিন্যাস আছে এখানে। দেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক বাজারজাত করেও এ ব্যবসায় আধিপত্য ধরে রেখেছেন অনেক বাংলাদেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিমাসে ২৫ কোটি টাকার মতো ব্যবসায়িক টার্নওভার হয়। এখান থেকে প্রতিমাসে দেশে কয়েক কোটি টাকা রেমিট্যান্স যায়।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার মেয়ে শেফালী আক্তার আঁখি এই বাজারের তৈরি পোশাক শিল্পের একজন উদ্যোক্তা। ২০ বছরের ব্যবধানে গড়ে ওঠেছে তার পাঁচটি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রায় ২ শতাধিক কর্মী কাজ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান, ওমান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, মিশরসহ বেশ কিছু দেশে রপ্তানি হয় তার প্রতিষ্ঠানে তৈরিকৃত পণ্য।
শেফালী আক্তার আঁখি বলেন, নতুন ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তুলতে দেশীয় উদ্যোগে আমিরাতে অন্তত বছরে একবার হলেও পোশাক শিল্প মেলা করা দরকার। দেশের বাইরে তৈরি পোশাক শিল্পের এমন উৎপাদন ও ব্যবসা বাড়াতে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এইদিকে মনোযোগ দিতে পারেন। তাতে প্রবাসী উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন।
দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানও একই বাজারের ব্যবসায়ী। পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে এখানে নয় বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। তার শুরুটা একজন সাধারণ পোশাক শ্রমিক হিসেবে হলেও নিয়মিত সুঁই সুতার কারিগর হিসেবে তার অধীনে বর্তমানে কাজ করছেন ৩০ জন কর্মী। তার প্রতিষ্ঠানে মাসে ব্যবসায়িক লেনদেন ৩ লাখ দিরহাম ছাড়িয়ে যায়।
বরিশাল মুলাদী উপজেলার আরেক ব্যবসায়ী দিদারুল আলম প্রায় ১৩ বছর ধরে নিজস্ব ফ্যাক্টরি পরিচালনা করছেন এখানে। শুরুতে সামান্য অপারেট হিসেবে এই পেশায় এলেও ২০০৯ সালে নিজের মালিকানায় তৈরি পোশাক উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ে হয়ে ওঠেন সফল উদ্যোক্তা।
দিদারুল আলম বলেন, করোনার কারণে অন্যান্য সেক্টরে ক্ষতি হলেও এখানকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন পিপিই, মাস্ক ও মেডিকেল সরঞ্জাম তৈরি করে। কাজের মাত্রা গতিশীল থাকায় তখন ক্ষতির মুখে না পড়লেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে নিয়মিত বাণিজ্য কিছুটা থমকে আছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যবসা বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে রেমিট্যান্স।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশটির আজমান শহরে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশিদের বৃহত্তর একটি পাইকারি বাজার। স্থানীয়ভাবে এটি ‘বাঙালি মার্কেট’ নামে পরিচিত। প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য আসে এ বাজারে। এখানে তৈরি পোশাক কেন্দ্রীক বাংলাদেশিদের প্রায় পাঁচ শতাধিক পাইকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছোট পাইকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মাসে ৫-১৫ হাজার পিস পোশাক আমদানি করলেও বড় পাইকারদের আমাদানির পরিমাণ এক থেকে দেড় লাখ পিস ছাড়িয়ে যায়। দেশটির খুচরা ব্যবসায়ীরা এ পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনে ভোক্তা চাহিদা মেটান। আমিরাতের চাহিদা পূরণ করে এসব তৈরি পোশাক পুনরায় রপ্তানি হয় সৌদি আরব, ইরান, ওমান, মিশর, তুর্কি সহ বেশ কিছু দেশে। এ ছাড়া আফ্রিকা থেকেও অনেক ব্যবসায়ী আসেন এই বাজারে। তারা বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত তৈরি পোশাক নিজ দেশে পুনরায় আমদানি করেন। এতে করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মুনাফা বাড়ে।
ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমিরাতের সঙ্গে সমুদ্রপথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় কয়েকটি দেশ ঘুরে এসব বিক্রয়জাত পণ্য আনতে হয়। দেশ থেকে মালামাল আমিরাতে পৌঁছাতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ দিন। শিপমেন্ট জটিলতা ও সময়ের দূরত্ব কমানো গেলে এই বাজারে দেশীয় তৈরি পোশাক রপ্তানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com