
ভোলায় উচ্চ ব্যয়ে গ্যাসকূপ খনন শুরু করছে গ্যাজপ্রম
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২২ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
হাসনাইন ইমতিয়াজ

ছবি: ফাইল
ভোলায় উচ্চ ব্যয়ের গ্যাসকূপ খননের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রাশিয়ার বহুজাতিক কোম্পানি গ্যাজপ্রম। প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলায় তিনটি কূপ খনন করছে কোম্পানিটি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সকে বাদ দিয়ে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়ায় দ্বিগুণের বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। টেন্ডার ছাড়াই কাজ পেয়েছে গ্যাজপ্রম।
প্রথমে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী-১ অনুসন্ধান কূপ খনন করবে রাশিয়ার কোম্পানিটি। দু-একদিনের মধ্যে খননকাজের উদ্বোধন করা হবে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। অন্য দুটি কূপ হলো- ভোলা নর্থের অনুসন্ধান কূপ ইলিশা-১ ও উন্নয়ন কূপ ভোলা নর্থ-২। গ্যাজপ্রমের এই অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খনন বর্তমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা। সংস্থাটি বলছে, ভোলায় বিপুল গ্যাসের মজুত রয়েছে। অনুসন্ধানে আরও গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৫ মার্চ ভোলার টবগী কূপ খননের জন্য প্রকল্প সাইট গ্যাজপ্রমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাপেক্স গ্যাজপ্রমকে প্রয়োজনীয় ভূতাত্ত্বিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোলা একটি আবিস্কৃত গ্যাসক্ষেত্র। বাপেক্স এটি আবিস্কার করেছে। সেখানে একাধিক কূপও খনন করেছে দেশি প্রতিষ্ঠাটি। গ্যাজপ্রমকে এখন যে তিনটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোও বাপেক্সের দেওয়া ভূতাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানেই কূপ খনন করবে গ্যাজপ্রম।
এই তিন কূপ খননে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের যে ব্যয় হতো, তার চেয়ে বেশি খরচে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে টেন্ডার ছাড়া এই কাজ দেওয়ায় কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা হয়নি। এ রকম কূপ খননে বাপেক্সের সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৮৫ কোটি টাকা। সেখানে গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হচ্ছে কূপপ্রতি প্রায় ২০০ কোটি টাকা (২ কোটি ১২ লাখ ডলার)।
জানা গেছে, গ্যাজপ্রম এই তিনটি কূপ খননের জন্য ৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দর প্রস্তাব করে। আলোচনা শেষে জ্বালানি বিভাগ ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার দর চূড়ান্ত করে।
গত ১১ বছরে গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মিলিয়ে ১৭টি কূপ খনন করেছে। এর মধ্যে প্রথম ১০টির চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ১৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিটি কূপে কোম্পানিটি নিয়েছিল ১ কোটি ৯০ লাখ ডলারের কিছু বেশি। পরের যে ৭টি কূপ গ্যাজপ্রম খনন করেছে, তার প্রতিটির চুক্তিমূল্য ছিল একটি ৬০ লাখ ডলারের কিছু বেশি। গ্যাজপ্রম বেশি দামে খনন করলেও এসব কূপ থেকে গ্যাস পাওয়ার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
প্রথম ধাপে খনন করা ১০টি কূপের মধ্যে ৫টি বালু-পানি উঠে বন্ধ হয়ে যায়। এগুলো হচ্ছে তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের ২০ ও ২১ নম্বর কূপ, সেমুংতাং ৬, বেগমগঞ্জ ৩ ও শাহবাজপুর ৪। পরে এই পাঁচটি কূপে ফের বাপেক্সকে সংস্কার করতে হয়।
ভোলায় গ্যাসের সন্ধানে প্রথম ভূকম্পন জরিপ চালানো হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। প্রথম অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয় ১৯৯৪ সালে। এর পর আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ১১ মে থেকে ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে এখন দৈনিক ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এই গ্যাসক্ষেত্রে দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু শাহবাজপুর নয়, পুরো ভোলাতেই গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলা বেঙ্গল বেসিনভুক্ত। সেখানে যে ভূ-কাঠামোয় গ্যাস পাওয়া গেছে, তার ভূতাত্ত্বিক নাম 'স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার'। দেশের অন্য সব গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে সুরমা বেসিনে।
শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে ভোলার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে (২২৫ ও ৩৫ মেগাওয়াট) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় শিল্ড ও আবাসিক গ্রাহকদেরও গ্যাস দেওয়া হচ্ছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com