কক্সবাজারের চকরিয়া

চিংড়ি চাষের ৩৬১ একর খাসজমি ভাগবাটোয়ারা

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২২ আগস্ট ২২ । ০২:৪৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার

ছবি: ফাইল

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় চিংড়ি চাষের জন্য সরকারি ইজারার ৩৬১ একর খাসজমির বড় অংশ পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। মৎস্যজীবী না হয়েও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী, মেয়ে ও স্বজনরা বরাদ্দ পেয়েছেন চিংড়ি মহালের জমি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পেয়েছেন বড় অংশ। জমি ইজারার সরকারি তালিকা বিশ্নেষণ করে তাঁদের বরাদ্দ পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তালিকা অনুযায়ী, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী দিলতাজ বেগম চিংড়ি মহালের ১০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁদের মেয়ে সেলিনা আকতারের নামেও বরাদ্দ মিলেছে। গিয়াসের আরেক মেয়ের শ্বশুর চকরিয়া পৌরসভার বাজারপাড়া এলাকার এম গিয়াস উদ্দিনের নামেও বরাদ্দ হয়েছে ৯ একর জমি। এ ছাড়া ৯ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছেন চকরিয়া দরবেশ কাটার প্রয়াত কবির আহমেদের ছেলে শাহেদ হোসাইন। ঢেমুশিয়ার ছিদ্দিক আহমেদের ছেলে মহিউদ্দিন বরাদ্দ পেয়েছেন সাড়ে তিন একর জমি। শাহেদ হোসাইন ও মহিউদ্দিন দু'জনই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। বরাদ্দ পেয়েছেন চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী সাংগঠনিক শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী সুমাইয়া ইসলামও। তিনি পেয়েছেন ৯ দশমিক ৭৯ একর।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চিংড়ি চাষে খাসজমি বরাদ্দে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানা হয়নি। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় এ কাজ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। তিনি আবার কক্সবাজার জেলা চিংড়ি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যও।

গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'জমি বরাদ্দ পাওয়া আমার মেয়ে এখন আমার পরিবারের সদস্য নয়। সে অন্য পরিবারের সদস্য। আর প্রভাব খাটানোর প্রশ্নই আসে না।' তবে তাঁর মেয়ে সেলিনার স্বামী কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রকৌশলী সাইফুদ্দিন বলেন, তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে চিংড়ি চাষের জমির জন্য কোনো আবেদন করেননি। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রকৃত মৎস্যচাষিদের উৎসাহিত করতে কক্সবাজারে চিংড়ি চাষের জন্য জমি ইজারা দিয়ে আসছে ভূমি মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চিংড়ি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তাবে এ জমি ইজারা দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলায় ২৩৭ জনের নামে ৩৮টি চিংড়ি মহালের ৩৬১ দশমিক ৩৫ একর খাসজমি ইজারার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এখন ইজারাপ্রাপ্তদের জমি রেজিস্ট্রির কাজ চলছে।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব জসিম উদ্দিন পাটওয়ারী স্বাক্ষরিত অনুমোদনপত্রে বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলা চিংড়ি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশে আবেদনকারীদের অনুকূলে ১০ বছর মেয়াদে বার্ষিক একরপ্রতি দুই হাজার টাকা ইজারামূল্যে বন্দোবস্তের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হলো।

জেলা চিংড়ি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ জানান, মন্ত্রণালয়ে ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল ২০১৯ সালে। কারোনার কারণে এতদিন কার্যক্রম স্থগিত ছিল। প্রস্তাব পাঠানোর সময় তিনি চিংড়ি ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন না। তবে নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ চিংড়ি জমি ইজারা পেয়ে থাকলে তা বাতিলের সুপারিশ করা হবে।

জেলা প্রশাসন জানায়, চিংড়ি চাষের জমি ইজারা পেতে হলে বেশ কয়েকটি শর্ত অবশ্যই মানতে হবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইজারাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী অথবা মৎস্য প্রক্রিয়াকারী হতে হবে। পরিবারের একাধিক সদস্যের জমি ইজারা পাওয়ার সুযোগ নেই।

এসব শর্তের কোনোটিই মানা হয়নি চিংড়ি চাষের জমি বরাদ্দ পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে জেলা চিংড়ি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে জানান, কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস প্রস্তাব করার পর বিরোধিতার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ, প্রশাসনই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেনি। তাঁদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিরোধিতা করলে পরে নানা জটিলতায় পড়তে হয়। তাই কেউ বিরোধিতা করেননি।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com