অন্যদৃষ্টি

জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ০১:৩৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

সুরজিত সাহা রায়

মানবদেহের জন্য জিঙ্ক খুব প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। মানবদেহের ৩০০টি এনজাইমের সঙ্গে জিঙ্ক সরাসরি অংশগ্রহণ করে, যেগুলো দেহের অনেক বিপাকীয় কাজে অংশ নেয়। জিঙ্কের অভাবে মুখের রুচি, স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়; ওজন কমে যায় অথবা মুটিয়ে যায়। চুল পড়া, হজমে সমস্যা, জটিল ধরনের অবসাদগ্রস্ততা, বন্ধ্যত্ব, হরমোনের সমস্যা; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মনোযোগ ও স্মরণশক্তি হ্রাস; ত্বকের ক্ষত সারতে বিলম্ব ও স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয়। মানবদেহ জিঙ্ক সংরক্ষণ করে রাখতে পরে না বিধায় প্রতিদিনই একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ১১ মিলিগ্রাম এবং নারীর ৮ মিলিগ্রাম জিঙ্ক গ্রহণ করতে হয়। অন্তঃসত্ত্বাদের দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম, দুগ্ধদানকারীদের ১২ মিলিগ্রাম এবং শিশুদের দৈনিক ৩-৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক প্রয়োজন। জিঙ্কের ভালো উৎস মাংস, ডিম, দুধ, পনির, বাদাম, চিংড়ি দামি খাবার হওয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তা নাগালের বাইরে। এ ছাড়া লাল মাংস ও চিংড়িতে কোলেস্টেরল বেশি থাকায় বয়স্ক জনগণ সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শে এসব খাবার এড়িয়ে চলেন। এ অবস্থায় খাদ্যের মাধ্যমে জিঙ্কের জোগান নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ছয়টি জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি ধানের জাত এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি জিঙ্কসমৃদ্ধ গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত জিঙ্কসমৃদ্ধ জাতগুলোতে প্রতি কেজি চালে ২২ থেকে ২৭ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে, যেখানে সাধারণ চালে থাকে মাত্র ১৫ মিলিগ্রাম। প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের ভাত খেলে একজন ভোক্তা প্রতিদিন ৯-১০ মিলিগ্রাম জিঙ্ক পেতে পারে, যা দৈনিক চাহিদার প্রায় সমান।

কিন্তু চাল ছাঁটাই ও পলিশ করলে এর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান প্রায় সবটাই নষ্ট হয়ে যায়। মিলাররা ছাঁটাইকৃত চাল বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন এবং উপজাত হিসেবে যে কুঁড়া পাওয়া যায় সেটাও মাছের খাদ্য হিসেবে বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। ভোক্তারা না বুঝে বা নিরুপায় হয়ে বেশি দামে এসব চালের নামে আবর্জনা কিনে খাচ্ছেন। কৃষকদেরও যেসব জাতের ফলন ও বাজারদর বেশি সেসব জাতের আবাদ বাড়াতে হবে। অর্থাৎ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে হবে। কৃষি শ্রমিকের খরচ সাশ্রয় ও দ্রুততার সঙ্গে কম সময়ে আবাদ ও কর্তন কাজে কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সমকালীন চাষাবাদ ও সমবায়ের মাধ্যমে আবাদ করতে হবে। এর ফলে ধানের ফলন বৃদ্ধি, সফলতার সঙ্গে রোগবালাই, পোকা-মাকড় দমন, কৃষকের প্রযুক্তিজ্ঞান বৃদ্ধি, বাজারমূল্য প্রাপ্তিতে কৃষক লাভবান হতে পারবেন। যেমন- কোনো উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান ৭৪-এর আবাদ হলে ৩ হাজর টন ধান উৎপাদন হবে; ফড়িয়া বা মিলাররা কৃষকদের থেকে খুব সহজেই ২ হাজার টন ব্রি ধান ৭৪ সংগ্রহ করতে পারবেন এবং সেই চাল ব্রি ধান ৭৪ নামে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ফড়িয়াকে ধানের জাত ও ওই আবাদকারী কৃষককে চিনতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারেন। সাধারণ ভোক্তারা জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের চাল খেয়ে জিঙ্কের অপুষ্টি দূর করতে পারবেন। সর্বোপরি ভাত যেহেতু আমাদের প্রধান খাদ্য, সুতরাং আমরা আশাবাদী, জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান উৎপাদন ও খাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের জিঙ্কের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হবো।

ড. সুরজিত সাহা রায়: পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com