উদ্যোগ

শৈশবে ফিরে যাই

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ১১:২৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

লাবণী মণ্ডল

পড়ন্ত বিকেল। হাঁটছি। চারদিকে মানুষে ভরপুর। শিশুরা তাদের মা-বাবার হাত ধরে হাঁটছে। বৃদ্ধরা সামান্য কুঁজো হয়ে হাঁটছেন। শহরের চাঞ্চল্য বেড়েছে। সবাই ফিরছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আমার গন্তব্য 'শৈশব'। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডের, ই-ব্নকে যেতেই বড় করে সাইনবোর্ড লেখা- শৈশব।

'শৈশব' গড়ে ওঠে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে। শুরুটা হয়েছিল অভিভাবক ও শিশুদের সামনাসামনি যোগাযোগের মাধ্যমে। করোনার প্রভাব যখন বেশি ছিল, তখন অনলাইনেই চলেছে কার্যক্রম। এখন শৈশবের সেন্টার হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক অভিভাবকের কাছে শৈশবের নামটি পরিচিতি পেয়েছে।

শৈশবের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ফারহানা মান্নান শিক্ষাবিষয়ক গবেষক ও লেখক। তিনি লিখছেন প্যারেন্টিং, বয়ঃসন্ধিকাল এবং একুশ শতকের শিক্ষা নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গিয়ে দেখা গেল- তখনও নির্বিঘ্নভাবে কাজ করছেন। ভাবছেন শিশুদের ভবিষ্যৎ, তাদের জগৎ- খেলাধুলা নিয়ে। তিনি জানান, করোনার আগে প্রতি মাসে একটা করে ওয়ার্কশপ হতো। মিরপুরের একটা লাইব্রেরিতে প্রোগ্রাম হতো। সেখানে অভিভাবকরা নিয়মিত আসতেন। দাদা-দাদি বা নানা-নানি- সিনিয়র সিটিজেনদের ইনভলভ করে কী চমৎকার কাজ যে করা যায়, সেটি তাঁরা শৈশবে দেখেছেন।

'শৈশব' ২ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য। শিশুদের পাঠ্যপুস্তকের ভার নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নানান মত রয়েছে, কিন্তু পথ নেই। শিশুদের খেলার মাঠের অভাব, একই সঙ্গে খেলার অভাব। কিন্তু সে পরিমাণ খেলাধুলার সরঞ্জাম নেই। শৈশব ভাবছে শিশুদের খেলার মধ্য দিয়েই শেখানোর কথা। নানা রকম গবেষণামূলক বিষয় নিয়ে তো শিশুরা ভাবে, খেলে, পঞ্চ ইন্দ্রিয় কাজে লাগায়- সেটিকে আরও যথাযথভাবে ব্যবহার করার একটা জায়গা তৈরির কথা ভাবছে শৈশব!

এ সম্পর্কে ফারহানা মান্নান বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে, স্থায়ীভাবে শিশুদের জন্য এমন একটা জায়গা থাকা দরকার, যেখানে শিশুরা নিয়মিতভাবে আসবে, খেলবে এবং খেলার মধ্য দিয়ে শিখবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে খেলা এবং খেলার মধ্য দিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিয়ে আসা। এ চিন্তাভাবনা থেকেই মনে হয়েছে, শিশুদের জন্য সুষ্ঠু, সুন্দর, বৈজ্ঞানিক উপায়ে খেলার জন্য একটি স্থান দরকার।'

শৈশবে থাকছে- স্টিম রুম, ন্যাচার রুম, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি রুম, কমিউনিটি রুম, পেইন্টিং এরিয়া, ওয়াটার প্নে এরিয়া, স্যান্ড প্নে এরিয়া এবং ক্যাফে কর্নার। শৈশব নিয়ে স্বপ্নের কথা বলছিলেন ফারহানা মান্নান। এর মধ্যেই ২ বছর ১০ মাস বয়সী তেহজীব আর্শিয়া মাহমুদকে নিয়ে এসেছেন তার মা তাসমিয়াহ্‌ তামজিদ অনন্যা। তিনি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক। তেহজীব আর যেতে চাচ্ছে না। এখানেই থেকে যাবে বলে বায়না ধরছে। অনন্যা জানান, 'ওর বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা। আমি শৈশব সম্পর্কে জেনেছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছোটবেলা থেকেই কীভাবে প্র্যাকটিক্যাল নলেজ ওর মাঝে দেওয়া যায় খেলার মাধ্যমে, সেটি নিজেও চেষ্টা করেছি। বাসায় তো এত সুন্দরভাবে গোছানো থাকে না। তাই তো ও এখান থেকে যেতে চাচ্ছে না। বাসার একাকিত্ব থেকে বের হওয়ার জন্য এবং সোশ্যালাইজ করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।'

১ সেপ্টেম্বর থেকে কোর্সগুলো শুরু হয়েছে। শিশুদের নিয়ে এমন একটি উদ্যোগকে অভিভাবকরাও নিয়েছেন ইতিবাচকভাবে। তাঁরা আসছেন তাঁদের ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে। ভাবছেন শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে। অনেকেই প্রাথমিকভাবে খোঁজখবর নিতে আসছেন।

এ ছাড়াও সুযোগ রয়েছে যে কোনো সময় শিশুরা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে এসে দুই ঘণ্টার জন্য খেলাধুলা করতে পারবে। এ দুই ঘণ্টার জন্য ৪৯৯ টাকা পরিশোধ করতে হবে।


এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, 'আরেকটি বিষয় যেহেতু অভিভাবকদের বাদ দিয়ে আমরা কিছু করতে চাই না, শিশুরা আসবে অভিভাবকরা আলাদা থাকবে এটি নয়, দুটি ভিন্ন বয়সের মানুষ একসঙ্গে খেলবে। আমরা চাই অভিভাবকদের কমিউনিটি তৈরি হোক, যাতে করে ভবিষ্যতে অভিভাবকরা একে অপরের সঙ্গে কানেক্টেড থাকতে পারেন। যে কোনো প্যারেন্টিং টিপস, সেক্স এডুকেশন নিয়ে।' তিনি আরও জানান, শৈশব ভাবছে ডে-কেয়ার নিয়ে। অভিভাবকরা চান তাঁদের শিশুটিকে নিরাপদে রেখে চাকরি করতে, নিজেদের মতো সময় কাটাতে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে এ এলাকার ভেতরে একটি ডে-কেয়ার করার, যাতে শিশুরা নিরাপদে থাকতে পারে এবং মা-বাবা নিশ্চিন্তে সময় কাটাতে পারেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com