সীমান্তে মিয়ানমারের গোলা, আতঙ্কে স্থানীয়-রোহিঙ্গারা

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ২১:০৬ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ২১:০৯

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত

মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল ছোড়ার সাতদিনের মাথায় আবারও গোলা ছোড়ার খবরে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের স্থানীয় লোকজনসহ রোহিঙ্গাদের আতঙ্কে দিন কাটছে। রোববার সকালে তুমব্রু সীমান্ত ঘেঁষা নিজস্ব ভূখণ্ডের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা এপারে এসে পড়ে। তবে কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত রোববার একই এলাকায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টারশেল পড়ার ঘটনায় ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো-কে ডেকে কড়া প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল বাংলাদেশ।

আজকেও মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশে ভেতরে এসে পড়েছে বলে শুনেছি উল্লেখ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদরদপ্তরের পরিচালক অপারেশন্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হলে মিয়ানমারকে কড়া প্রতিবাদ জানাব। এর আগেও মর্টারশেল পড়ার ঘটনায় আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। সীমান্তের লোকজন যাতে ভয়ভীতিতে না থাকে, সেজন্য বিজিবি কাজ করছে। পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসকারীদের সাবধানে চলাফেরা করতে সর্তক করা হয়েছে।

সীমান্তে বসবাসকারী একজন বলছেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের রেজু আমতলী বিজিবি বিওপির আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০-৪১-এর মাঝামাঝি স্থানে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার টহল চলছিল। সে সময় তাদের সেখান থেকে আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫টি গুলি করতে দেখা যায়। এ সময় সীমান্ত পিলার ৪০ বরাবর বাংলাদেশের প্রায় ১২০ মিটার ভেতরে যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা এসে পড়ে।

এদিকে গত পাঁচ বছর ধরে ওই সীমান্তের শূন্যরেখায় বসবাস করে আসছেন চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। সম্প্রতি মর্টারশেল-গোলা ছোড়ার পাশাপাশি সীমান্তে হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণের ঘটনায় নো ম্যানস-ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

রোহিঙ্গারা জানান, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের এই কোনারপাড়া নো ম্যানস-ল্যান্ডের আশপাশে প্রতিদিন হেলিকপ্টারে টহল দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এসময় সেখান থেকে গুলি চালাতেও দেখা যায়। এছাড়া তাদের ক্যাম্পের কাছাকাছি সে দেশের কয়েকটি অস্থায়ী চৌকিও রয়েছে। তারাও অনেক সময় পাহাড়ের দিকে গুলি চালায়।

ওই সীমান্তের শূন্যরেখার মিয়ানমারের অংশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা বৃদ্ধ আবদুল মালেক জানান, তাদের আতঙ্ক বাড়িয়েছে এ ঘটনা। তার দাবি, কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলির শব্দ পাচ্ছেন প্রতিদিন। যে কারণে রোহিঙ্গা শিবিরের নারী, পুরুষ ও শিশুসহ সবার মাঝে ভয় কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, মিয়ানমার প্রতিদিন এভাবে গুলি ছোড়তে থাকলে রোহিঙ্গারা ‘নো ম্যানস-ল্যান্ড ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকে যাবে।

রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলম বলেন, আজকে এতগুলো গুলি ছোড়ার ঘটনা এই প্রথম। ভোররাতে ক্যাম্পজুড়ে এক অন্যরকম ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। মিয়ানমারে আমরা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের যে কার্যক্রম, তারা চাইছে আমরা এখান থেকেও চলে যাই। কিন্তু আমরা যাব কোথায়? প্রশ্ন তার।

সীমান্তে বসবাসকারীদের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম তারিক জানান, সীমান্তে আমাদের সর্তক অবস্থান রয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে আজ দুই বার গুলিবর্ষণ হয়েছে। এতে লোকজন ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি, তারা যাতে আতঙ্কিত না হয়। পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি করেছি এবং আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি।

তুমব্রু সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা মাহামুদুল হক জানান, মিয়ানমার হেলিকপ্টার থেকে আবারও গুলি করেছে। সীমান্তে তিন-চার বার হেলিকপ্টার দেখা গেছে। এতে সীমান্তের লোকজন ভয়ের মধ্যে রয়েছে।

তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের এমন কর্মকাণ্ডে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি জানান, ২০-২২ দিন ধরে এভাবে সীমান্তে গোলাগোলির বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিদিন সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যাচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা বাংলাদেশের ভেতরে এসে পড়েছে বলে জেনেছি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com