
সাক্ষাৎকার
কাজুবাদাম চাষে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ । ১০:৪৪ | প্রিন্ট সংস্করণ
জাহিদুর রহমান

শহিদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক, কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদামের চাহিদা থাকায় সম্ভাবনাময় এ ফসল চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ জন্য নেওয়া হয়েছে 'কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ' শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প। পাহাড়ের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা অনেক। তাই কাজুবাদামের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নত জাত ও এ সম্পর্কিত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটি করতে পারলে বিপ্লব ঘটবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অর্থনীতিতে।
সম্প্রতি সমকালের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাকের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং আগ্রহে এই প্রকল্প দেশের পার্বত্য এলাকাসহ ১৯টি জেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজুর নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর পাহাড়ি জমি, যার ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ৯ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি তিন পার্বত্য জেলায়। পাহাড়ি জমির প্রায় ৫ লাখ হেক্টর অনাবাদি। পার্বত্য অঞ্চল এবং অন্যান্য পাহাড়ি এলাকার শুধু ২ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমিতে কাজুবাদাম চাষ করে অদূর ভবিষ্যতে বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
প্রকল্প এলাকায় ৪৯ হাজার ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ৮০ হাজার কাজুবাদামের চারা বিতরণ করা হয়েছে। ২২ হাজার ৮০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ কাজুবাদাম ও কফির চারা বিনামূল্যে আগ্রহী চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। দেশে কাজুবাদামের যে জাত রয়েছে, তার ফলন কম। এ কারণে কম্বোডিয়া থেকে এম-২৩ ও ভারত থেকে ডি-৪ এবং ডি-৭ জাতের বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত বীজ দিয়ে নিজস্ব নার্সারিতে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সেই চারা কিংবা কলম চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এগুলো রোপণের তিন বছর পর থেকেই প্রতিটি গাছে ফলন আসে। পাহাড়ের ঢালে এখন কাজুবাদাম চাষ হচ্ছে। একেকটি কাজুবাদামের গাছ ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে কাজুর উৎপাদন দেড় হাজার টন থেকে ১০-১২ হাজার টনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাঁরা কাজুবাদাম চাষাবাদে আগ্রহী এবং যাঁরা এ সংশ্নিষ্ট ব্যবসা সম্প্রসারণে এগিয়ে আসবেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি কাজুবাদামের গাছ রোপণের প্রায় ৫ বছর পর থেকে ফলন আসতে শুরু করে। যাঁরা আগ্রহী তাঁদের আমরা বীজ, সার, রোগবালাই দমনসহ সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছি।
আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের কাজুবাদাম উৎপাদন করবে বলে আশা প্রকাশ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রসেসিং খাতটা বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠছে। তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ করা, কাঁচামাল আমদানি জটিলতা দূর করা নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে কাজ চলছে। শুধু দেশে উৎপাদন নয়, বিদেশ থেকে কাঁচা কাজুবাদাম এনে প্রক্রিয়াজাত করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সে জন্য কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দেশে যাতে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, সে জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির ওপর শুল্ক্কহার প্রায় ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। কাজুবাদামের চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এভাবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে দেশের চাহিদা মিটবে। ভবিষ্যতে সম্ভাবনাময় এ পণ্য রপ্তানিও করা যাবে। সে সম্ভাবনাই এখন তৈরি হচ্ছে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদুর রহমান
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com