
ক্ষোভ থেকে ছাত্রলীগ নেতা রানা হত্যায় অংশ নেয় তারেক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ১৬:৩৭ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২২ । ১৬:৩৭
সমকাল প্রতিবেদক

গ্রেপ্তার ইকবাল হোসেন তারেক। ছবি-সমকাল
২০১৪ সালে রমনা থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামী ইকবাল হোসেন তারেককে সাড়ে আট বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডিস ব্যবসা নিয়ে বিরোধে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর আগে একবার তারেককে মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। নিহত রানার লোকজনই তাকে 'ধরিয়ে দেয়' বলে সন্দেহ ছিল তার। সেই ক্ষোভ থেকে সে হত্যায় অংশ নেয়।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইকবাল হোসেন তারেক এই হত্যা মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওইসময় সে সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামে ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন কামরুল ইসলাম এবং তানভিরুজ্জামান রনি। তাদের সঙ্গে মাহবুবুর রহমান রানার ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। বিরোধের কারণে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ডিসের ক্যাবল কেটে দিত এবং উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হত।
মারামারির জের ধরে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মগবাজার এলাকার বাটার গলির মুখে রানার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে তাকে এলোপাতাড়ি কোপায় তারেকসহ অন্যরা। এ সময় স্থানীয় লোকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি ছোড়ে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ব্যক্তিরা রানাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু'টি তাজা বোমা ও রক্তমাখা চাপাতি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা হয়।
এ ঘটনায় সুইফ ক্যাবল লিমিটেডের মালিক কামরুল ইসলাম অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন গ্রেপ্তার এবং চারজন পলাতক ছিল। পলাতক আসামিদের মধ্যে তারেক একজন।
র্যাবের অধিনায়ক জানান, ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাদকসহ রমনা থানা পুলিশ তারেককে গ্রেপ্তার করে। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার পেছনে রানা গ্রুপের লোকজনের হাত ছিল বলে তার সন্দেহ। এ কারণে রানা গ্রুপের প্রতি তার ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই ক্ষোভ এবং ডিস মালিকের নির্দেশে সে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
তিনি জানান, রানা হত্যাকাণ্ডের পর ধৃত আসামির পলাতক জীবন শুরু হয়। তার বাড়ি চাঁদপুর হলেও সে বেড়ে ওঠে যশোর এলাকায়। ফলে চাঁদপুর এলাকায় তাকে লোকজন তেমন একটা চিনত না। এই সুযোগে হত্যাকাণ্ডের পর সে চাঁদপুর পালিয়ে যায় এবং নিজেকে তাহের হিসেবে পরিচয় দেয়। তখন সে চাষাবাদ শুরু করে কিন্তু চাষাবাদের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় সে আবারও যশোর চলে যায়। সেখানে কিছুদিন পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এরপর সে মাদক ব্যবসা শুরু করে। ২০১৯ সালে সে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে তাহের পরিচয় দিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। শুরুতে সে গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত কার্টন সংগ্রহ করে বিক্রি করত। ওই ব্যবসার আড়ালে সে মাদক ব্যবসা করছিল। সে ঘন ঘন তার বাসস্থান পরিবর্তন করত। সর্বশেষ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক কারবারির মাধ্যমে তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com