প্রযুক্তির বিকাশে কৃষি খাত

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২২ । ১২:৩৬ | প্রিন্ট সংস্করণ

ইসমেত ইনুন

প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্বজুড়ে মানুষের শেখা, জীবনযাপন, কাজ বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ডিজিটালাইজেশনের এই হাওয়া লেগেছে শহুরে মানুষের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায়ও। দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত, যাদের বাদ দিয়ে প্রযুক্তির এ সুফল কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে দেশের অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে ডিজিটালাইজেশনের ছাতার নিচে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত সবাইকে এক করতে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

অতি অল্প সময়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল অ্যাপস বাজারে নিয়ে এসেছে।

এই উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার মতো। তবে এত মোবাইল অ্যাপস চাষিদের কতটা উপকারে আসছে, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শহুরে মানুষ হাতেগোনা কয়েকটি মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করেন। এ অবস্থায় চাষিদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে আলাদা অ্যাপস নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই যৌক্তিক। যাঁরা গ্রামের সঙ্গে বা চাষিদের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা ভালো করেই জানেন, চাষিদের অনেকেরই হয়তো স্মার্টফোন আছে, কিন্তু এর ধারণক্ষমতা কম, আবার অনেক গ্রামে ইন্টারনেট স্পিডও যেমন কম, তেমনি তার খরচ বহন করা চাষিদের জন্য অনেকটাই কষ্টসাধ্য।

নতুন অ্যাপ ইনস্টল করলে সেই অ্যাপ কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে শহুরে মানুষেরই কমবেশি ঝামেলায় পড়তে হয়। সেখানে একজন চাষির পক্ষে প্রতিটি কৃষি বিষয়ের জন্য আলাদা অ্যাপ ব্যবহার করা অনেক কঠিন। এতে ডিজিটালাইজেশনের সুফল ঠিকঠাক হাতে আসে না।

দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী ৪৪.৭ মিলিয়ন এবং ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। ফেসবুককে শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে না চিন্তা করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। বহুল প্রচারিত হওয়ার কারণে ফেসবুক এমন একটি মাধ্যম, যেখানে বেশিরভাগ মানুষ আগে থেকেই আছেন এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত। যদি চাষাবাদের উপকারী বিষয়গুলোকে একত্র করে ফেসবুকের মাধ্যমে চাষিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা হলে সহজেই চাষিরা গ্রহণ করবেন বলে আশা করা যায়।

ঠিক এ কাজটিই করছে 'দি রাইট কাইন্ড'-এর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম 'রাইট হাট'। তারা ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটিকের মতো সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ১৪টি জেলার চাষিদের কাছে চাষের আধুনিক কলাকৌশল, পরামর্শ এবং কৃষিজ পণ্য তুলে ধরছে। কিন্তু এটাও ঠিক, চাষিদের জন্য তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজারো বিষয় আছে; যার সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। রাইট হাট তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু সংশ্নিষ্ট সরকারি অধিদপ্তর বা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ভেরিফায়েড কন্টেন্ট তাদের প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে।

রাইট হাটের ফেসবুক গ্রুপ 'দি রাইট ফিশ', যেখানে বর্তমানে ১২ হাজার চাষি যুক্ত আছেন। চাষিরা গ্রুপে তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে রাইট হাটের বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সমাধান পাচ্ছেন। পাশাপাশি অন্য চাষিরা তাঁদের অভিজ্ঞতার আলোকে সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এ যোগাযোগের ফলে চাষিদের একটি 'ভার্চুয়াল কমিউনিটি' তৈরি হয়েছে। যদিও অ্যাপসের মাধ্যমে এই মতামত আদান-প্রদান করা সম্ভব; তবে চাষিদের জন্য তৈরি কোনো অ্যাপেই ফেসবুকের মতো সুবিধা নেই। ফেসবুকের চেয়ে সহজ মাধ্যম আর কী হতে পারে, যেখানে একজন সমাধান চেয়ে পোস্ট করছেন, উত্তর দিচ্ছেন ১০ জন আর সমাধান দেখে শিখছেন আরও হাজার জন।

এই প্ল্যাটফর্ম এখন চাষিদের পণ্য কেনাবেচার একটি মার্কেটপ্লেসও হয়ে উঠেছে। যেমন যশোর জেলার নার্সারি ও হ্যাচারি মালিকরা এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শুধু নিজ জেলা বা নিকটবর্তী জেলাগুলোতেই নয়, রাজশাহী, বগুড়ার মতো দূরবর্তী জেলাগুলোতেও পোনা, রেণু এবং বড় মাছ সরবরাহ করছেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গত দুই মাসে এ গ্রুপের মাধ্যমে রাজশাহী, বগুড়া এবং যশোরের ২০ থেকে ২৫ জন চাষি গড়ে ৮০ হাজার টাকার পণ্য কেনাবেচা করেছেন। া

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com