প্রবাসী বাংলাদেশির হাতে আরব মরুতে সবুজের ডালা

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২২ । ১২:২৮ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২২ । ১২:৫১

কামরুল হাসান জনি, ইউএই

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে প্রবাসী বাংলাদেশির হাতে গড়া ফার্ম হাউস। ছবি: সমকাল

পেছনে কয়েক কিলোমিটার কেবল লালচে হলুদ রঙের বালি। বালি মাড়িয়ে সামনে এলে চোখ পড়বে সবুজের সমারোহে। যেখানে সারিসারি গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। খেজুর, কমলা, সজনা, লেবু, বিলম্ব, নিম ও কুল গাছের আড়ালে জায়গা করে নিয়েছে মূল্যবান ত্বীন গাছ। প্রায় পাঁচ লাখ ৬২ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের এই জায়গার বাকি অংশ জুড়ে আছে ঘাসের আবরণ। পাখির চোখে তাকালে মনে হবে- কেউ সবুজের ডালা বিছিয়ে রেখেছে এখানে। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন প্রবাসী বাংলাদেশির গড়ে তোলা অবকাশ যাপন কেন্দ্র। পাশেই রয়েছে আরবদের আরও কয়েকটি বাগান বাড়ি। ওয়াই এস ফার্ম হাউস নামের অবকাশ কেন্দ্রটি খুব অল্প সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত প্রবাসীদের আনাগোনায় ভরপুর থাকে।

একসময় আরবদের বাগানবাড়িতে কাজ করতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শ্রমিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) পাড়ি জমাতেন। সময়ের বিবর্তনের দেশটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানামুখী কর্মতৎপরায় এশীয়রা এগিয়ে গেছেন। এবার বাগান বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে সেখানে মনোরম এক অবকাশ কেন্দ্র করে আলোচনায় এসেছেন চট্টগ্রামের প্রবাসী এয়াকুব সুনিক। বাংলাদেশিদের বিনোদন ও অবসর কাটানোর বিষয়টি মাথায় নিয়ে ব্যয়বহুল এই ফার্ম হাউজ সাজিয়েছেন এয়াকুব। কেউ কেউ এমন বাগান বাড়ি ভাড়া নিয়ে সবজি উৎপাদন বা অবকাশ কেন্দ্র করলেও কখনো মালিকানা গ্রহণের সুযোগ হয়নি তাদের। এয়াকুব জানালেন এর মালিকানা নিতে হলে লাগবে ১২ কোটি টাকা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে প্রবাসী বাংলাদেশির হাতে গড়া ফার্ম হাউস। ছবি: সমকাল

দুবাইয়ের রাস আল খাইমাহ মহাসড়ক ধরে ৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আজমান আমিরাতের হেলিও গেলে দেখা মিলবে এয়াকুবের খামার বাড়ির। একটি ফ্যামিলি কক্ষ ও একটি ব্যাচেলর কক্ষসহ চারটি আলাদা বিশ্রামাগার আছে এখানে। ফ্যামিলি কক্ষ অন্তত ৫০ জন ও ব্যাচেলর কক্ষটি ৫০ জন লোকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে সুইমিং পুল। আছে খেলার মাঠ। বাইরে আছে সুবিশাল গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গা। শিশুকিশোরদের জন্য আছে বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম। এসব ছাড়াও মরুর বুকে সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে এক মেলবন্ধন তৈরির চেষ্টা করেছেন এটির উদ্যোক্তা এয়াকুব সুনিক। অবকাশ কেন্দ্রের শোভাবর্ধন করতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সঙ্গে রাখা হয়েছে নানা ধরণের পশু-পাখি। ছোট ছোট খাঁচায় রাখা আছে ময়ূর, টিয়া, তিত পাখি, টার্কিস, কুয়েতি কবুতর, কোয়েল, হরিণ ও ওমান সালালার ছাগল। ছোট্ট একটি পুকুরে মাছেরও চাষ হচ্ছে এখানে। একজন গাড়ি চালকসহ প্রতিদিন এখানে পাঁচ জন শ্রমিক কাজ করেন।

ঘুরতে আসা প্রবাসীরা বলছেন, একসময় শুধু আরবদের বাগান বাড়ির কথা শোনা যেত। এখান বাংলাদেশিদেরও বাগান বাড়ি আছে। কেউ কেউ চাষাবাদ বা সবজি উৎপাদন করেন। কিন্তু প্রবাসীদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে তৈরি ওয়াই এস ফার্ম হাউজ বাংলাদেশিদের গর্বিত করেছে। শিশু কিশোরদের খেলাধুলা ও স্বদেশীদের অবসর কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে। মর্যাদার প্রশ্নেও বাড়তি সুনাম যোগ করেছে এটি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে প্রবাসী বাংলাদেশির হাতে গড়া ফার্ম হাউস। ছবি: সমকাল

উদ্যোক্তা এয়াকুব সুনিক বলেন, ‘করোনার পর প্রবাসীদের বিনোদনের কথা চিন্তা করে এই অবকাশ কেন্দ্র স্থাপন করেছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশিদের বেশ সাড়াও পাচ্ছি। শুধু আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশিরা নয় কেউ যদি জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স বা দূরদেশ থেকে এসে এখানে পরিবার নিয়ে দু-তিনদিন অবস্থান করতে চান, তারাও অনায়াসে থাকতে পারবেন। সবধরনের পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই এটি স্থাপন করা হয়েছে। রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা। মরুর বুকে সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছি।’

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com