
মন ভালো করতে নাচ
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২২ । ১১:৩২ | প্রিন্ট সংস্করণ
নীল মাহাবুব

'জানি জানি, তুমি এসেছ এ পথে মনের ভুলে।
তাই হোক তবে তাই হোক, দ্বার দিলেম খুলে'
দরজার ওপাশে কেউ গলা খুলে গাইছেন। এমনই একটা রাবীন্দ্রিক আবহাওয়ায় দরজায় কড়া নাড়তেই কেউ একজন ভেতর থেকে বলে উঠলেন- কে? কাকে চাই? উত্তর দিতেই দরজা খুলে সাদর অভ্যর্থনা। বলছি প্রবাসী এক দেশি মানুষের কথা। নাম ঊর্মি নুসরাত। থাকেন কানাডায়, সম্প্রতি এসেছেন দেশে। জানালেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভীষণ প্রিয়। সঙ্গে প্রিয় এই দেশটাও। তাই তো বারবার শেকড়ের টানে তাঁর ছুটে চলে আসা। তিনি একজন নৃত্যশিল্পী। নাচে যাঁর হৃদয় নাচে, নাচই যাঁর হৃদযন্ত্র। পেশা না বলে বরং নাচটাকে তাঁর নেশাই বলা যায়। করোনাকালে তিনি একাকিত্ব, বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে নিয়েছেন নাচকে মন ভালো করার টনিক হিসেবে। তাঁর এ উদ্যোগে অনেক অবাঙালিও সাড়া দিয়েছেন।
ছোটবেলাতেই ঊর্মির নাচে হাতেখড়ি। নাচেই কেন আগ্রহটা ডানা মিলল? আপন মনেই হেসে বললেন, 'সত্যি বলতে কি, গান শুনলেই আমি কেমন যেন আনমনেই নেচে উঠতাম। এ ছাড়া নৃত্যশিল্পীরা ভীষণ সাজেন, আর সাজের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে। ব্যস, এ দুইয়ের কম্বিনেশনে নাচটাকেই বেছে নিলাম আজীবন। নাচ আমার অক্সিজেন, নাচ আমার বিশুদ্ধ বাতাসে শুদ্ধ নিঃশ্বাস।'
বর্তমানে কানাডার ডারহাম ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডে শিক্ষকতা করছেন। তবে এই পেশার সঙ্গে নেশাটাকেও মিশিয়েছেন বেশ ভালোভাবেই। কানাডা একটি মিশ্র সংস্কৃতির দেশ হওয়ায় নাচ নিয়ে তিনি একভাবে দেশের প্রতিনিধিত্বও করছেন। খুলেছেন একটি নাচের স্কুলও; নাম 'ঊর্মি স্কুল অব ড্যান্স'। সেখানে শুধু বাঙালি কমিউনিটি নয়, কানাডিয়ানরাও আসছেন বাংলার সোঁদা মাটির ঘ্রাণ নিতে; যা তাঁকে জুগিয়েছে আরও বেশি অনুপ্রেরণা। ঊর্মি বলেন, 'নাচ নিয়ে ছোটবেলার স্বপ্নটা এখন আর স্বপ্নেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বপ্নটা এখন রূপ নিয়েছে দায়িত্ব আর দায়বদ্ধতায়।' নাচ নিয়ে তাই কাজ করে চলেছেন।
এখন তাঁর উদ্যোগটি স্বপ্নের চেয়েও বড়। নাচের মধ্য দিয়েই কাজ করতে চান মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। শুরুও করেছেন অল্পবিস্তর, পেয়েছেন আশাতীত সাড়াও। ঊর্মি বলেন, 'মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রয়োজন শারীরিক চলাফেরা, সেটাতে নাচ নয় কেন? করোনার সময় যখন সবাই ঘরবন্দি, অনেকেই কাজ হারিয়েছেন বা বয়স্করা আছেন ভীষণ একাকিত্ব, বিষণ্ণতায়; এ ক্ষেত্রে নাচটা হয়ে উঠতে পারে তাঁদের মন ভালোর টনিক।' তাই তো প্রথম একটি কর্মশালা করলেন কানাডায়। যেখানে পাশে পেলেন নন্দন টিভি এবং 'আমরা কানাডিয়ান বাংলাদেশি' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপকে। কর্মশালায় আসা মানুষ যেটুকু সময় ছিলেন সেখানে, ভুলে ছিলেন জাগতিক সমস্যা, দুঃখ-কষ্ট। তাই তো শুরু হয়েছে এ বিষয়টিকে আরও বড় প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার তোড়জোড়।
নাচ নিয়ে এরই মধ্যে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। আছে জাতীয় পুরস্কারের গোল্ড মেডেল। এ ছাড়া নারী ও নাচ নিয়ে কাজ করায় পেয়েছেন নারী সম্মাননাও। এসব প্রাপ্তি ভালো লাগে ঊর্মির, যা নতুন কিছু করতে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তবে নাচটাকে প্রজন্মের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখাটাই স্বপ্ন তাঁর। সে প্রাপ্তির খোঁজে নাচের জগতেই নিরুদ্দেশ থাকতে চান এই নৃত্যানুরাগী।
শেকড়ের প্রতি একটা টান বরাবরই ছিল এ নৃত্যশিল্পীর। যে কারণে দেশে ফিরে আসেন বারবার। কাজ করতে চান আদিবাসীদের নৃত্য নিয়ে। তৈরি করতে চান একটি আর্কাইভ। যেন পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে আর হারিয়ে না যায় বৈচিত্র্যের রঙে এসব নাচের প্রাচীন ঐতিহ্য। া
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com