
ইতালিতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন
শ্যালক-ভগ্নিপতির পাচার চক্র
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২২ । ১১:৫৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইন্দ্রজিৎ সরকার

ফাইল ছবি
পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার মৌখালী গ্রামের সফিকুল ইসলাম পাঁচ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। চলতি বছরের মে মাসে দেশে ফেরার পর তিনি আবারও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এর মধ্যে তাঁকে উচ্চ বেতনে ইতালিতে চাকরির প্রস্তাব দেয় রাজীব মোল্লা ও মো. বাদশা। তারা জানায়, খুবই কম খরচে ইতালি যাওয়ার সুযোগ আছে। চাকরি পাইয়ে দেওয়া, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তারাই করবে। এমন প্রলোভনে সহজেই রাজি হন তিনি। এর পর বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৭ লাখ টাকা তুলে দেন ওই দু'জনের হাতে। তিনি আশ্বস্ত হয়েছিলেন কয়েক মাস পরই ইতালি থেকে টাকা পাঠাতে শুরু করবেন। আর তখন সহজেই এসব ঋণ শোধ হবে, সংসারে আসবে সচ্ছলতা।
শেষ পর্যন্ত একদিন সফিকুল বিদেশে যান ঠিকই, তবে সেটা ইতালি নয়। লিবিয়ার কোনো একটি স্থানে আটকে রেখে তাঁর ওপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। সেই সঙ্গে চক্রের সদস্যরা দেশে থাকা তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে চায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এ পর্যায়ে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রাজীব ও বাদশা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তারা দীর্ঘদিন ধরেই লোকজনকে বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছে। বাদশার ভগ্নিপতি সুলতান লিবিয়ায় অবস্থান করে এই চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এর আগেও তারা শতাধিক মানুষকে একই কায়দায় জিম্মি করে টাকা হাতিয়েছে। শুধু সফিকুলের সঙ্গেই আরও ১৯ জনকে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগীর বড় ভাই হাসান শেখ সমকালকে জানান, সফিকুলকে বিদেশে পাঠানো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাদশার সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়। বাদশা জানায়, তার ভগ্নিপতি ইতালিতে থাকে। সফিকুলকে তার কাছে পাঠানো হবে। এর পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে বাদশা ও রাজীবের হাতে ৭ লাখ টাকা তুলে দেন। সেই সঙ্গে দেন ছোট ভাইয়ের পাসপোর্ট। তাদের ব্যবস্থাপনায় ৩ অক্টোবর ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন সফিকুল। তাঁকেসহ অন্যদের প্রথমে দুবাই ও পরে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের তুলে দেওয়া হয় মানব পাচারকারী চক্রের সহযোগীদের হাতে। এর পর গোপন আস্তায় নিয়ে তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে শুরু হয় নির্যাতন। ২৫ অক্টোবর পাচার চক্রের এক সদস্য ফোন করে এ পরিস্থিতি জানিয়ে আরও সাড়ে ৪ লাখ টাকা চায় হাসানের কাছে। একইভাবে অপর ২০ জনের পরিবারের কাছ থেকেও বিভিন্ন অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। কোনো উপায় না পেয়ে এ ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন হাসান। থানা পুলিশের পাশাপাশি এ মামলার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, মানব পাচার চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাদের মধ্যে রাজীব ও বাদশা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। ভুক্তভোগী সফিকুলকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com